ফ্যাসিবাদীরা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্ঠির ষড়যন্ত্র করছে : তথ্য উপদেষ্টা

তথ্য উপদেষ্টা মো: নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিতে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। দেশের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
গতকাল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নেতাদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, ডিআরইউ সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম শামীম, সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন, যুগ্ম-সম্পাদক মিজান চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক জাকির হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ, নারীবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদা ডলি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকতাকে নতুন করে গড়ে তোলার আকাক্সক্ষা প্রকাশ করে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, সরকার গণমাধ্যমকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। এই স্বাধীনতাকে কাজে লাগিয়ে সাংবাদিকতা কিভাবে গড়ে উঠবে, এ বিষয়টি বাংলাদেশের সাংবাদিকরা নির্ধারণ করবেন। সরকার গণমাধ্যমের যেকোনো ধরনের গঠনমূলক সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, গঠনমূলক সমালোচনা সরকারের জন্য উপকারী। এর মাধ্যমে সরকার নিজেকে শুধরে নিতে পারে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, গণমাধ্যমকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এ কমিশন গণমাধ্যমের অংশীজনের সাথে আলোচনা করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবে। কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার গণমাধ্যম সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
পত্রিকা অফিসে ভাঙচুর হলে সরকার সেটি আইনগতভাবে দেখবে, কিন্তু ‘এটি কেবল আইনি বিষয় না’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, জনগণ যেভাবে প্রত্যাশা করে সেভাবে গণমাধ্যমের সহায়তা পাচ্ছে না। বিগত সময়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নানান কারণে মানুষের অনেক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কেন মানুষ তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, এটি স্পষ্ট করা সাংবাদিকদেরও ওই গণমাধ্যমের দায়িত্ব।

সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর অফিসের সামনে হামলা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, গতকাল বলেছি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সে জায়গা থেকে সরকার ভূমিকা পালন করবে। পত্রিকা অফিসে ভাঙচুর হলে, সেটা অবশ্যই আমরা আইনগতভাবে দেখব।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমে হামলা হলে আমরা মেনে নেব না, অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। পাশাপাশি জনগণ সভা-সমাবেশ করলে শান্তিপূর্ণভাবে করবে, সে আহ্বান জানিয়েছি। একইসাথে পুলিশ যাতে দায়িত্বশীল আচরণ করে, শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সমাবেশ করতে দেয়, আমরা সেই নির্দেশনা দিয়েছি।
গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করছে, তারাই ভালো বলতে পারবেন। তাদের কাছে জিজ্ঞেস করেন। তারা কেন বিক্ষোভ করছে, এটা চিহ্নিত করা উচিত। এজন্য লাঠি পেটা করে সরিয়ে দেয়া উচিত নয়। তাদের সাথে কথা বললেই স্পষ্ট হয়ে যায়।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, একটা গুজব অনেক বড় ঘটনার জন্ম দিতে পারে। সেই জায়গায় গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের কাছ থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। এই সরকার কোনো দলীয় সরকার নয়, আমাদের নিজস্ব কোনো কর্মীবাহিনী বা গণমাধ্যম নেই, যারা বর্তমান সরকারের কার্যক্রম প্রচার করবে। সেজন্য আমরা গণমাধ্যমের কাছে সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, গত ১৬ বছরে যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল, তা রাতারাতি বদল করে স্থিতিশীল জায়গায় নিয়ে আসা কঠিন। আমরা মেট্রোপলিটন পুলিশকে গ্রামে বদলি করেছি, মফস্বলের পুলিশ ঢাকায় আনা হয়েছে। তাদের একটু সময় লাগবে গুছিয়ে উঠতে। এছাড়া আমরা পুলিশ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে চাচ্ছি। পুলিশ সংস্কার কমিশন আছে, তারা সুপারিশ করছে। সবাইকে বুঝতে হবে আমরা বিপ্লব-পরবর্তী অবস্থার মধ্যে আছি।
তিনি বলেন, যেকোনো দেশে বিপ্লব পরবর্তী ও গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে জনগণের ভেতরে যে নানা ধরনের শক্তির অংশ থাকে, তাদের অনেক ভূমিকা রাখতে হয়। পুলিশ অবশ্যই কঠোর হবে। তবে নিপীড়কের ভূমিকায় যেন না যায় বা আমরা একটা পুলিশি রাষ্ট্র যেভাবে দেখেছি সেটা আমরা প্রত্যাশা করি না। আমরা উভয় সঙ্কটের মধ্যে আছি। আমরা আশা করছি সে জায়গা থেকে আমরা উত্তরণ ঘটাতে পারব। আমরা কখনোই চাই না পুলিশ জনগণের বিপক্ষে, ছাত্রদের বিপক্ষে দাঁড়াক, আন্দোলনে গুলি চালাক।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্র নিহতের বিষয়ে বিগত সরকারের দলীয় কর্মীরা ব্যাপকভাবে অপপ্রচার করেছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের লুটপাট করা টাকা এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে। দেশে ও দেশের বাইরে এই সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের গুজব ছাড়াচ্ছে।