শীর্ষ ৭ কর্মকর্তার পদশূন্য স্থবির মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড
অফিস করছেন না চেয়ারম্যান- শাহেদ মতিউর রহমান
- ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
চেয়ারম্যানসহ শীর্ষ সাত পদে নেই কোনো কর্মকর্তা। কাগজপত্রে পদে থাকলেও কোনো দায়িত্ব পালন করছেন না চেয়ারম্যান। অথচ সারা দেশের হাজার হাজার মাদরাসা ও এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাজে ব্যস্ত থাকার কথা মাদরাসার একমাত্র এই শিক্ষাবোর্ডের। গত কয়েক মাস ধরে মাদরাসা বোর্ডের শীর্ষ পদগুলো শূন্য থাকায় প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আগত সেবাপ্রত্যাশীরা পড়ছেন ভোগান্তিতে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা সেবাপ্রত্যাশীদের একদিকে যেমন সময়ের অপচয় হচ্ছে তেমনি আর্থিকভাবেও তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে বেশ কিছু দিন ধরেই বোর্ডের শীর্ষ পদগুলো খালি। বিশেষ করে বোর্ডের রেজিস্ট্রার, প্রকাশনা নিয়ন্ত্রক, উপ-রেজিস্ট্রার (প্রশাসন), উপ-রেজিস্ট্রার (কমন), উপ-মাদরাসা পরিদর্শক-২, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (গোপনীয়) ও কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ পদ খালি থাকায় মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের নিয়মিত কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহ্ মো: আলমগীর ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজ থেকেই বোর্ডে আসছেন না। বাসা থেকেই অতি প্রয়োজনীয় ফাইলপত্র সই স্বাক্ষর করছেন তিনি। সূত্র মতে গত তিন মাসের মধ্যে গত ২১ নভেম্বর সর্বশেষ তিনি অফিস করে এর পরে আর আসেননি।
সূত্র জানায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ মাদরাসা বোর্ডের প্রকাশনা নিয়ন্ত্রককে এবং গত ২৬ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার, উপ-রেজিস্ট্রার (প্রশাসন), উপ-রেজিস্ট্রার (কমন), উপ-মাদরাসা পরিদর্শক-২, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (গোপনীয়) ও কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ পদে প্রেষণে কর্মরত সাতজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। কিন্তু উল্লিখিত পদসমূহে অদ্যাবধি কোনো কর্মকর্তা পদায়ন করা হয়নি। যদিও বোর্ডের শূন্য পদের বিপরীতে বোর্ড থেকে ৫০ শতাংশ এবং বাইরের শিক্ষা ক্যাডার থেকে বাকি ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরেই বোর্ডের দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে শুধু বাইরে থেকেই শতভাগ পদ পূরণ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মাদরাসা বোর্ডের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ আর হতাশার জন্ম দিয়েছে। বিধি অনুযায়ী বিষয়টির সঠিক সুরাহা দাবি করছেন তারা। কিন্তু দীর্ঘ দিন থেকে সংশ্লিষ্ট পদসমূহ শূন্য থাকায় বোর্ডের নিয়মিত কার্যাবলি কার্যত গতিহীন হয়ে পড়েছে এবং দূর-দূরান্ত থেকে আগত সেবাপ্রত্যাশীরা প্রতিদিনই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন।
সূত্র আরো জানায়, বোর্ডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ হচ্ছে রেজিস্ট্রার। বিশেষ করে বোর্ডের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম, সময়াবদ্ধ ক্রয় প্রক্রিয়া, মাদরাসাগুলোর ম্যানেজিং কমিটি, গভর্নিং বডি, নির্বাহী কমিটি, অ্যাডহক কমিটি অনুমোদনের আবেদন নিষ্পত্তি কার্যক্রম, আওতাধীন মাদরাসা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অভিযোগ নিষ্পত্তি কার্যক্রম, অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন আবেদন নিষ্পত্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম, আওতাধীন মাদরাসাগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীগণের চূড়ান্ত বরখাস্তের আবেদন নিষ্পত্তি ও বিভিন্ন মামলার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে কার্যকর ভূমিকা রয়েছে রেজিস্ট্রারের। কিন্তু এই পদটি শূন্য থাকায় এসব কাজে কোনো কার্যত গতিহীন হয়ে পড়েছে। অপরদিকে প্রকাশনা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব হচ্ছে বিদ্যমান কারিকুলাম পরিমার্জন কাজে এনসিটিবিকে সহায়তা প্রদান, দাখিল ও আলিমের সিলেবাস ও মানবণ্টন পুনর্বিন্যাসকরণ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা। এই কাজেও এখন স্থবিরতা বিরাজ করছে।
অপরদিকে বোর্ডের উপ-রেজিস্ট্রার (কমন) এর দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের নাম ও বয়স শুদ্ধকরণ আবেদন নিষ্পত্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম, শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন, রেজিস্ট্রেশন সংশোধন, আওতাধীন মাদরাসাগুলোর ই-অফিস ব্যবস্থাপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন, বোর্ডের পরিবহন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা। একইসাথে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের (গোপনীয়) দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে দাখিল পরীক্ষা-২০২৫ এর প্রশ্নপত্র পরিশোধন কাজ, নাম ও বয়স শুদ্ধকরণ সংক্রান্ত আবেদন নিষ্পত্তি কার্যক্রম, বিদেশগামী শিক্ষার্থীসহ অন্য শিক্ষার্থীদের সনদ, নম্বরপত্র যাচাই/সত্যায়ন, আলিম পরীক্ষা-২০২৪ পুনঃনিরীক্ষণ কার্যক্রম প্রভৃতি। অন্যদিকে উপ-মাদরাসা পরিদর্শক-২ এর দায়িত্বে রয়েছে নতুন মাদরাসা স্থাপনের আবেদন নিষ্পত্তি, পাঠদান অনুমতি, স্বীকৃতি প্রদান, স্বীকৃতি নবায়ন, মাদরাসা স্থানান্তর, মাদরাসার নাম সংশোধন সংক্রান্ত কার্যক্রম প্রভৃতি। কারিকুলাম বিশেষজ্ঞের দায়িত্ব রয়েছে বিদ্যমান কারিকুলাম পরিমার্জন কাজে এনসিটিবিকে সহায়তা প্রদান, দাখিল ও আলিমের সিলেবাস ও মানবণ্টন পুনর্বিন্যাসকরণ সংক্রান্ত কার্যক্রম চলমান রাখা। কিন্তু এই পদগুলো খালি থাকায় সেবাপ্রত্যাশীর ভোগান্তির পাশাপাশি বোর্ডের নিয়মিত কার্যক্রমও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে গত ২১ নভেম্বর রাজধানী ঢাকার বকশীবাজারের মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে শূন্য পদ এবং বোর্ডের সেবাপ্রত্যাশীদের দুর্ভোগ লাঘবে করণীয় বিষয় ঠিক করতে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে মাদরাসা বোর্ডের শূন্য পদগুলো বিধি মোতাবেক ৫০ ভাগ নিজস্ব জনবল থেকে আর বাকি ৫০ ভাগ বাইরে থেকে নিয়োগ দেয়া হবে। আর এই বিষয়টি বোর্ডের চেয়ারম্যানকেই দায়িত্ব নিয়ে নিজস্ব জনবল থেকে (বোর্ডের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে) ৫০ শতাংশ পূরণ করার বিষয়ে সচিব বোর্ড চেয়ারম্যানকে তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু অদ্যাবধি এ বিষয়ে চেয়ারম্যান কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। গতকাল সোমবার বেশ কয়েকবার ফোনে যোগাযোগ কললেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে গতকাল দুপুরে মাদরাসা বোর্ডে গিয়েও চেয়ারম্যানকে তার দফতরে পাওয়া যায়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা