পতনেই আবদ্ধ পুঁজিবাজার বেচাকেনা ফিফটি ফিফটি
১ সপ্তাহে মূলধন কমেছে ৬৫১.৪২ কোটি টাকা- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১৬
কিছুতেই পতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। পতনের মধ্যেই আবদ্ধ রয়েছে। মাঝে মধ্যে পুঁজিবাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিললেও পরক্ষণেই আবার দরপতন হচ্ছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারাচ্ছেন। দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা তত ভারী হচ্ছে। পতনে বা দর হারানো কোম্পানির সংখ্যাই বিদায়ী সপ্তাহে বেশি ছিল। ডিএসইতে ৪০.১৯ শতাংশ কোম্পানি দর বৃদ্ধিতে থাকলেও পতনের শিকার ছিল ৪৩.০৯ শতাংশ। সার্বিকভাবে বাজারমূলধনও ডিএসইর কমেছে ০.১০ শতাংশ বা ৬৫১ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
ডিএসইর সাপ্তাহিক তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে পতনের ধারার প্রাধান্যই ছিল বেশি। ফলে সূচক হারানোর সাথে সাথে বাজারমূলধন ০.১০ শতাংশ কমেছে। ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৪১৩টি কোম্পানি। এর মধ্যে ১৬৬টির বা ৪০.১৩ শতাংশে দর বেড়েছে, ১৭৮টির বা ৪৩.০৯ শতাংশের দর কমেছে, দর অপরিবর্তিত ছিল ৫১টির এবং ২৩টির লেনদেন হয়নি। ডিএসইর প্রধান সূচক সপ্তাহ শেষে ৪.২৩ পয়েন্ট বেড়ে এখন পাঁচ হাজার ১৯৬.৪২ পয়েন্টে উঠেছে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ৪.৩১ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯১১.৯২ পয়েন্টে, শরিয়াহ ২.৯২ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৬৩.৯৭ পয়েন্টে নেমেছে। তবে ডিএসএমই সূচক আরো ৪.৪৭ পয়েন্ট বেড়ে এখন এক হাজার ৯৫.৯৬ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
লেনদেন টাকায় গড়ে বেড়েছে ১৬.৫৩ শতাংশ বা ৬৩ কোটি তিন লাখ ৭০ হাজার টাকা। বিদায়ী সপ্তাহে ৪৪৪ কোটি ৩৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা লেনদেন হয়েছে, যেখানে আগের সপ্তাহে হয়েছিল ৩৮১ কোটি ৩১ লাখ ২০ হাজার টাকার। আর পুরো সপ্তাহে গড়ে ১৩ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজারটি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনার জায়গায় গেল সপ্তাহে হয়েছে ১৯ কোটি ১৯ লাখ ৩০ হাজারটি। ফলে বেড়েছে ৩৯.০৭ শতাংশ বা পাঁচ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজারটি।
ডিএসইতে পুরো সপ্তাহে মোট লেনদেন বেড়েছে ৩১৫ কোটি ১৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আগের সপ্তাহের এক হাজার ৯০৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বিপরীতে বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ২২১ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার। আর মোট শেয়ার বেচাকেনা বেড়েছে ২৬ কোটি ৯৫ লাখ ৯০ হাজারটি। আগের সপ্তাহে যেখানে ৬৯ কোটি ৭০ হাজারটি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয়েছিল, সেখানে বিদায়ী সপ্তাহে হয়েছে ৯৫ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজারটি। ব্লক মার্কেটে ৯৪ কোটি ৯ লাখ টাকার এবং এসএমইতে ৬০ কোটি ৬০ লাখ ৮০ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়েছে।
সাপ্তাহিক দরবৃদ্ধিতে ১০
ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায়, ডিএসইতে সদ্যবিদায়ী সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং লিমিটেডের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৩৮.৫৫ শতাংশ। দরবৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের ২৮.৪১ শতাংশ, ঢাকা ডাইংয়ের ১৬.৯৬ শতাংশ, দেশ গার্মেন্টসের ১৬.৩৮ শতাংশ, এমএল ডাইংয়ের ১৩.৫৮ শতাংশ, দুলামিয়া কটনের ১৩.৫৫ শতাংশ, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ১৩.২৩ শতাংশ, আইসিবি এএমসিএল গোল্ডেন জুবলি মিউচুয়াল ফান্ডের ১১.৯০ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১১.৫৪ শতাংশ এবং ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ১১.১১ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে।
সাপ্তাহিক দর পতনে শীর্ষ ১০
গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৭.৮৩ শতাংশ কমেছে। সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান পাওয়া অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে নিউলাইন ক্লোথিংসের ১৫.৪৬ শতাংশ, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্সের ১৪.২৯ শতাংশ, কহিনুর কেমিক্যালের ১১.৩৫ শতাংশ, এনআরবি ব্যাংকের ৮.৩৯ শতাংশ, পদ্মা অয়েলের ৮.০২ শতাংশ, হামি ইন্ডাস্ট্রিজের ৭.২১ শতাংশ, স্কয়ার নিটের ৬.৫৭ শতাংশ, সিকদার ইন্স্যুরেন্সের ৬.০৩ শতাংশ এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ৫.৮৬ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে।
সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষ ১০:
সপ্তাহে লেনদেন তালিকার শীর্ষস্থান দখল করেছে এনআরবি ব্যাংক। সপ্তাহজুড়ে ব্যাংকটির প্রতিদিন গড়ে ১৭ কোটি ৫৮ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৩.৯৬ শতাংশ। আর জেনেক্স ইনফোসিস সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন গড়ে ৯ কোটি ৪৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ২.১৩ শতাংশ। এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন গড়ে ৯ কোটি তিন লাখ ৭০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ২.০৩ শতাংশ। এছাড়া, প্রতিদিন গড় লেনদেনে সাপ্তাহিক শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে অগ্নি সিস্টেমসের ৭ কোটি ৮৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা, আইসিবির ৬ কোটি ৭৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ইনট্রাকো রিফুয়েলিংয়ের ৬ কোটি ৪৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা, ড্রাগন সোয়েটারের ৬ লাখ ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা, গ্রামীণফোনের ৬ কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৬ কোটি ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
চট্টগ্রাম স্টকে সূচকে পয়েন্ট ফিরেছে
সিএসইর দেয়া সাপ্তাহিক তথ্য বলছে, বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক মার্কেটে দরবৃদ্ধি ও দর পতনে কোম্পানির সংখ্যায় ৬২টি ব্যবধান। শেয়ার বেচাকেনাও কম। এক কোটি ২৭ লাখ ৮৩ হাজার ৯৬৮টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ২৭ কোটি ৫২ লাখ ৪০ হাজার ৯৮৯ টাকা বাজারমূল্যে। যা আগের সপ্তাহের তুলনায় প্রায় তিন কোটি টাকা কম। মূল্যসূচকের ক্ষেত্রে সিএসই-৩০ সূচক ০.১৯ শতাংশ, সিএএসপিআই ০.৩৩ শতাংশ ও সিএসসিএক্স ০.২৩ শতাংশ বেড়েছে। লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানির সংখ্যাও কমেছে। ৩২১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৭৪টির, দর পতনের শিকার ১১২টি এবং দর অপরিবর্তিত ৩৩টির। বাজারমূলধনে অংশীদারিত্ব এ শ্রেণীর কোম্পানির বেড়ে ৬৩.৯৮ শতাংশ, বি শ্রেণীর কমে ২৯.২৫ শতাংশ, এন শ্রেণীর ৪.২০ শতাংশ এবং জেড শ্রেণীর ২.৫৭ শতাংশ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা