মানি এক্সচেঞ্জের আড়ালে স্বৈরাচারীর দোসরদের অর্থপাচার
তদন্তে নামছে দুদক- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৪
মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ের আড়ালে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ উঠেছে কামরুজ্জামান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তিনি ফয়েজ মানি এক্সচেঞ্জ নামক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। শুধু অর্থপাচার নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দলীয় বিভিন্ন পদধারী নেতা ও পুলিশের সাথে সখ্যের প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের দোসর পলাতক নেতাদের দেশে রেখে যাওয়া টাকা বিদেশে পাচারে সহযোগিতা করছেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দেয়া লিখিত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কামরুজ্জামানের দুবাই ও সিঙ্গাপুরে অফিস রয়েছে। এসব অফিসের মাধ্যমে টাকা পাচারের কাজ করা হয়। কামরুজ্জামান আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিমের ভাই শেখ মারুফ, ফেনীর সাবেক এমপি নিজাম হাজারী, পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজীর অবৈধভাবে উপার্জিত কয়েক হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন তার মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। বর্তমানে তার সাথে সুসম্পর্ক থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা পলাতক থাকায় হুন্ডির মাধ্যমে তাদের রেখে যাওয়া টাকা পাচারে সহযোগিতা করছেন তিনি।
আবেদনে আরো অভিযোগ করা হয়, আওয়ামী লীগ নেতাদের অর্থ বিদেশে পাচার করে এবং ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানীর ভাই পুলিশের সহকারী কমিশনার গোলাম রোহানীর সাথে সখ্য কাজে লাগিয়ে কামরুজ্জামান রাজধানীর শান্তিনগরের স্কাইভিউ পার্ক সিটি ভবনে ১৯ ও ২১ তলায় দু’টি ফ্ল্যাট কিনেছেন। একটিতে তিনি বাস করেন, অপরটি ভাড়া দেয়া। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ছয় কোটি টাকা। এ ছাড়া দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করা অর্থে বসুন্ধরায় ৬ কাঠা জমির ওপর ৯ তলা ভবন নির্মাণ (আনুমানিক মূল্য আট কোটি টাকা), সিটি হার্টে তিনটি দোকান, গাজী টাওয়ারে দু’টি দোকান, চায়না টাওয়ারে একটি দোকান, মৌচাক মার্কেটের পেছনে আনারকলি মার্কেটে দুই হাজার স্কয়ার ফিট আয়তনের একটি শোরুম এবং গাবতলীতে ২২ কাঠা জমিতে গোডাউন রয়েছে তার। দোকান ও শোরুমের মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। আর ঢাকার বাইরে সাভারে ৬ কাঠা জমির ওপর বিলাসবহুল বাড়ি, ফেনীতে এক একর জমির ওপর গরুর খামার এবং নবাবগঞ্জে ২২ একর সম্পত্তির ওপর মৎস্য খামার করেছেন।
দুদকে দাখিল করা অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, কামরুজ্জামান আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি করেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। তার বিরুদ্ধে শত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
অভিযোগে আরো বলা হয়, মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ের আড়ালে দুর্নীতির কারণে ২০২২ সালের শেষের দিকে কামরুজ্জামানকে ধরে নিয়ে যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা শাখা। তার প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দেয়। পরে পল্টন থানার তৎকালীন সহকারী কমিশনার গোলাম রোহানীর সহযোগিতায় মামলা ছাড়াই মুক্তি পান তিনি।
দুদকে অভিযোগ দায়েরকারী মুজিবুর রহমান জানান, শুধু বিদেশে অর্থপাচার নয়, পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম রোহানীর সাথে সখ্য কাজে লাগিয়ে কামরুজ্জামান বহু মানুষকে হয়রানি করেছেন। তাকে ও স্ত্রীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যান। বড় ধরনের ক্ষতি করার ভয় দেখিয়ে ব্লাঙ্ক চেকে তার স্বাক্ষর এবং ব্লাঙ্ক স্ট্যাম্পে স্ত্রীর স্বাক্ষর নেন। পরে সেই চেকের পাতায় আট কোটি টাকা বসিয়ে টাকা চেয়ে আইনি নোটিশ দিয়ে হয়রানি করছেন। মুজিবুর রহমান দাবি করেন, কামরুজ্জামান আওয়ামী লীগ সরকারের একজন সুবিধাভোগী; যে কারণে জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন দমন করতে তিনি অর্থের জোগান দিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে কামরুজ্জামান ফোনে দাবি করেন, তিনি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন অনেক আগে। কখনো ওই ব্যবসা করেননি। আর আওয়ামী লীগ নেতা বা পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কোনো সখ্যতার ছিল না। বিদেশে অর্থপাচারের সাথে জড়িত নন বলে দাবি করেন তিনি। সম্পদের বিষয়ে তিনি জানান, স্বাধীন ট্রেড করপোরেশন নামে তার একটি কাপড়ের দোকান আছে ইসলামপুরে। শান্তিনগরে দু’টি ফ্ল্যাট এবং গ্রামে গরুর খামার আছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা