ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল ঢাবি
- ঢাবি প্রতিনিধি
- ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১২
চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার প্রতিবাদ এবং ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার দুপুরে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) এর সাবেক নেতা ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করায় চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় সনাতনী জাগরণী জোটের নেতা-কর্মীদের। এ সময় উগ্রবাদী সমর্থকরা চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই হত্যাকাণ্ডে ইসকনের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। ঘটনার পর পরই জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তুমুল প্রতিবাদ শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের গায়েবানা জানাজা ও বিক্ষোভ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জুলাই অভ্যুত্থানের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শোক ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে। এ ছাড়া গতকাল সারা দেশে বিভাগীয় শহরে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
ঢাবিতে জানাজা ও প্রতিবাদ মিছিল
শহীদ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের গায়েবানা জানাজা ও প্রতিবাদ মিছিল করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার রাতে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। জানাজার আয়োজন করে ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব লোহাগড়া-সাতকানিয়া। এ ছাড়া উক্ত গায়েবানা জানাজায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। তাদের সঙ্গে ইনকিলাব মঞ্চ, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। জানাজা শেষে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বরে যান। এ সময় ‘আমার সোনার বাংলায় ; উগ্রবাদের ঠাঁই নাই, জঙ্গি জঙ্গি, ইসকন জঙ্গি ; ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি সেøাগান দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি জানান। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। দাবি পূরণ না হলে সচিবালয় ঘেরাও করার ঘোষণাও দিয়েছে সংগঠনটি।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের নিন্দা
চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে ইসকনের সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ, তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমান কাল ধরে হিন্দু-মুসলিমসহ সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে এ দেশে বসবাস করে আসছে। তবে এই শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে দীর্ঘদিন ধরে। বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করার অপচেষ্টা এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পুনর্বাসন করতে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন ধারাবাহিকভাবে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ইসকন সন্ত্রাসীদের এই ন্যক্কারজনক হামলা শুধু একটি নিরপরাধ মানুষের জীবনই কেড়ে নেয়নি; বরং দেশের বিচারব্যবস্থা, আইনের শাসন এবং যুগ যুগ ধরে চলে আসা ধর্মীয় সহাবস্থানের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করারই একটি অপপ্রয়াস। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ইসকন কোনো ধর্মীয় সংগঠন নয়, তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাদের সব কর্মকাণ্ড দেশবিরোধী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেরই অংশ। আজকের নির্মম হত্যাকাণ্ড তার আরেকটি জঘন্য প্রমাণ।
আমরা এ ঘটনার সাথে জড়িত সব সন্ত্রাসীকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানাই।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের বিবৃতি
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেসকে (ইসকন) সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণাপূর্বক নিষিদ্ধ দাবি জানিয়েছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বন্ধনের এই ভূমিতে ইসকন দিনে-দিনে রাক্ষসের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। অথচ এই দেশের মানুষ প্রতিটি সঙ্কটে নাগরিক হিসেবে হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের পাশে দাঁড়াতে কখনো কুণ্ঠাবোধ করেনি । বিনিময়ে এই অকৃতজ্ঞ ও দেশদ্রোহী আচরণ প্রদর্শন করা শুরু করেছে ইসকন। এই সংগঠনকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আইনজীবী আলিফ হত্যার খুনিকে বিচারের আওতায় আনার সাথে সাথে এই সংগঠনের সব ধরনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হবে।
বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে বুয়েটের বিভিন্ন হল থেকে বুয়েট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এর পর সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে পলাশী-কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে এসে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হন। এর পর মিছিলটি আবারও ভিসি চত্বর-ফুলার রোড হয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে ফিরে যায়।এ সময় বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ইসকন নিষিদ্ধ ও আইনজীবী আলিফ হত্যার বিচারের দাবিতে বিভিন্ন সেøাগান দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশ
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শোক ও সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বেলা ২টার দিকে এ সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সম্প্রীতি বজায় রেখে আবহমানকাল থেকে একত্রে বসবাস করে আসছে। এই সম্প্রীতির বন্ধনকে নষ্ট করার জন্য বিভিন্ন মহল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের বাইরে বসে আওয়ামী লীগের পতিত নেতারা ষড়যন্ত্র করছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই চিন্ময় একজন রাষ্ট্রদ্রোহী। তিনি এ দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাকে আইন অনুযায়ী শাস্তি দিতে হবে। নানা মহল সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশের জনগণকে তাদের প্রতিহত করার আহ্বান জানাচ্ছি। ছাত্র-জনতা কেউ অপরাধীদের ছাড় দেবে না। যে সংগঠন বাংলাদেশের সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায় তাদেরকে এ দেশ থেকে বিদায় নিতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা