সংখ্যালঘু সহিংসতার ৮৮ মামলায় গ্রেফতার ৭০ : প্রেস সচিব
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আগামী বছর- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিউল আলম বলেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সংশ্লিষ্ট সহিংসতার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৮৮টি মামলা হয়েছে এবং ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব ন্যক্কারজনক ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করা হবে, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস সচিব বলেন, এ নিয়ে পুলিশের কাছ থেকে একটি প্রতিবেদন পেয়েছি। তারা বলছে ৫ আগস্ট থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সহিংসতার ঘটনায় ৮৮টি মামলা হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছেন ৭০ জন। এর পরের ঘটনায়ও মামলা হয়েছে। পুলিশ সেই তালিকা করছে, বুধবার (১১ ডিসেম্বর) নাগাদ সেটা পাব। সেটার ওপর নির্ভর করে একটি বিস্তারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেবো। এতে মামলা ও গ্রেফতারের সংখ্যা আরো বাড়বে। কারণ সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ঢাকার তুরাগ ও নরসিংদীতে একাধিক ঘটনা ঘটেছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ৬২ মামলায় গ্রেফতার ৩৫, আর পুলিশের কাছে সরাসরি মামলা হয়েছে ২৬ মামলায় ৩৫ জন।
গ্রেফতারকৃতদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সন্দেহভাজন ও যার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তাকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। রাজনৈতিক পরিচয়ে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। কিন্তু অনেকগুলো ঘটনার ক্ষেত্রে দেখছি এ আক্রমণের শিকার সংখ্যালঘু হলেও তিনি হয়তো ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে আক্রমণ করা হয়েছে। এটাকে কিভাবে নেবেন? এটা কি ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে হয়েছে, নাকি রাজনৈতিক পদধারী ছিলেন? যেহেতু মামলা হয়েছে, অপরাধ হয়েছে তাই বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে নিচ্ছি। জড়িত সবাইকেই গ্রেফতার করা হবে।
মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা আরাকান আর্মি দখল করেছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কৌশলগত পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, পুরো পরিস্থিতি আমরা খুবই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চ পদস্থ প্রতিনিধি বিষয়টি গভীরভাবে মনিটর করবেন। অংশীজন যারা আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আগামী বছর বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সম্মেলন হবে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ভেন্যু ও অন্যান্য বিষয়াবলি মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ঠিক করে ফেলবো। আশা করছি এই সম্মেলনটা হবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে। বিশ্বের যতগুলো দেশ রয়েছে সবাই এতে অংশ নেবেন। বিশেষ করে জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনসহ রোহিঙ্গা ইস্যুতে যারা খুবই আগ্রহী তারা সবাই থাকবেন।
জাতিসঙ্ঘের সাথে বিষয়টি নিয়ে অনেকবার কথা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতিসঙ্ঘ সম্মেলনে অংশ নেয়ার সময় এ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন।
সরকার নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না এমন অভিযোগের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না এটা সরলীকরণ হয়ে গেল। আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটা আছে। পুরো বিশ্ববাজার আমরা মনিটর করছি। সয়াবিন ও পামঅয়েলের ক্ষেত্রে অক্টোবর নভেম্বর থেকে মার্কেট ঊর্ধ্বমুখী। ৯২০-৯৪০ ডলার টনের তেল এখন ১২০০ ডলার পর্যন্ত উঠেছে। সয়াবিনের মার্কেট প্লেয়ার কিন্তু কম। ৩-৪টি কোম্পানি মূলত মার্কেটটা নিয়ন্ত্রণ করে। তারা অনেক বড় পরিসরে আমদানি করে। এই পুরো বিষয়টি আমাদের মনিটরিংয়ে আছে। মার্কেট ঊর্ধ্বমুখী হলে আমরা সমন্বয় করি। কোন দেশে সমন্বয় হয় না। আমরা ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে, তারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এটা করছি। আমরা মালয়েশিয়া, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার বাজার মনিটর করছি।
কোম্পানিগুলো কোনো ফাউল প্লে করছে কি না এ জন্য বিদেশে কম্পিটিশন কমিশন দেখে। আমরা খুব দ্রুত প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করবো। তারা এটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। এ সময় তিনি প্রতিটি মৌসুমি পণ্যের দাম কমেছে বলে দাবি করেন।ছাত্রলীগ-যুবলীগের অনেকে কলকাতায় বসে বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, ছাত্রলীগের ছেলেরা অনেক লুটপাট, চুরিচামারী করে ওখানে গিয়েছে। তারা অনেক ধরনের কথাবার্তা ওখানে বসে বলছেন। তবে এটা কে কিভাবে নিচ্ছেন এটা হলো বড় কথা। আমাদের কথা হলো তারা গত ১৫ বছরের অপশাসনের প্রতীক ছিল। এদেরকে কারা মাইলেজ দিচ্ছে এটা তাদের ইস্যু। এ বিষয়ে আমরা কমেন্ট করতে চাই না।
বিগত সরকারের সুবিধাভোগী সরকারি আমলা ও কূটনৈতিকদের সরানোর সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে উপপ্রেস সচিব আজাদ মজুমদার বলেন, প্রশাসনে রদবদল চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর কয়েক হাজার রদবদল হয়েছে। এটা চলমান রয়েছে। সরকার যেখানে প্রয়োজন মনে করছে সেখানে কাউকে পদোন্নতি, বদলি বা নতুন করে পদায়ন করছে। এটা চলমান আছে। নানান কারণে এটা হতে পারে। কারো বিরুদ্ধে আগের সরকারের দোসর বা সুবিধাভোগী হওয়ার গুরুতর অভিযোগ থাকলে তা বিবেচনা করা হয়। তিনি বলেন, বিভিন্ন মিশনে পরিবর্তনের সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এসেছে। সেসব সুপারিশ সরকারের পক্ষ থেকে সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হবে। চলতি মাসে বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রদূত পিএলআরে চলে যাবেন। আরো ২০টির মতো দেশে রাষ্ট্রদূত পরিবর্তন হচ্ছে। সে নিয়োগগুলো ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে।