দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান : ব্যাংকে ৩ মাসে কোটিপতির সংখ্যা কমেছে ১ হাজার ৬৫৭ জন
- আশরাফুল ইসলাম
- ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দেশে হঠাৎ কোটিপতির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ায় ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ হওয়ার পথে। টেন্ডারবাজরা লাপাত্তা। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকে কোটিপতির সংখ্যা গত তিন মাসে (জুনের তুলনায় সেপ্টেম্বরে) কমে গেছে এক হাজার ৬৫৭ জন। যেখানে আগের তিন মাসে অর্থাৎ জুন প্রান্তিকে বেড়ে ছিল তিন হাজার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তার দেড় দশকের শাসনামলে ঘুষ-দুর্নীতির পাশাপাশি টেন্ডারবাজি ছিল হরহামেশাই। এর সাথে একশ্রেণীর দুর্বৃত্ত দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণের কথা বলে নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে। দেশে দুর্নীতি নিয়ে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনামলের গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা দুই লাখ কোটি টাকা অবৈধভাবে পাচার হয়েছে।
কমিটি জানায়, শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও ভয়ঙ্কর রকমের আর্থিক কারচুপির যে চিত্র রিপোর্টে পাওয়া গেছে, তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। দেশটাকে এমন ভীতিকর অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল যে, এসব দুর্নীতি নিয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না।
৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। এস আলম, নাসা গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। একই সাথে দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করে বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউ। অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এরই প্রেক্ষিতে দেশে ব্যাংকিং খাতে কোটিপতি হিসাবের সংখ্যা কমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর ব্যাংকের কোটিপতি হিসাবের সংখ্যা হালনাগাদ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে তৈরিকৃত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের প্রতিবেদন গতকাল প্রকাশ করা হয়েছে। এতেই দেখা যায়, কোটিপতির সংখ্যা কমে যাওয়ার চিত্র।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত মার্চ প্রান্তিকে দেশে এক কোটি থেকে হাজার কোটি টাকার ওপরে কোটিপতি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল এক লাখ ১৫ হাজার ৮৯০ জন। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে জুন শেষে কোটিপতির সংখ্যা তিন হাজার বেড়ে হয় এক লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪ জন। আওয়ামী লীগের শেষ সময়ে ব্যাংকিং খাতে কোটিপতির অ্যাকাউন্ট সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। জুলাই বিপ্লবের পর হতে ব্যাংকিং খাতে কোটিপতির সংখ্যা কমতে থাকে। ৫ আগস্টের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ায় টেন্ডারবাজি শূন্যের কোটায় নেমে আসে। সেই সাথে কমে গেছে ঘুষ-দুর্নীতি। পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কেউবা দেশেই গা ঢাকা দিয়েছেন। আবার অনেককেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আর এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংকিং খাতে কোটিপতির সংখ্যায়।
গত সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদন গতকাল প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেখা যায়, ব্যাংকে কোটিপতির হিসাব সংখ্যা জুনের তুলনায় এক হাজার এক হাজার ৬৫৭ জন কমে হয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে এক কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত কোটিপতি হিসাব সংখ্যা হয়েছে ৯২ হাজার ৫৬৩ জন, সেখানে জুনে ছিল ৯৩ হাজার ৯৫৩ জন। পাঁচ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যাংকে হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৬৫৮ জন, যেখানে জুনে ছিল ১২ হাজার ৬৯১ জন। ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যাংকে সেপ্টেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা চার হাজার ২৫০ জন, যেখানে জুনে ছিল চার হাজার ৩১৩ জন। তেমনিভাবে ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যাংকে কোটিপতির সংখ্যা হয়েছে দুই হাজার ছয়জন, যেখানে জুনে ছিল দুই হাজার ৫৪ জন। ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত জুনের তুলনায় সেপ্টেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা কমে নেমেছে এক হাজার ৩৩৯ জন থেকে এক হাজার ৩১২ জন। ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকা পর্যন্ত হিসাব সংখ্যা ৩৯৬ থেকে কমে ৩৫৮ জনে। ৫০ কোটি টাকার ওপরে হিসাব সংখ্যা এক হাজার ৮১৮ থেকে এক হাজার ৮০০ জনে নেমেছে।