গাজায় যুদ্ধবিরতিতে প্রস্তুত হামাস
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১১
ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এবার একই ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সংগঠনটির এক শীর্ষ নেতা এএফপিকে বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রস্তুত হামাস। ওই শীর্ষ কর্মকর্তা একই সাথে ইসরাইল-হিজবুল্লাহর মধ্যকার যুদ্ধবিরতিকেও স্বাগত জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামাসের ওই শীর্ষ কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা মিসর, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছি যে, হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও বন্দী বিনিময়ের বিষয়ে একটি চুক্তি করতে আন্তরিকভাবে প্রস্তুত।’ তবে তিনি, অভিযোগ করেন- ইসরাইলই এই চুক্তি বাধাগ্রস্ত করছে।
লেবাননে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছিলেন যে, হিজবুল্লাহর সামরিক সমর্থন হারানোর বিষয়টি হামাসকে শান্তির জন্য সমঝোতায় আসতে চাপ দেবে। তবে হামাস দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধবিরতির পক্ষে থাকার দাবি করলেও তারা বন্দীদের নিয়ে ইসরাইলের দাবিগুলো মেনে নিতে অস্বীকার করেছে। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা বলছেন, গাজায় সেনা অবস্থানের বিষয়ে ইসরাইলের দাবি একটি বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে এবং উভয়পক্ষই অচলাবস্থার জন্য দায়ী।
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে লেবাননে ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। প্রাথমিকভাবে এ যুদ্ধবিরতি চলবে ৬০ দিন। এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরাইল জানায়, গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও তারা হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখবে। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, ‘এ যুদ্ধবিরতি ইসরাইলকে গাজায় ও ইরানের হুমকি মোকাবেলার দিকে মনোযোগ দিতে সাহায্য করবে এবং ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে আবার অস্ত্র-গোলাবারুদ ও রসদ সংগ্রহ করার সুযোগ দেবে।’ নেতানিয়াহু আরো বলেন, ‘হিজবুল্লাহ সংঘর্ষ থেকে সরে এলে হামাস একা পড়ে যাবে। আমরা তাদের ওপর আরো বেশি চাপ প্রয়োগ করব।’
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা হামাসকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করব, আমাদের সব বন্দীকে ঘরে ফিরিয়ে আনব। নিশ্চিত করব যে, গাজা আর ইসরাইলের জন্য হুমকি হবে না এবং আমরা উত্তরের বাসিন্দাদের নিরাপদে তাদের ঘরে ফিরিয়ে আনব।’
এ দিকে ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি গাজায় যুদ্ধবিরতি আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতির প্রসঙ্গ টেনে বাইডেন বলেন, ‘এ যুদ্ধবিরতি গাজার সঙ্ঘাত স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা চুক্তিটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে সব ধরনের সহায়তা দেবে।’ এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, লেবাননের যুদ্ধবিরতি গাজায় সঙ্ঘাত বন্ধ করতে ও বন্দীদের মুক্ত করতে একটি মাইলফলক হতে যাচ্ছে।
সহায়তায় প্রস্তুত তুরস্ক : গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধ করা এবং একটি স্থায়ী অস্ত্রবিরতি প্রতিষ্ঠায় তুরস্ক সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান। গতকাল বুধবার তুরস্কের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একেপি) পার্টির পার্লামেন্টারি গ্রুপ বৈঠকে তিনি এ কথা জানান। খবর আনাদোলু এজেন্সির।
গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলের হামলায় ৪৪ হাজার ২৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক লাখ চার হাজার ৭৪৬ জনের বেশি। হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। একেপি পার্টির পার্লামেন্টারি গ্রুপ বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, ‘ফিলিস্তিনসহ এ অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে, বিশেষ করে ইসরাইলের প্রতি আমরা প্রত্যাশা করছি যে, তারা তাদের দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে পালন করবে।’
তুরস্ক বারবার গাজায় চলমান সহিংসতা বন্ধ এবং মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছেন, তুরস্ক এ সঙ্কট সমাধানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক। এ পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরদারি এবং কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার দাবি আরো জোরালো হচ্ছে। এরদোগান ইসরাইল ও লেবাননের মধ্যে বুধবার সকালে কার্যকর হওয়া অস্ত্রবিরতি চুক্তিকেও স্বাগত জানান।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজাবাসীদের প্রতি সংহতি জানাতে এবং গাজায় অবরোধ প্রত্যাহারের দাবিতে ইসরাইলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট ও ড্রোন দিয়ে অব্যাহতভাবে হামলা চালায় হিজবুল্লাহ। এরপর ইসরাইল লেবাননের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বিমান হামলা চালানো শুরু করে এবং গত ১ অক্টোবর থেকে স্থল অভিযানও শুরু করে। লেবাননে চালানো এসব অভিযানে তিন হাজার ৮২৩ জনেরও বেশি লেবানিজ নিহত এবং ১৫ হাজার ৮৫৯ জনেরও বেশি নাগরিক আহত হয়েছেন। অন্য দিকে ইসররাইলি বাহিনীর প্রায় ৯০০ সেনা নিহত হন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা