০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানো হয় ৮০০ কোটি টাকা

গোপালগঞ্জ-যশোর-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও খাগড়াছড়ি সড়ক
-


আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেয়া সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) আওতাধীন ৪১টি মেগা প্রকল্পের অন্যতম একটি ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট। এই প্রকল্পে অনুমোদিত খরচ ২ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা হলেও দুই দফা সংশোধিত ব্যয় বাড়িয়ে খরচ দেখানো হয় ৩ হাজার ৭৪৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। অর্থাৎ এই প্রকল্পে বিভিন্নভাবে খরচ বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। এই ব্যয়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন চালিয়েছে ব্যাপক লুটপাট।
২০১৬ সালে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর চলতি বছরের জুনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হয়। তবে এই প্রকল্পের শুরুর দিকে ভূমি অধিগ্রহণের নামে ও পরে চার প্যাকেজে নির্মাণকাজ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতের ঠিকাদারদের মাধ্যমে ব্যাপক অর্থ লুটপাট হয়েছে বলে স্থানীয় ভুক্তভোগীদের মাধ্যমে অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
যদিও প্রকল্প পরিচালক শ্যামল কুমার ভট্টাচার্য্য বলছেন, বৈদেশিক সহায়তার সওজের চার লেন থেকে সংশোধিত হয়ে ছয় লেনের এ প্রকল্পে সরকারের তরফ থেকে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল তার থেকেও ৭৯৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা কম খরচে নির্মাণকাজ শেষ করা সম্ভব হয়েছে। আর এই প্রকল্পটির, বিশেষ করে ব্রিজগুলোর নির্মাণকাজ সুন্দরভাবে শেষ হওয়ায় এখন ওইসব অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ফিরে এসেছে স্বস্তি।

গতকাল তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ২০১৬ সালে নেয়া প্রকল্পটি যথাসময়েই হস্তান্তর হয়েছে। ২০১৫ সালে প্রকল্পের জন্য যে ডিপিটি তৈরি হয়েছিল সেখানে মোট খরচ দেখানো হয়েছিল ৩ হাজার ৭৪৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে আসল (একচুয়াল) কস্ট ছিল ২ হাজার ৯৪৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তার মানে প্রকল্প শেষে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার মতো। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারের ফান্ড থেকে দেয়া হয়েছিল ৯৬৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। অপর দিকে বৈদেশিক সাহায্যের টাকা ছিল (জাইকার লোন) ১ হাজার ৯৮২কোটি ৫১ লাখ টাকা।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী ও বিশেষ সংশোধনীতে যে ব্যয় বেড়েছিল সেটি ভূমি অধিগ্রহণের সময় বাড়তে পারে। আর বাড়তে পারে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে। ব্রিজ নির্মাণের কাজ প্রথম পর্যায়ে চার লেনেরই ছিল। পরে স্লো মুভিং ভেহিক্যাল হওয়ায় আমাদের আলাদা লেন করতে হয়েছে। চার লেন ও অ্যাপ্রোচ সড়কসহ ছয় লেনের কারণে প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় বেড়েছিল। জমি অধিগ্রহণের সময়ও জমির মূল্য বেড়ে গিয়েছিল।
ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের অবস্থান ছিল গোপালগঞ্জ, নডাইল, যশোর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি। এই মেগা প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট করা। এর মধ্যে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে ১৪ কিমি.। ব্রিজ নির্মাণ ১৭টি (২০৬৭ কিমি.), কালভার্ট নির্মাণ সাতটি (১০১ মিটার, এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন দুইটি এবং টোল গেট একটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি শুরুর অনুমোদন পর্যায়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা ছিল ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এই সময়ে অনুমোদন পর্যায়ে ২ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা নির্ধারণ ছিল। ২০২২ সালে প্রথম সংশোধনী আনা হয়। এবং দ্বিতীয় বিশেষ সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় আরো বাড়িয়ে সেটি ৩ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা ৫১ লাখ টাকা করা হয়।
প্রকল্প পরিচালক শ্যামল কুমার ভট্টাচার্য্য কাজ শুরুর আগে নানা সমস্যা ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রকল্পের কাজের মধ্যে করিডোরের বিভিন্ন রাস্তার মধ্যে থাকা সব ব্রিজের নির্মাণকাজ যথাসময়েই শেষ হয়েছে। এসব ব্রিজের অনেক তখন ভালো কন্ডিশনে ছিল না। আবার কোনোটায় ব্রিজই ছিল না। যেমন ভাঙ্গা-বেনাপোল সড়কে একটি ব্রিজের পুরোটাই ডিসকানেক্ট ছিল। এতে ফেরিঘাটে এসে লোকজনকে বসে থাকতে হতো। ব্রিজ নির্মাণ হওয়ায় এখন মানুষ স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারছে। শুধু ভাঙ্গা-বেনাপোল ব্রিজ ডিসকান্টে নয়, কোনো কোনো জায়গায় স্টিল ব্রিজের রাস্তাও ডিসকানেক্ট ছিল। এখন এসব এলাকার মানুষ সুবিধা পাচ্ছে এই প্রকল্প কাজ শেষ হওয়ায়।

অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ব্রিজগুলোর অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ভাঙ্গা-বেনাপোল, চট্টগ্রাম কক্সাবাজার বারৈয়ার হাট থেকে রামগড় পর্যন্ত। ভবিষ্যতে সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এসব ইমপ্রুভমেন্ট কাজ শুরু করতে পারে। শ্যামল কুমার ভট্টাচার্য্য প্রকল্পটি ইতোমধ্যে হ্যান্ডোভার হওয়ায় এখন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন। প্রকল্পটির কাজ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তাকে দেয়া হয়েছে।
গতকাল একাধিক ভুক্তভোগী নয়া দিগন্তকে এই মেগা প্রকল্পের বিষয়ে বলেন, যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও এটা বাস্তবায়নের নামে রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক সরকারি টাকা লুটপাট হয়েছে; বিশেষ করে জমি অধিগ্রহণের নামে। এ ছাড়া ঠিকাদারদের অনেকেই নির্ধারিত কমিশন ছাড়া তাদের বিল পাস করাতেও পারেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাহলে কি মেগা এই প্রকল্পের কাজের মান যথাযথভাবে হয়নি?
এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান করে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে কী পরিমাণ টাকা লুটপাট হয়েছে, সেটি নতুন করে তদন্ত করে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীরা।

 


আরো সংবাদ



premium cement
চোরতন্ত্রে পরিণত হয় দেশ বাংলাদেশে সুইডেনের বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা বিএনপি ক্ষমতা পেলে ফ্যামিলি ও ফার্মার্স কার্ড দেয়া হবে পশ্চিমতীরকে যুক্ত করে নিতে ইসরাইলের খসড়া পরিকল্পনা তৈরি দেশ স্থিতিশীল রাখতে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা: শফিক তাঁবেদার রেজিম উৎখাতে ভারতের নীতিনির্ধারকরা এখন বেসামাল বাংলাদেশী সংখ্যালঘুদের দলে দলে ভারত পালানোর তথ্য সঠিক নয় ৫ আগস্টের পর ভারতের সাথে সম্পর্কে সমস্যা চলছে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে মোদির কাছে আবদার মমতার মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত অধ্যায়ে রূপ নেয়

সকল