১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
সেমিনারে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী

পশ্চিমাদের নয় ইসলামের মানবাধিকার চর্চা করতে হবে

হিউম্যান রাইটস এইড বাংলাদেশের সেমিনারে অতিথিরা : নয়া দিগন্ত -


মানবাধিকার নামাজ-রোজার মতোই ধর্মীয় অনুশাসন। এটা ত্যাগ করা যাবে না। প্রকৃত মুসলমানরা মানুষের অধিকার বিনষ্ট করে না, করতে পারে না উল্লেখ করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পশ্চিমাদের মানবাধিকার নয়, এ দেশে ইসলামী আদর্শের মানবাধিকার চর্চা করতে হবে। আমরা পশ্চিমাদের থেকে ধার করে মানবাধিকার নিয়ে আসিনি। আমাদের মানবাধিকারের শিক্ষা দিয়েছেন হজরত মুহাম্মাদ সা:, যিনি মক্কা বিজয়ের পর মানবিক বিবেচনায় সব কাফেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আমরা মুসলিমরা সেই মানবাধিকার চর্চা করি। বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘হিউম্যান রাইটস এইড বাংলাদেশ’ আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুর রবের সভাপতিত্বে সেমিনারে উদ্বোধনী বক্তৃতা করেন, ‘হিউম্যান রাইটস এইড বাংলাদেশ’-এর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ। আরো বক্তৃতা করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুকুমার বড়ুয়া, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. গোলাম রহমান ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সম্পাদক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নুর খান লিটন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো: আবদুল হালিম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বায়তুন নুর জামে মসজিদের খতিব জাকারিয়া নুর, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি এস এম কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ প্রামাণিক প্রমুখ।

বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমান বলেন, আল্লাহ মানুষকে স্বাধীনরূপে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা মানুষকে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে দেয় না। জাতিসঙ্ঘ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাতিসঙ্ঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলো নির্দিষ্ট আইন ও নিয়মে চলতে হয়। কিন্তু চেয়ারে বসে থাকা বিশ্বমোড়লরা ফিলিস্তিনের মুসলিমদের আগ্রাসী ইসরাইলিরা যেভাবে হত্যা করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে সে বিষয়ে নজর দিচ্ছে না। সাদ্দামকে হত্যা করে ইরাকে যে মানবাধিকার হরণ করা হয়েছে সে বিষয়েও নীরব থাকতে দেখা গেছে। বিশ্বমোড়লদের দিকে না তাকিয়ে থেকে আমাদের দেশে আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে অতীতের মতো শান্তিতে বসবাস করব। আমাদের সম্প্রীতি অটুট থাকবে এবং রাখতে হবে।

বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, শেখ হাসিনা ভারতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মাথাও খেয়েছে। তারা এমনভাবে সেখানে প্রচার করেছে যে, বাংলাদেশে জামায়াত বেড়ে যাচ্ছে, এতে হিন্দুদের নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটবে। কিন্তু আমরা জানি, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান রেন্টু স্বীকারোক্তি দিয়েছে, তিনি নিজে শেখ হাসিনার নির্দেশে এ দেশে ঢাকেশ্বরী মন্দির, জয়কালী মন্দিরসহ ঢাকা শহরের সব মন্দির ভাঙচুর করেছে এবং হিন্দুদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুট করেছে। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে আবারো এ দেশে দাঙ্গা সৃষ্টি করতে চেয়েছে। সেখানে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকায় হিন্দুদের সম্পদ নিরাপদ রয়েছে। হিন্দুদের ওপর কেউ আক্রমণ করতে পারেনি। তারা হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘর পাহারা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের চেয়ে বড় মানবতাবিরোধী অপরাধ এ দেশে আর কেউ করেনি।

সেমিনারে বক্তরা আরো বলেন, বাংলাদেশে ১৯৭২-৭৫ আওয়ামী দুঃশাসনে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়। সে সময় আওয়ামী লীগ বাকশাল কায়েম করে মানুষের অধিকার হরণ করেছিল। পরবর্তী সময়ে ২০০৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত শেখ হাসিনা পুরো বাংলাদেশকে অবরুদ্ধ করে রাখে। আয়নাঘর সৃষ্টি করে সেখানে বিরোধী দলমতের লোকদের বন্দী করে রেখেছিল। গুমের শিকার পরিবারগুলো অনেকেই আজো তাদের প্রিয়জনের সন্ধান পায়নি। মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে জামায়াতে ইসলামী, বিএনপিসহ বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে বিচারিক হত্যা করেছে, ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্য করেছে। বিনা অপরাধে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে নির্বাচনের নামে জাতির সাথে তামাশা করেছে।

তারা বলেন, তরুণ প্রজন্ম আজ কিভাবে ভোট দিতে হয় জানতে পারেনি। ভোট মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও সেই অধিকার কেড়ে নিয়েছিল শেখ হাসিনা। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতা সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এই দুই নেতার বিরুদ্ধে কখনো কেউ এক টাকা দুর্নীতির অভিযোগ দাঁড় করাতে পারেনি। সেই মহান নেতাদের সাজানো মামলায় ফরমায়েশি রায়ে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া আব্দুল কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, অধ্যাপক গোলাম আযম, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ব্যারিস্টার আরমান, ব্রিগেডিয়ার আযমী আয়নাঘর থেকে ফিরে এলেও শিবিরকর্মী ওলি উল্লাহ, আল মোকাদ্দিস বিল্লাহসহ অসংখ্য নেতাকর্মীর সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি। এদের কেউ জীবিত আছে কি না সেটিও কারো জানা নেই। আবাবিল পাখির পূর্ণ আবির্ভাব হয়ে ছাত্র-জনতার মাধ্যমে আল্লাহ বাংলাদেশের জনগণকে মুক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের হাত থেকে। জাহেলিয়াতের যুগ আর আওয়ামী লীগের যুগের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা।

 


আরো সংবাদ



premium cement