পার্বত্য চুক্তির পুন-মূল্যায়ন ও সন্তু লারমার পদত্যাগ দাবি
- রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি
- ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৩
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক ধারাগুলো সংশোধন করে পাহাড়ের উপজাতি (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী)-বাঙালির মধ্যে বৈষম্য দূর করে সমতা আনয়ন পূর্বক চুক্তির পুনঃমূল্যায়ন করার দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ।
সোমবার দুপুরে সংগঠনটির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটি নেতৃবৃন্দ রাঙ্গামাটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই দাবি জানান।
পার্বত্য চুক্তির ২৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের রাঙ্গামাটি জেলা সভাপতি শাব্বির আহমেদ।
এ সময় রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোলায়মান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবু বকর ছিদ্দিক, রাঙ্গামাটি পৌর কমিটির সভাপতি ডা: মুহাম্মদ ইব্রাহিম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর হোসেনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
নাগরিক পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে তৎকালীন শান্তিবাহিনী রক্তের হোলি খেলায় মেতেছিল।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার ও জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) মধ্যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে অনাকাক্সিক্ষত এসব ঘটনার অবসান ঘটে। সোমবার সেই পার্বত্য চুক্তির ২৭ বছর পূর্তি হচ্ছে।
চুক্তি সম্পাদনের সময় বাঙালি জনগোষ্ঠীর জাতিসত্তাকে অস্বীকার করে তাদের ‘অ-উপজাতি আখ্যা দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করেছে। শুধু তাই নয়, চুক্তির ক খণ্ডের ১ নং ধারায় ‘উভয়পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী বাঙালির অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুবিধায় পার্বত্য উপজাতিদের নানা অগ্রাধিকার শর্তযুক্ত করে বাঙালিদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে।
ভূমি ব্যবস্থাপনায় প্রথাগত রীতি অনুসরণের বিধান যুক্ত করায় সেখানে বসবাসরত বাঙালিরা ভূমিহীন ও বাস্তুচ্যুত হবার আশঙ্কায় দিন গুনছে। ইতোমধ্যে চুক্তির বিভিন্ন ধারা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছে। এই রিটের রায়ে উচ্চ আদালত চুক্তির অনেকগুলো ধারা অসাংবিধানিক বলে বাতিল করে দিয়েছে। যদিও উচ্চ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে। মামলাটি আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।
চুক্তির আওতায় গঠিত ভূমি কমিশন আইনের সর্বশেষ সংশোধনীকে বিশেষজ্ঞরা রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, কর্তৃত্ব ও এখতিয়ার বিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন। এতে প্রমাণিত হয়, শান্তিচুক্তির কিছু অংশের সাথে বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধান ও প্রচলিত আইনের সাংঘর্ষিক অবস্থান রয়েছে।
মানবিক সীমাবদ্ধতার কারণে মানুষের তৈরি কোনো বিধান একবারে নির্ভুল বা চূড়ান্ত হয় না। সময় ও প্রয়োজনের নিরিখে তার পুনর্মূল্যায়ন, সংশোধন, পরিবর্তন হয়।
তাই আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক ধারাগুলো সংশোধন, পাহাড়ের উপজাতি(ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী)-বাঙালির মধ্যে বৈষম্য দূর করে সমতা আনয়ন, চুক্তির পুনঃমূল্যায়ন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি স্থাপনে ব্যর্থ আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমার অপসারণ,পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যাহারকৃত নিরাপত্তাবাহিনীর ক্যাম্প পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়েছেন নাগরিক পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা