যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলে ফেঁসে যাচ্ছেন ৩৪ শতাংশ ভারতীয়
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে জন্ম নেয়ার সুবাদে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিল করার কথা জানিয়েছেন দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমন পদক্ষেপ নেয়া হলে ফেঁসে যেতে পারেন দেশটিতে বসবাসকারী ৩৪ শতাংশ ভারতীয়। বাবা-মা অন্য দেশের নাগরিক হলেও যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিলেই তাদের নবজাতক মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়ার বিধান রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ আইনটি বাতিলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে দেড়শ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশটিতে বহাল এ ঐতিহাসিক বিধান। তবে এই শতবর্ষী বিধান সংশোধন করে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিলের কথা বারবার বলছেন নবনির্বাচিত (প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তার এই জোর তৎপরতা উদ্বিগ্ন করে তুলেছে দেশটিতে বসবাসরত এক-তৃতীয়াংশ প্রবাসী ভারতীয়দের।
২০২২ সালে মার্কিন আদমশুমারি অনুযায়ী, মার্কিন গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৮ লাখ ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান বসবাস করছেন। এর মধ্যে ৩৪ শতাংশ, অর্থাৎ ১৬ লাখের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হওয়ার সুবাদে তারা আইনগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। যদি ট্রাম্প এই আইনটি বাতিল করেন, তা হলে এই ১৬ লাখ ভারতীয় আমেরিকান নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী, ‘যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী এবং নাগরিকত্বের শর্ত পূরণকারী সব ব্যক্তি দেশটির যে অঙ্গরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি ওই রাজ্যের নাগরিক হবেন।’
তবে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে এই আইন ‘হাস্যকর’। প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদেও এই আইনের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই আইন পরিবর্তন করেননি ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর গত শুক্রবার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ২০ জানুয়ারি শপথ নিয়েই যেসব নির্বাহী আদেশ দেবেন তার মধ্যে এটিও থাকবে।
ট্রাম্প ওই দিন এনবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি (প্রবাসী) পরিবারগুলো ভাঙতে চাই না। তাই একমাত্র উপায়, সবাইকে এক সঙ্গে তাদের (উৎস) দেশে ফেরত পাঠানো। অর্থাৎ আইনি প্রক্রিয়ায় এই ধরনের নাগরিকদেরও পরিবারের সঙ্গে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হবে।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে আইনজীবী রাসেল এ স্টেমেটস বলেন, ট্রাম্প ও তার অনুসারীরা মনে করেন, সব দেশে এমন বিষয় নেই। এই আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। মার্কিন নাগরিক হওয়ার কঠোর মানদণ্ড থাকা উচিত বলে মনে করেন তারা।
একে ‘বার্থ ট্যুরিজম’ (জন্ম পর্যটন) হিসেবে অভিহিত করে ট্রাম্প এই নীতির বিরোধিতা করে বলেন, অনেকে সন্তানকে জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বানাতে এখানে এসে সন্তান জন্ম দেন। পরে তারা নিজ দেশে ফিরে যান।
নাম্বারস ইউএসএ’র গবেষণা পরিচালক এনরিক রুয়ার্ক বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেন, ‘শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে একটি শিশু জন্মই নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্যতা হওয়া উচিত নয়।’
তবে কাজটি মোটেও সহজ হবে না। এভাবে জন্মসূত্রে নাগরিকদের বাছাই প্রক্রিয়ায় পড়ে অনেক নাগরিকই হয়রানির শিকার হতে পারেন। আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের ২০১১ সালের একটি নথি অনুযায়ী, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করা হলে এটি সবার ওপর প্রভাব ফেলবে। মার্কিন বাবা-মায়েদের জন্য তাদের শিশুদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা