পাঠ্যবইয়ের আগেই বাজারে আসছে নিষিদ্ধ নোট গাইড
জড়িতদের চিহ্নিত করতে উপদেষ্টার নির্দেশ- শাহেদ মতিউর রহমান
- ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬
বিনামূল্যের পাঠবই মূদ্রণের আগেই বাজারে আসতে শুরু করেছে সরকার নিষিদ্ধ বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন কোম্পানির নোট ও গাইড বই। যদিও মূল বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর আগে পাঠ্যবইয়ের কোনো বিষয়বস্তু (কন্টেন্ট) বাইরের কারোরই জানার বা দেখার সুযোগ নেই। তা সত্ত্বেও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বইয়ের সিডি (মুদ্রণের ‘র’ কপি) মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নোট গাইড ব্যবসার সাথে জড়িত প্রেস মালিকদের হাতে চলে যাচ্ছে। এই প্রেস মালিকরা মূল পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ বাদ দিয়ে এখন নোট আর গাইড ছাপানোরা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে পাঠ্যবই যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পোঁছানো নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
যদিও এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ নিজেই উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, বিষয়টি উদ্বেগজনক। এ কাজের সাথে যে বা যারাই জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে তিনি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও সংবাদ কর্মীদেরও সহযোগিতা চেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন তারাও এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন। জড়িতদের চিহ্নিত করতে ইতোমধ্যে একাধিক কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ২০২২ সাল থেকে নতুন কারিকুলাম চালু হওয়ার পর নোট ও গাইড বই ব্যবসার সুুযোগ অনেকটাই কমে আসে। কেননা বিতর্কিত ওই কারিকুলামে (২০২২ সালের) শিক্ষার্থীদের খুব একটা পড়াশোনা করতে হতো না। কো-কারিকুলাম বা একট্রা কারিকুলামের নামে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষেই সমস্যার সমাধান করত। ফলে গত তিন বছর মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নোট বা গাইড পড়ার তেমন প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু আগামী ২০২৫ সাল থেকে নতুন করে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হওয়ার খবরে নোট ও গাইড বই বাজারে নিয়ে আসার কাজে ব্যস্ত এখন পুস্তক ব্যবসায়ীরা। এ কারণে পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি, নম্বর বণ্টন ও সিলেবাসের আগাম তথ্য নোট-গাইড প্রকাশকদের কাছে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে হন্তান্তর করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে যারা পাঠ্যবই ছাপার ঠিকাদারি পেয়েছেন তাদের মধ্যে বেশ কিছু বড় বড় ঠিকাদারের নোট-গাইড কোম্পানিও রয়েছে।
এ দিকে গত ৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তী সরকার ২০২২ সালের কারিকুলাম বাতিল এবং নতুন করে মূল্যায়ন পদ্ধতি চালুর ঘোষণা দেয়ার পর মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নামে কিছু কোম্পানি গাইড নোট বাজারে ছেড়েছে। অভিযোগ রয়েছে গত এক দু’মাসে যে পরিমাণ গাইড ও নোট বই বিক্রি হয়েছে তাতে গত দুই বছরের লোকশানসহ লাভ তুলে নিয়েছেন প্রকাশকরা। এ ছাড়া আগামী কারিকুলাম যেহেতু ২০১২ সালে পুনরায় ফিরে গেছে এবং শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতিতেও যেহেতু পরীক্ষা (সৃজনশীল) চালু হচ্ছে এই সুযোগে নতুন বছরের শুরুতেই প্রকাশকরাও নতুন উদ্যোমে নতুন কলেবরে নোট ও গাইড বই বাজারে নিয়ে আসার অসৎ প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। ইতোমধ্যে মাধ্যমিকের বিভিন্ন ক্লাসের জন্য লেকচার, পাঞ্জেরী দ্য রয়েল নামে একাধিক গাইড ও নোট বই বাজারে চলেও এসেছে।
নোট ও গাইড ব্যবসায়ীরা কে কার আগে বাজারে নোট বই নিয়ে আসবেন এই প্রতিযোগিতায় মূলত তারা এনসিটিবিতে টাকার বিনিময়ে মূল বইয়ের পাণ্ডুলিপি সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। অনেকে ইতোমধ্যে সেই চেষ্টায় সফলও হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে এনসিটিবি থেকে সম্পাদনা শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা মোট অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বাইরের প্রকাশকদের কাছে বইয়ের পাণ্ডুলিপি গোপনে দিয়ে দিয়েছেন। এছাড়াও কম্পিউটার শাখার দুই-তিনজন অপারেটরও বইয়ের পাণ্ডুলিপি বা সিডি কপি বাইরে পাঠিয়েছেন। আর পুরো এই কাজটি হয়ে আসছে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। এই সিন্ডিকেট ওপরের লেভেলের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই কাজটি করে আসছে। যদিও এনসিটিবির বেশ কয়েকজন সৎ কর্মকর্তা এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করেও শেষ পর্যন্ত পেরে উঠেননি। এ বছরও সেই একই সিন্ডিকেট একতরফাভাবে এবং নির্ভয়ে সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে।
এ দিকে শিক্ষা খাত ধ্বংসের এমন অপকর্মে জড়িত পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নোট-গাইড প্রকাশকদের খুঁজে বের করতে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের এসবি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। একই সাথে তিনি দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সংস্থাগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব অনুসন্ধান করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে কথা হয় এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ বি এম রিয়াজুল হাসানের সাথে। তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, আমাদের কাছেও এ বিষয়ে অভিযোগ এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি এই অসৎ কাজের জড়িতদের দ্রুত খুঁজে বের করতে। আমরা ইতোমধ্যে একাধিক তদন্ত কমিটিও গঠন করেছি। এ বিষয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা দফতরকেও আমাদের তদন্তকাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা