এস আলমের দাপটে থমকে গেছে অর্থপাচার অনুসন্ধান!
বদলি তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের- আমিনুল ইসলাম
- ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৪
বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগে পালিয়ে গেলেও দেশের প্রায় প্রতিটি সেক্টরে এখনো প্রচণ্ড দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছে এস আলমের সুবিধাভোগীরা। অভিযোগ রয়েছে, তাদের দাপটে ইতোমধ্যে থমকে গেছে এস আলম গ্রুপের অর্থপাচারের অনুসন্ধান কাজ। শুধু তাই নয়, সিআইডির যে কর্মকর্তারা এই মামলার তদন্ত করছিলেন তাদের তিনজনকেই বদলি করে দেয়া হয়েছে। সিআইডির পক্ষ থেকে এই বদলি পুলিশের চাকরির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বলা হলেও কার্যত থমকে গেছে এস আলমের অর্থপাচারের অনুসন্ধান প্রক্রিয়া।
এস আলমের অভিযোগের অনেক পরে জমা পড়া প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হলেও চাপা পড়ে যাচ্ছে তাদের ফাইল। এই প্রতিষ্ঠানের প্রভাব ও আধিপত্য ব্যবহার করে প্রভাবশালী একটি মহলের ইচ্ছায় বদলি করা হয়েছে সিআইডির কর্মকর্তা ও তত্ত্বাবধানে থাকা কর্মকর্তাদের, যাতে করে তদন্ত কার্যক্রমে ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করা হয়। এই বদলির নেপথ্যে একজন শীর্ষস্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত বলে জানা গেছে।
গত ৩১ আগস্ট এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে বিদেশে এক লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা পাচারের অনুসন্ধানে নামে সিআইডি। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মো: সাইফুল আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলমসহ তাদের সহযোগীদের মাধ্যমে এই অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
সিআইডি সদর দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ৩১ আগস্ট এস আলমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে সিআইডি। তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান সংস্থার ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইমের পরিদর্শক মনির হোসেন। তাকে তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেয়া হয় বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) মো: সরোয়ার্দী হোসেন ও অতিরিক্ত ডিআইজি হুমায়ুন কবিরকে। অনুসন্ধান চলমান অবস্থাতেই ১২ অক্টোবরের পর এই তিন কর্মকর্তাকেই অল্প সময়ের ব্যবধানে বদলি করা হয়েছে। এতে করে থমকে যায় এস আলমের অর্থপাচার অনুসন্ধানের কাজ। অথচ এই অভিযোগের অনেক পরে তদন্ত শুরু করা অপর একটি প্রতিষ্ঠানের অনুসন্ধান কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম ও অর্থপাচারের ব্যাপকতা অনেক। দেশ-বিদেশ থেকে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও অনুসন্ধান একটি জায়গায় নিয়ে আসা বড় চ্যালেঞ্জের কাজ। তারপরও অসুন্ধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছিলেন। খুব তাড়াতাড়ি তাদের অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল। ঠিক তার আগ মুহূর্তে একটি মহলের প্রচণ্ড চাপে পড়ে যান তারা। এর কিছুদিনের মধ্যে দেখেন তারা একে একে বদলি হয়ে গেলেন। তদন্তের মধ্যে এ ধরনের হস্তক্ষেপ কর্মকর্তাদের মনোবল ভেঙে দেয়।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে এক লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সাইফুল আলম, তার স্ত্রী এবং দুই ছেলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাসসহ ইউরোপে অর্থ পাচার করেছেন বলে অনুসন্ধানে দাবি করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পাচার করা এই বিপুল অর্থ দিয়ে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ কেনা ছাড়াও ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। তাদের পাচারকৃত অর্থে সিঙ্গাপুরে ২৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের ক্যানালি লজিস্টিক প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ছাড়া ভুয়া নথি তৈরি, জাল-জালিয়াতি এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নামে- বেনামে ছয়টি ব্যাংক থেকে নেয়া ৯৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছেন। সেখানে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান (শেল কোম্পানি) খুলে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১৮ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন।
সিআইডি জানিয়েছে, এস আলমের অনুসন্ধান কার্যক্রম তদারকিতে থাকা অতিরিক্ত ডিআইজি হুমায়ুন কবিরকে চট্টগ্রাম, মো: সরোয়ার্দী হোসেনকে র্যাবে এবং অনুসন্ধান কর্মকর্তা মনির হোসেনকে শিল্প পুলিশে বদলি করা হয়। এখন নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হওয়ার পর অনুসন্ধানের কাজ তাকে বুঝিয়ে দেয়া হবে।
জানা গেছে, এস আলম গ্রুপ তাদের অর্থপাচার অনুসন্ধানের কাজকে প্রভাবিত করতে দেশে-বিদেশে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে। তাদের দাবি ছিল অনুসন্ধান কাজ ধীরে চলো নীতিতে চলবে। ওই শীর্ষস্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা এমন নিদের্শনাও দিয়েছিলেন; কিন্তু তদন্তসংশ্লিষ্টরা তার কথা না শোনায় পুরো তদন্ত টিমকেই বদলি করা হয়েছে। এ নিয়ে আরো তিন-চারজন কর্মকর্তা নেপথ্যে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিআইডি প্রধান এডিশনাল আইজিপি মো: মতিউর রহমান শেখ নয়া দিগন্তকে বলেন, এস আলমের অর্থপাচার অনুসন্ধান নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এখানে কোনো ধরনের ধীরে চলো নীতি বা গাফিলতি হচ্ছে না। তদন্ত কর্মকর্তাদের বদলির ব্যপারে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে সদর দফতর থেকে দেশব্যাপী পুলিশ সদস্যদের বদলি করা হচ্ছে, যা একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময়ে ওই তিন কর্মকর্তাকেও বদলি করা হয়েছে। এটাকে অন্য কোনোভাবে দেখা ঠিক হবে না। তিনি আরো বলেন, শুধু ওই কর্মকর্তরাই নয়, সিআইডির আরো অনেক কর্মকর্তাই বদলি হয়েছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা