০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

মিয়ানমার ও ভারত থেকে দেড় লাখ টন চাল কিনছে বাংলাদেশ

-


মিয়ানমার থেকে এক লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল এবং ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৮৯৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এই অর্থ ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। একই সাথে স্থানীয় বাজার থেকে ৫ হাজার টন চিনি ক্রয় ও ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মিয়ানমার থেকে জিটুজি পর্যায়ে ১ লাখ টন আতপ চাল আমদানির প্রস্তাব আনা হয়। মিয়ানমার রাইস ফেডারেশন এই চাল সরবরাহ করবে। প্রতি টন চালের দাম ধরা হয়েছে ৫১৫ মার্কিন ডলার। এই চাল আনতে মোট ব্যয় হবে ৬১৮ কোটি টাকা।
সভায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পৃথক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ভারতের মেসার্স মন্ডল স্টোন প্রডাক্ট প্রাইভেট লিমিটেড এই চাল সরবরাহ করবে। প্রতি টন চালের দাম ধরা হয়েছে ৪৬৭.৭০ মার্কিন ডলার। এতে মোট ব্যয় হবে ২৮০ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে দেশের দুই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫ হাজার টন চিনি ও মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৫ হাজার টন চিনি ও ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৫৫ কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই অর্থ ব্যয়েরও অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছ থেকে ৫ হাজার টন চিনি কেনার প্রস্তাব নিয়ে আসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রস্তাব পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
এই চিনি কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি কেজি চিনির দাম পড়বে ১১৮ টাকা ৪৩ পয়সা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে এই চিনি বিক্রি করা হবে।
সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে চট্টগ্রামের মেসার্স পায়েল ট্রেডার্স থেকে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রতি কেজির দাম পড়বে ৯৬ টাকা ৬৯ পয়সা। এই মসুর ডাল টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা হবে।

দেশের কৃষি খাতে ব্যবহারের জন্য ৬০ হাজার টন ইউরিয়া এবং ৩০ হাজার টন রক ফসফেট আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৩৩৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এই অর্থ ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
জানা গেছে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতার এনার্জি মার্কেটিং থেকে ৩০ হাজার টন ব্যাগড প্রিল্ড ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৩৩ কোটি ৮ লাখ ১২ হাজার টাকা।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১১ জুন অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভার অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কাতার এনার্জি মার্কেটিং থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে ৫ লাখ ১০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানির চুক্তি সই হয়। সেই চুক্তির আলোকে এখন ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানি করা হবে। কাতার এনার্জি মার্কেটিংয়ের সাথে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি টন ৩৬৯.৬৭ মার্কিন ডলার।
সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আর এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরব থেকে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রতি টনের দাম ধরা হয়েছে ৩৪২.৩৩ মার্কিন ডলার। এতে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ২ লাখ ৬৯ হাজার ৯০০ ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ ১২৩ কোটি ২৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।

এ ছাড়া চট্টগ্রামের টিএসপিসিএলের জন্য ৩০ হাজার টন রক ফসফেট (৭০% বিপিএল মিনিমাম) আমদানির অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ কমিটি। এ প্রস্তাবটিও শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়। এতে ব্যয় হবে ৮২ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
টিএসপি সার উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ফসফরিক এসিড ও রক ফসফেট বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩০ হাজার টন রক ফসফেট আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩টি দরপত্র জমা পড়ে। ৩টি দর প্রস্তাবই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশ করা রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ইউএসের মেসার্স জেনট্রেড এফজেডই এর কাছ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন রক ফসফেট আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement