বাধা টপকে ইসলামাবাদের মূল কেন্দ্রে ইমরান সমর্থকরা
সংঘর্ষে ৬ জন পুলিশসহ নিহত ৯- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৬
পুলিশ, রেঞ্জার্স ও সেনাবাহিনীর বাধা টপকে ইসলামাবাদের মূল কেন্দ্র ডি-চকে পৌঁছে গেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকরা। তবে ডি-চকে পৌঁছানোর পর তারা আবারো বাধার মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। এ ছাড়া ডি-চকের মূল স্থানের আগে কনটেইনার দিয়ে বাধা সৃষ্টি করে রাখা হয়েছিল। তবে সোমবার ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে পৌঁছে যায় পিটিআই নেতাকর্মীদের গাড়িবহর। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে দফায় দফায় তাদের সংঘর্ষ হয়। এ ছাড়া পাঞ্জাব প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয় বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
এসব ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য ও চার রেঞ্জার্স কর্মী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শতাধিক পুলিশসহ আহত হয়েছে বহু মানুষ। তা ছাড়া তিনজন কর্মী নিহত হওয়ার দাবি করেছে পিটিআই। গতকাল মঙ্গলবার কর্মকর্তারা এবং ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সংবাদমাধ্যম দ্য ডন জানিয়েছে, ডি-চকে ইমরান খানের সমর্থকদের লক্ষ্য করে ব্যাপক কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়েছে। এর আগে গত রোববার সারা দেশ থেকে ইসলামাবাদের উদ্দেশে রওনা দেন ইমরানের সমর্থকরা। তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুক্তি ও এই সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে।
এ ছাড়া ইমরানের সমর্থকদের আরেকটি বড় দাবি হলো সংবিধানের ২৬তম সংশোধনী বাতিল করতে হবে। যেটির মাধ্যমে মূলত দেশটির উচ্চ আদালতের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। ডি-চকে উপস্থিত ডনের সাংবাদিক জানিয়েছেন, তিনি ইমরানের কয়েক ডজন সমর্থককে কনটেইনার বেয়ে অপর পাশে যেতে দেখেছেন। ওই সময় একটি কনটেইনারের ওপর সেনাবাহিনীর সদস্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
জিয়ো নিউজের খবর অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংবিধানের ২৪৫ ধারা অনুযায়ী রাজধানী ইসলামাবাদে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। বিক্ষোভকারী ও বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে নিরাপত্তাবাহিনীকে কড়া নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এমনকি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনে বিক্ষোভকারীদের দেখামাত্র গুলি চালানোর মতো চরম পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
অপর সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবির নেতৃত্বাধীন বিশাল বহর ইসলামাবাদের জিরো পয়েন্টে এসে পৌঁছেছে। তারা সেখানে পৌঁছানোর পর তাদের লক্ষ্য করে বিপুল কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। অপর দিকে ইমরানের সমর্থকদের আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। সব বাধা দিয়েও ইমরানের সমর্থকদের আটকাতে না পারায় রাওয়ালপিন্ডি থেকে পুলিশের আরো এক হাজার সদস্যকে ডেকেছে স্থানীয় প্রশাসন। এ দিকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হামলায় নিজেদের তিন সদস্য নিহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ।
মানবাধিকার রক্ষার আহ্বান : এ দিকে পাকিস্তানে পিটিআই সমর্থকদের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে উভয় পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তান সরকারের প্রতি মানবাধিকার রক্ষার পাশাপাশি সংবিধান মেনে চলারও তাগিদ দিয়েছে ওয়াশিংটন। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমরা পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানাই এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে তাদের সংবিধানের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের পরামর্শ দেই। একই সাথে, বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের দাবি জানাতে এবং সহিংসতা পরিহারের আহ্বান জানান এ মার্কিন কর্মকর্তা।
ব্যাপক সংঘর্ষ : অন্য দিকে প্রাদেশিক পুলিশ প্রধান উসমান আনোয়ার জানিয়েছেন, সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। অন্তত ১১৯ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজন কর্মকর্তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া ২২টি পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। নিরাপত্তা সূত্রে জানা গেছে, শ্রীনগর মহাসড়কে কিছু দুষ্কৃতকারী রেঞ্জার্স কর্মীদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়েছে। এতে রেঞ্জার্স কর্মীসহ কয়েকজন হতাহত হয়েছে।
পিটিআই জানিয়েছে, মিছিলে তাদের অনেক কর্মীও আহত হয়েছেন। বিক্ষোভ থেকে পিটিআইয়ের পাঁচ পার্লামেন্ট সদস্যসহ প্রায় চার হাজার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরিস্থিতি অশান্ত করার যেকোনো চেষ্টা ও জঙ্গি তৎপরতা কঠোর হাতে দমন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাওয়ালপিন্ডিতে কনস্টেবল মুহাম্মদ মোবাশিরের জানাজার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি বলেছেন, পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। বর্তমান বিক্ষোভকে ‘চূড়ান্ত ডাক’ বলে অভিহিত করেছেন ইমরান খান। পিটিআই জানিয়েছে, এটি তার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত অনেকগুলোর মধ্যে একটি।
সরকার ইসলামাবাদের প্রধান সড়ক ও রাস্তা কনটেইনার দিয়ে বন্ধ করেছে এবং দাঙ্গা দমন সরঞ্জামে সজ্জিত পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী টহল দিচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে আন্তঃনগর পরিবহন ও টার্মিনালগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। নিষিদ্ধ করা হয়েছে সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও জমায়েত। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাওয়াজা মোহাম্মদ আসিফ জিয়ো নিউজ টিভিকে বলেছেন, পরিস্থিতি শান্ত করতে সরকার পিটিআই নেতাদের সাথে আলোচনার চেষ্টা করেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা