দূষণ নিয়ে ভয়ানক বার্তা
- আবুল কালাম
- ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
- বাসযোগ্যতা হারাবে ঢাকা
- ধ্বংস হবে প্রাণী-প্রকৃতি
- জরুরি সভার পরামর্শ
দূষণে বিশ্বে ঢাকার রেকর্ড ভয়ানক বার্তা নিয়ে এসেছে। অব্যাহত দূষণ মানব স্বাস্থ্যের জন্য মহামারীর সাথে প্রাণী প্রকৃতির জন্য বিষাক্ত হয়ে উঠছে কয়েক কোটি মানুষের এই নগরী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাড়তে থাকা দূষণে এক সময় বিরান নগরীতে পরিণত হতে পারে ঢাকা। বাতাসে কার্বনডাই অক্সাইড বেড়ে গিয়ে প্রকৃতি ধ্বংসের সাথে মানুষের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়বে স্বপ্নের রাজধানী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জরুরি সভা ডেকে এখনই করণীয় ঠিক না করলে তার ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে পড়বে।
বিশ্বের একাধিক সংস্থার জরিপে পৃথিবীর বাসযোগ্য শহরের তালিকায় বারবার যোগ্যতা হারাচ্ছে ঢাকা। গেল বছর যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত বায়ুদূষণবিষয়ক এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ হিসেবে স্থান পায় বাংলাদেশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণে বিশ্বের সব মানুষের গড় আয়ু দুই বছর চার মাস কমলেও বাংলাদেশের নাগরিকের গড় আয়ু কমছে ছয় বছর আট মাস করে। এর মধ্যে সবচেয়ে দূষিত শহর ঢাকার মানুষের আয়ু কমেছে প্রায় আট বছর।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) তাদের গবেষণায় বলেছে, বিগত প্রায় ৯ বছরে ঢাকা দূষণমুক্ত ছিল মাত্র ৬০ দিন। বাকি সময়গুলো দূষণে ছিল বসবাসের অযোগ্য। যার ধারাবাহিকতায় সময়ের সাথে দূষণ বেড়ে চলছে। এর মধ্যে ২০ সালে লকডাউনের কারণে দূষণের পরিমাণ কম ছিল। গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকায় বায়ুমান সূচক বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছরের নভেম্বর মাসে শতকরা ১১.০৫ ভাগ বেড়েছে। তথ্যানুযায়ী গেল মাসে ঢাকা প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। নভেম্বর মাসের মধ্যে মাত্র একদিন বায়ুমান ছিল মধ্য মানের। গতকালও একিউআই স্কোর ২৪৯ নিয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় ঢাকা ছিল তৃতীয় স্থানে।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বায়ুদূষণের কারণে প্রধানত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থেকে মৃত্যুর হার বাড়ে।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে সতর্কবার্তা দিয়েছে বন পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। তাতে বাতাস অস্বাস্থ্যকর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে উল্লেখ করে বাইরে গেলে মাস্ক পরা এবং সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানোকে দূষণের জন্য দায়ী করে তা বন্ধ, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে দুইবার পানি ছিটানো, পুরনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করার অনুরোধ জানানো হয়।
এ বিষয়ে এর ভয়াবহতা জানিয়ে শ্যামলী ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালের উপপরিচালক ডা: আয়েশা আক্তার গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, বায়ুদূষণ সম্পূর্ণ মানুষকে শেষ করে দেয়ার সাথে প্রাণী প্রকৃতিকেও ধ্বংস করে দেয়। বাতাসে ছড়িয়ে থাকা দূষিত পদার্থগুলো শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট, সর্দি কাশি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এর বাইরে বাতাস দূষিত হয়ে গেলে তাতে অক্সিজেন কমে কার্বনডাই অক্সাইড বেড়ে যায়। যার কারণে তা গাছ পালা, প্রকৃতি ও প্রাণীর জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। অক্সিজেন ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচতে পারে না তেমনি প্রাণী প্রকৃতিও রক্ষা পাবে না। এভাবে করে এক সময় প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে গেলে শহরও বিরান নগরীতে পরিণত হতে পারে। যাতে আর কোনো মানুষ বসবাস করতে পারবে না। ফলে জীবন রক্ষায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে ভয়ানক দূষণ থেকে সুরক্ষায় তিনি মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার কথা বলেন।
অপরদিকে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান ও পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। কারণ এই দূষণ ছড়িয়ে পড়ার পেছনে সরকারের অনেক কার্যক্রম দায়ী। সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে একেকটা মন্ত্রণালয় তাদের একেক কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাতে যারা কাজের দায়িত্ব নেন তারা নিয়ম মেনে তা পরিচালনা করেন না। এতে করে বর্জ্য পুড়ানো, নির্মাণকাজ সব মিলিয়ে দিন দিন দূষণ বাড়ছে। আর এর নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সংস্থা পরিবেশ অধিদফতরও তা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়েছে। অথচ তারা ব্যর্থতা স্বীকার করছে না। ফলে এর ভয়াবহতা বাড়ছে। এজন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের উচিত সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিটি কার্যক্রম পরিচালনা করা। আর জাতীয় পরিবেশ কমিটির উচিত পরিবেশ রক্ষায় নিয়োজিত সংস্থাগুলো নিয়ে জরুরি সভা ডেকে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেয়া।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা