২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সরকারের পতন ঘটাতে পরিকল্পিত তাণ্ডব ফ্যাসিবাদীদের

-


সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে আবারো নাশকতার পাঁয়তারা করছে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিনা সুদে ঋণ দেয়ার মিথ্যা প্রলোভনে ঢাকায় জড়ো করা হয়েছিল গ্রামের সহজ-সরল হাজারো মানুষকে। অটোরিকশা চালকদের আন্দোলনে ঢুকে রাস্তা অবরোধ ভাঙচুরের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কলেজের সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে ঢুকে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট, মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। পুলিশের দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান সরকারের ক্ষতি করতে নানামুখী অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গোয়েন্দারা বলছে, পুরান ঢাকার ছাত্র আন্দোলনের বিষয়ে আগে থেকেই পুলিশকে রিপোর্ট দেয়া হয়েছিল। হয়তো থানা পুলিশ প্রথমে বিষয়টিকে হালকাভাবে নিয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বর্তমান সরকারকে উৎখাতের একটি মহাষড়যন্ত্রের অংশ। নিপুণ পরিকল্পনা ছাড়া একসাথে এতগুলো ঘটনা ঘটতে পারে না। প্রতিটি ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সক্ষমতা নিয়ে কঠোর হতে হবে।

সূত্র মতে, চিকিৎসকের গাফিলতিতে গত ১৮ নভেম্বর মাহাবুবুর রহমান নামে মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিত হালদারের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগে ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি সেখানেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে তৃতীয় পক্ষ চলে আসায় শুরু হয় নানামুখী ষড়যন্ত্র। দূর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করে বিদায়ী ফ্যাসিবাদ সরকারের দোসররা। বিষয়টি তখন আর ন্যাশনাল মেডিক্যাল ও মোল্লা কলেজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ছড়িয়ে পড়ে পুরান ঢাকার সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীর মধ্যেও । তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশে ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা দিয়ে সোমবার সংঘর্ষের দিন ঠিক করে। অপর দিকে ‘অহিংস গণ-অভ্যুত্থান’ নামক ভুঁইফোঁড় একটি সংগঠন এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা ঋণ দেয়ার কথা বলে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ ঢাকায় জড়ো করার চেষ্টা করে। তাদের টার্গেট ছিল গ্রামের সহজ-সরল মানুষ টাকার লোভে জড়ো হলে তাদের দিয়ে শাহবাগ ঘেরাও করা হবে। একই সাথে রোববার গভীর রাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও ট্রেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রদের তুমুল সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এই প্রত্যেকটি ঘটনা একই সূত্রে গাথা বলে মনে করছে গোয়েন্দারা।

গত ১৮ তারিখে হাসপাতালে ছাত্র মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গত রোববার (২৪ নভেম্বর) ব্যাপক সংঘর্ষের সৃষ্টি। ওই ঘটনার জবাব দিতে একই দিনে ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা করে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সকাল থেকে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হতে থাকেন। সেখান থেকে হেঁটে হাজারো শিক্ষার্থী ডেমরার মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের উদ্দেশে রওনা হয়। সেখানে পৌঁছার পর ব্যাপক তাণ্ডব চালায় তারা। মাইকিং করে কলেজটিতে এই ভাঙচুর চালানো হয়। পথেই তাদের বাধা দেয়া বা রাস্তা আটকাতে পুলিশ কিংবা অন্য কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর তেমন কোনো ভূমিকা লক্ষ করা যায়নি। প্রশ্ন উঠছে যে একদিন আগে এই ভাঙচুরের ঘোষণা দেয়া হলেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা কেন নেয়া হয়নি।
এ দিকে রোববার রাত থেকে ঋণের টাকা নিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক, মিনি ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে হাজার হাজার মানুষ ঢাকায় আসতে শুরু করে। বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে জনপ্রতি এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা ঋণ দেয়া হবে। এ জন্য শাহবাগে বিশাল সমাবেশে জড়ো হবে তারা। তবে তার আগেই পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা তাদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিতে থাকেন।

জানা যায়, অহিংস গণ-অভ্যুত্থান নামের সংগঠনটি সারা দেশের খেটে খাওয়া গরিব মানুষকে টার্গেট করে বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত এনে সেগুলো বিনা সুদে ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখায়। বাসে করে আসা লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের বেশির ভাগই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসেছে। বেশির ভাগই জানে না এখানে কী হবে। শুধু জানে শাহবাগে এলে লোন পাওয়া যাবে। লোক ফেরাতে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আজিজুল হক বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা আর পুলিশ প্রশাসন কী করে? আমরা শুনেছি, ঢাকা শহরে গত রাত থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ৮০০ বাস ঢুকেছে। শাহবাগে আন্দোলন করার জন্য বাস ভর্তি লোক নিয়ে আসা হচ্ছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের টিএসসি থেকেই শতাধিক গাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছি।
পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন রোববার গভীর রাতে বলেন, অহিংস গণ-অভ্যুত্থান নামের সংগঠনটি আমাদের কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ লাখ লোকের সমাবেশ করার জন্য অনুমতিও চেয়েছিল। তবে তাদের অনুমতি দেয়া হয়নি। কারণ তাদের অতীত রেকর্ড ভালো নয়। গাইবান্ধা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ সারা দেশ থেকে তারা লোকজন নিয়ে এসেছে। আমরা রাত ১২টার পর থেকেই বাসের মানুষকে বুঝিয়ে ফেরত পাঠাচ্ছি। কিন্তু একের পর এক বাস আসছিল। আমরা সতর্ক অবস্থানে থেকে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকও করেছি। রোববার রাত ১২টা থেকে পরদিন সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত শাহবাগ, টিএসসি, চানখারপুল, আনন্দবাজারসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে বাসগুলো ফেরত পাঠানো হয়। যাত্রীদের বোঝানো হয়, এখানে টাকার কোনো ঘটনা নেই। প্রতারণা করে আপনাদের ঢাকায় আনা হয়েছে। একইভাবে পলিটেকনিক ও বুটেক্স শিক্ষার্থীদের মধ্যেও সংঘর্ষ ছড়িয়ে দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের পরিকল্পনার গোয়েন্দা রিপোর্ট আমরা আগেই পেয়েছিলাম, যা কয়েক দিন আগেই পুলিশের সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়। কিন্তু তারা হয়তো গুরুত্ব দেয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে ডিএমপির অ্যাডিশনাল কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ইসরাইল হাওলাদারকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করে লাইন কেটে দেন। তবে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ঘোষণার পর থেকে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থলে কাজ করছে।


আরো সংবাদ



premium cement