অভিজিত মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের স্বার্থে ৩ জন বরখাস্ত
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৩
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিত হাওলাদারের মৃত্যুর ঘটনায় ভুল চিকিৎসার অভিযোগে যে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে তার ব্যাখ্যা দিয়েছে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ। ওই ঘটনায় হাসপাতালের চিকিৎসকসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শিক্ষার্থী ও রোগীর আত্মীয়দের চাহিদামতো তদন্ত কমিটি গঠন করেও ছাত্রপ্রতিনিধিদের কারণে তদন্ত করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কোনোরূপ গাফিলতি ও সদিচ্ছার অভাব না থাকলেও ভুল চিকিৎসা বা বিলম্বিত ব্যবস্থা গ্রহণের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ন্যাশনাল হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক প্রফেসর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ডা: ইফফাতআরা বলেন, ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ফলে ন্যাশনাল হাসপাতালের প্রায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক (প্রশাসন) ডা: মোহাম্মদ রেজাউল হক জানান যে, এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে ১১ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্তের স্বার্থে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) একজন চিকিৎসক ও দুজন নার্সকে বরখাস্ত করা হয়েছে। যাদের বরখাস্ত করা হয়েছে তারা হলেন, আইসিইউ’র মেডিক্যাল অফিসার মহিমা আক্তার শিফা এবং সিনিয়র স্টাফ নার্স আসমা নিলা ও সুজন কুমার সাহা।
ডা: রেজাউল বলেন, চিকিৎসকের অবহেলায় রোগী মারা গেছেন-এই অভিযোগ করে হাসপাতালের ওপর মিথ্যা দায়ভার চাপানো হচ্ছে। তারপরেও যথার্থ বিষয় উদঘাটনের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত— চলমান। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি রিপোর্ট প্রকাশ করলে জানা যাবে হাসপাতালের কোনো দুর্বলতা ছিল কি না। চিকিৎসকের গাফিলতি ছিল কি না, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে কমিটিতে অভিযোগকারীদের পক্ষ থেকে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককেও চাওয়া হয়েছে।’
কলেজ শিক্ষার্থী অভিজিত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রতিদিনের ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে ডা: ইফফাত আরা বলেন, গত ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে মারা যায় শিক্ষার্থী অভিজিত। পরদিন ১৯ নভেম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে। ২০ নভেম্বর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল ঘেরাও কর্মসূচি দেয়। পরবর্তী সময় তারা আলোচনায় বসে ৯টি দাবি উত্থাপন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন অভিজিতের পরিবার, সহপাঠী, শিক্ষক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ আলোচনায় বসে। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
হাসপাতালের পরিচালক আরো জানান, এই কমিটিতে শিক্ষার্থীদের মনোনীত একজন ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞের নাম দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। যদিও তারা সেটি দেয়নি। ২৩ নভেম্বর তদন্ত কমিটির প্রথম মিটিং হয়। সেখানে দাবি ও অভিযোগের বিষয় আলোচনা করে সবাই সম্মতি দেন। তবে ২৪ নভেম্বর দুপুরে এক থেকে দেড় হাজার শিক্ষার্থী ন্যাশনাল হাসপাতালের প্রাশসনিক কার্যালয়, বহিঃবিভাগ, জরুরি বিভাগ, ডেন্টাল বিভাগ, প্যাথলজি বিভাগে ভাঙচুর চালান। পাশাপাশি হাসপাতালের অভ্যন্তরে দেশী-বিদেশী শিক্ষার্থী, সাধারণ রোগী ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের ওপর হামলা করা হয়। এ সময় ক্যাশ কাউন্টার থেকে নগদ টাকা লুট করে নেয়া হয়। হাসপাতালের আর্থিক সেবায় নিয়োজিত পূবালী ব্যাংকের শাখাতেও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। বর্বরোচিত হামলায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারো সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও হামলার ঘটনায় ব্যাপক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং দেশী-বিদেশী শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ডা: ইফফাত আরা বলেন, একজন চিকিৎসকের কাছে তার রোগীর সেবা প্রার্থনার সমান। অভিজিতের ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন কিন্তু এত কিছুর পরও চিকিৎসকদের কপালে জুটেছে মিথ্যা অপবাদ যা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। তিনি বলেন, বিগত কয়েক দিনের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খবর থেকে প্রতীয়মান হয়, কোনো কোনো কুচক্রী মহল হাসপাতালের ওপর মিথ্যা দায়-ভার চাপানোর চেষ্টায় লিপ্ত যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। রোগীর মৃত্যু হলেই ভুল চিকিৎসা, দায়িত্বে অবহেলা বলে চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতদের লাঞ্ছিত করা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
ডা: ইফফাত আরা বলেন, এমতাবস্থায় হাসপাতালের রোগীর চিকিৎসা সেবার সুস্থ পরিবেশ বিনষ্ট করা, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জিম্মি করে হাসপাতাল ও কলেজভবনে ব্যাপক ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করা, অসুস্থ রোগীদের মাঝে ভীতি সঞ্চারের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ঘটনার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা: সামসুর রহমান, উপাধ্যক্ষ ডা: মো: আফজাল হোসেন, উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডা: মোহাম্মদ রেজাউল হকসহ বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা