ঘোষণাতেই চট্টগ্রাম বন্দরে ২০ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা
- শাহ আলম
- ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৫
- গৃহস্থালি পণ্যের নামে আনা হলো বিদেশী সিগারেট
- শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে ১০ কোটি টাকার গাড়ি জব্দ
ঘোষণাতেই চট্টগ্রাম বন্দরে ২০ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করা হয়েছে। গৃহস্থালি পণ্যের নামে আনা হয়েছে বিদেশী সিগারেট। একই সাথে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে চট্টগ্রামে আটক করা হয়েছে ১০ কোটি টাকার বিলাসবহুল গাড়ি। এভাবে বিভিন্ন সময় মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য আমদানির মাধ্যমে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, মিথ্যা ঘোষণায় চট্টগ্রাম বন্দরে আসা ৭৪ লাখ শলাকা বিদেশী ব্র্যান্ডের সিগারেট জব্দ করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম। গত রোববার বিকেলে গৃহস্থালি পণ্য ঘোষণায় আসা সিগারেটের চালানটি আটক করে। এতে প্রায় ৯ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি নস্যাৎ করার দাবি করেছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের সহকারী কমিশনার মো: রাজিব হোসেন।
চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানায়, পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডের খেয়াতি লেদার ইনোভেশন বিডি লিমিটেড নামে একটি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের নামে ২০ ফুটের এক কনটেইনার পণ্য আমদানি করা হয়। গৃহস্থালি পণ্য ঘোষণা দিলেও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম কাস্টমস জানতে পারে চালানটিতে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এতে রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারটি জরুরি কিপডাউন করে কাস্টমসের অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখা।
শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে কনটেইনারটিতে ৭৪০ কার্টনে ৭৪ লাখ শলাকা লামার ব্র্যান্ডের ন্যানো সিলভার, ন্যানো গ্রে, ন্যানো ব্লু, ন্যানো হোয়াইট সিগারেট পাওয়া যায়। সিগারেটগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের তৈরি হলেও চালানটি থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয় বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের সহকারী কমিশনার মো: রাজিব হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিস্ক ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে এআইআর শাখা রফতানিকারকের ওয়েবসাইট, উৎস দেশ, আমদানিকারকের ব্যবসার ধরন ও ঠিকানা, পণ্যের বর্ণনা বিশ্লেষণ করে এ চালানে অসত্য ঘোষণার পণ্য থাকার বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। এর পর দ্রুত অভিযান চালিয়ে চালানটি আটক করা হয়। পরে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে ৭৪ লাখ শলাকা সিগারেট পাওয়া যায়।
চালানটির শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ছিল দেড় কোটি, এর বিপরীতে রাজস্বের পরিমাণ ছিল প্রায় ৯ কোটি টাকা। এতে মিথ্যা ঘোষণায় প্রায় ৯ কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অপচেষ্টা রোধ করা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান।
এ দিকে মিথ্যা ঘোষণা ও শুল্ক ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে ১০ কোটি টাকার বিলাসবহুল মিশন সাফারি গাড়ি জব্দ করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। গত ২৫ নভেম্বর বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর পশ্চিম খুলশি রোজ ভ্যালি হাছান টাওয়ার-১ থেকে গাড়িটি জব্দ করা হয়। কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাড়িটির মালিক মো: পারভেজ উদ্দিন। তবে তিনি গাড়ির আমদানির কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তিনি একটি হলফনামা উপস্থাপন করেন এবং তাতে দেখা যায়, মো: ওসমান গনি মেঘনা সিডস ক্রাসিং লিমিটেডের কাছ থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকায় গাড়িটি কিনেছেন। মেঘনা সিডস ক্রাসিং লিমিটেডের প্রতিনিধির সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তারাও আমদানি এবং ক্রয়সংক্রান্ত দলিলাদি দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
আটককৃত গাড়িটির শুল্কায়ন সংক্রান্ত দলিলাদি চেয়ে পত্র পাঠানো হলে উক্ত ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বরের বিপরীতে কোনো বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়নি বলে কাস্টম হাউজ জানিয়েছে। একই সঙ্গে কোনো আমদানি দলিলাদির ভিত্তিতে গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা হয়েছে তা জানতে চেয়ে বিআরটিএতে চিঠি পাঠানো হলে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ তা জানাতে পারেনি।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো: বিল্লাল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, শুল্ক ফাঁকির প্রাথমিক সন্দেহে গত ১৭ নভেম্বর গাড়িটি জব্দ করে মো: পারভেজ উদ্দিনের জিম্মায় রাখা হয়। পরে আমরা গাড়ির বিষয়ে তদন্ত শুরু করি। তদন্তে দেখা যায়, দলিলাদি ব্যতিরেকে এবং শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভিন্নতর উপায়ে মিথ্যা ঘোষণা ও চোরাচালানের মাধ্যমে গাড়িটি বাংলাদেশে আনা হয়েছে সেটা নিশ্চিত হয়েছি, যা কাস্টমস আইন, ২০২৩-এর ধারা ২(২৪), ১৮, ৩৩, ৮১, ৯০-এর আইনের লঙ্ঘন এবং অপরাধ হিসেবে গণ্য। গাড়িটির মোট আমদানি শুল্ক ৮২৭ শতাংশ এবং আনুমানিক শুল্ককর ১০ কোটি টাকা। এ অর্থ তারা ফাঁকি দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা