সিলেটের বাজারে ভোজ্যতেলের সঙ্কট
- এম জে এইচ জামিল সিলেট ব্যুরো
- ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০২
দুই দফায় ভ্যাট কমানো হলেও বাজারে কমেনি ভোজ্যতেলের দাম। উল্টো সিলেটের বাজারে সৃষ্টি হয়েছে ভোজ্যতেলের সঙ্কট। এজন্য বিভিন্ন কোম্পানির সরবরাহ কমিয়ে দেয়াকে দায়ী করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
এদিকে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে বিভিন্ন কোম্পানির বোতলজাত তেল ভেঙে খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে। নেয়া হচ্ছে বেশি দাম। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। অনেকের প্রশ্ন- তাহলে ভ্যাট ছাড়ের লাভের টাকা কোথায়?
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভোজ্যতেল আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর কমিয়ে করা হয়েছে ৫ শতাংশ। যার ফলে বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম কমার কথা থাকলেও তা হয়নি। চড়া দামে খোলা বাজারে প্রতি কেজি সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ থেকে ২০০ টাকায় ও পামতেল বিক্রি হচ্ছে ১৮২ থেকে ১৮৭ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও খোলা সয়াবিনের মূল্য ছিল ১৮৬ টাকা আর পামতেলের মূল্য ছিল ১৭৮ টাকা।
নগরীর কয়েকটি বাজারে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, খুচরা দোকানে বোতলজাত তেলের বড্ড সঙ্কট। কেন এই তেলের এত সঙ্কট জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে খোলা তেল সঙ্কটের কারণে দাম বেশি হওয়ায় বোতলের তেলের চাহিদা বেড়েছে। পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেল ৮১৮ টাকায়, দুই লিটার ৩৩৪ টাকায় ও এক লিটার তেল ১৬৭ টাকায় বিক্রি করার কথা থাকলেও এর বেশি দাম রাখা হচ্ছে। অপরদিকে ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। খোলা তেল বেশি দামে বিক্রি করলেও লাভ কম। অথচ বোতলজাত তেল কম দামে কিনে ভেঙে বিক্রি করছেন খোলা তেলের দামে। তাতে বেশি লাভ পাচ্ছেন। কিন্তু না ভেঙে বিক্রি করলে গায়ের দামে তা বিক্রি করতে হয়। সেখানে লাভ কম হয়। এ কারণেই দোকান থেকে সব বোতল সরিয়ে রেখে সঙ্কট তৈরি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। পরে রাতের আঁধারে বোতল ভেঙে দিনের আলোয় খোলা তেল হিসেবে তা বেশি দামে বিক্রি করছেন।
গত বৃহস্পতিবার নগরীর আম্বরখানা, সুবিদবাজার, মদিনামার্কেট, রিকাবিবাজারের কয়েকটি দোকান ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চাহিদানুযায়ী বাজারে খোলা তেলের আমদানি কম। বেশ কিছু দিন ধরে বোতলজাত তেলের জন্য কোম্পানিগুলোকে অগ্রিম টাকা জমা দিয়েও তা পাওয়া যাচ্ছে না।
দোকানে তেল কিনতে আসা খুচরা ক্রেতা আরিফ হোসেন বলেন, বর্তমানে ভোজ্যতেলের দাম এত বেশি যে, দিশেহারা হয়ে যাই। মধ্যবিত্ত ঘরের মানুষ আমরা। অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আরেক ক্রেতা রওশন আহমদ বলেন, তেল না হলে কোনো রান্নাই চলে না। তাই মরি বাঁচি তেল কিনতেই হবে। কিন্তু এর যে দাম! কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আরেক ক্রেতা আরিফ হোসেন নয়া দিগন্তকে বললেন, শুনেছি সরকার ভোজ্যতেলের ভ্যাট ছাড় দিয়েছেন। তাহলে দাম কেন কমেনি? উপরন্তু আরো বেড়েছে। ভ্যাট ছাড়ের টাকা তাহলে কার পকেটে? সজীব নামের এক ক্রেতা বলেন, সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। যে পণ্যের দাম একবার বাড়ে তা আর কমে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কী করেন? তাদের দায়িত্ব কী?
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, বোতলজাত তেলের নতুন মূল্য সংযোজন করে বাজারে ছাড়বে বলেই কোম্পানির অনলাইনে অর্ডার করে টাকা জমা দিয়েও তেল পাওয়া যাচ্ছে না।
সিলেট জেলা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আবু সালেহ মো: হুমায়ুন কবির দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কম এই তথ্য আমাদের কাছে আছে। তবে বেশি দামে বিক্রির কোনো তথ্য নেই। আমি বৃহস্পতিবারও কয়েকটি বাজার পরিদর্শন করেছি। এমন অভিযোগ পাইনি। এরপরও আমি খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করবো।
সিলেট নগরীর কালিঘাটস্থ ভোজ্যতেলের অন্যতম শীর্ষ পাইকারি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান আমিন ব্রাদার্সের পরিচালক আমিন উদ্দিন আহমদ তেলের সঙ্কটের কথা স্বীকার করেন। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, গত কয়েক দিন যাবৎ প্রায় সব কোম্পানি তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। চাহিদার অর্ধেক তেলও তারা সরবরাহ করতে পারছে না। তবে তেলের দাম বাড়েনি। কোম্পানির লোকজন বলেছেন আগামী সপ্তাহে ভোজ্যতেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা