প্রাথমিক শিক্ষা মনিটরিংয়ে পুনর্জীবিত হচ্ছে পরিবীক্ষণ ইউনিট
- শাহেদ মতিউর রহমান
- ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৩
- শিশু শিক্ষা ও ঝরে পড়ার হার নির্ণয়ে অসামঞ্জস্য তথ্য
- সরকারি ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলেও চলবে তদারকি
দীর্ঘ তিন দশক পর পুনর্জীবিত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিট। এই ইউনিট মূলত বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা শনাক্ত ও তা সমাধানে কাজ করবে। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এবং বাধ্যতামূলকভাবে সব শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষার সমান সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৯২ সালে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিট/কোষটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের অধীনে কাজ শুরু করে। এ ইউনিটের সব কার্যক্রমের অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ ছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। দীর্ঘদিন ধরে ইউনিটটি মন্ত্রণালয়ে স্থানাভাবের কারণে শিক্ষা ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়ন ও সুযোগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে সবার জন্য মানসম্মত ও একীভূত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে এই ইউনিট বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে মানসম্পন্ন শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান বিনির্মাণ, ডিজিটাল তথ্য ব্যবস্থাপনা প্রসারের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে তথ্য ও তথ্যনির্ভর পরিকল্পনা নিশ্চিত করবে তারা। এ ছাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (কিন্ডারগার্টেন বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম) অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম এবং অনুমতি ও স্বীকৃতির শর্তাদি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পালিত হচ্ছে কিনা তা যাচাই করা, দেশে শিশু জরিপ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় জরিপসহ নানা ধরনের বিশ্লেষণধর্মী তথ্যের জন্য জনমত জরিপ করে বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করা ও সব স্টেকহোল্ডার সংস্থাকে বিতরণ করতেও কাজ করবে এই ইউনিট।
সূত্র আরো জানায়, জাতীয় পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান সংরক্ষণ, সঙ্কলন, সরবরাহ ও সামাজিক প্রচার প্রাথমিক শিক্ষাতথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা পরিকল্পনা ও মূলনীতি প্রণয়নকারী সংস্থাগুলোর হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতেও ভূমিকা রাখবে এই ইউনিট। একইসাথে ব্যানবেইসের আদলে প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে একটি শিক্ষাবিষয়ক জাতীয় ডকুমেন্টেশন সেন্টার পরিচালনা, শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি কার্যক্রম নিবিড়ভাবে মনিটরিং, বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল কার্যক্রম তদারকি করা, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের জারিকৃত প্রশাসনিক আদেশ ও নির্দেশগুলো সংশ্লিষ্ট দফতর/প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে পালন করছে কিনা তা যাচাই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা মাফিক পরিদর্শন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ/নির্দেশনা প্রদান, ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিদ্যালয় পরিদর্শন কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে যেকোনো দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত থাকবে এই ইউনিট। ইউনিটের সাথে কর্মরত এমন কয়েকজন নয়া দিগন্তকে জানান দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত থাকা এই ইউনিট শক্তিশালী করার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার পরিমাণগত এবং গুণগতমান যেমন বাড়বে তেমনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝরে পড়ার হার কমবে এবং প্রাথমিক শিক্ষাচক্র সমাপনের হারও বাড়বে।
একইসাথে প্রতি বছর সারা দেশের ০+ হতে ১০+ বছরের শিশুর সংখ্যা নির্ধারণ করা এবং প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শিশুর সংখ্যা আলাদা করে বার্ষিক পরিকল্পনাও প্রণয়ন করা সহজ হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের পুষ্টির ঘাটতি দূর হবে এবং শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মনোযোগী করা যাবে। অন্য দিকে প্রাথমিক শিক্ষাতথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা পরিকল্পনা ও মূলনীতি প্রণয়নকারী সংস্থাগুলোর হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে, মাঠ পর্যায়ের অফিসের সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি পাঠদানসহ সার্বিক কার্যক্রম নজরদারির আওতায় আনা যাবে।
ইউনিটকে কিভাবে পুনর্গঠন করে আরো শক্তিশালী করা যায় সে বিষয়ে গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষাকে মনিটরিং করতে এবং এই সেক্টরের প্রতিটি কাজকে কিভাবে আরো জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা যায় সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটকে পুনর্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি সভাও করেছি। গত সপ্তাহে এ সংক্রান্ত কাজের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক, মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিব, উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর একজন প্রতিনিধি এবং পরিবীক্ষণ ইউনিটের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই এই কমিটির সভা আহবান করে ইউনিটকে কিভাবে শক্তিশালী করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা