২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

গ্রামীণ জনপদে জেঁকে বসছে শীত দেখা দিচ্ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ

-


দেশের বিভিন্ন জেলায় জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। গ্রামীণ জনপদে রাতে বৈদ্যুতিক পাখা বন্ধ করে শীতের গরম কাপড় বের করতে শুরু করেছে মানুষ। উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়সহ অন্য জেলাগুলোতে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ঘনকুয়াশায় আচ্ছাদিত হয়ে পড়ছে বিভিন্ন এলাকা।
এদিকে শীত শুরু হতে না হতেই দেখা দিচ্ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ। হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়ার রোগী বাড়ছে।
পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, হালকা কুয়াশায় ঢেকে গেছে প্রকৃতি ভোরের শুভ্র শিশির টলমল করছে। হিমালয়ের কাছাকাছি জেলা পঞ্চগড়ে বইতে শুরু করেছে হিমেল হাওয়ায়। জেলায় সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। দিনে তাপমাত্রা সহনীয় থাকলেও রাতের বেলা শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। গতকাল সোমবার ভোর ৬টায় পঞ্চগড় জেলায় তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি ৫ সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বলে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করেন। শীতজনিত রোগের প্রকোপও দেখা দিচ্ছে।

পঞ্চগড় জেলার জগদল বাজারের দক্ষিণ গোয়ালপাড়ার কামরুন নাহার বলেন, ভোর থেকে দেখা যায় কুয়াশা। হিম শীতল বাতাস দ্রুত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার পর থেকেই শীতের পরশ অনুভূত হচ্ছে। মাঝরাত থেকে ভোর পর্যন্ত গায়ে কাঁথা, কম্বল নিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে। পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্গা কাছাকাছি হওয়ায় অন্যান্য জেলার তুলনায় প্রতিবছর আগাম শীত আসে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এখানে শীতের প্রভাব বেশি থাকে। শীতকে কেন্দ্র করে সবাই তোড় জোড় শুরু করেছে। এ দিকে শীতকে কেন্দ্র করে লেফ তোষকের দোকানে ভিড় বৃদ্ধি পেয়েছে। শীত আসার আগেই শীতের কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। শীতের কারণে গাঁও-গ্রামে শীতজনিত রোগ ব্যাধি দেখা দিয়েছে। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শিশু ও বয়স্করা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পঞ্চগড় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় বলেন, কাঞ্চনজঙ্গা কাছাকাছি হওয়ায় হিম শীতল বাতাস বেশি থাকে। গতকাল সোমবার ভোর ৬টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৩ ডিগ্রি ৫ সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সামনে আরো ঠাণ্ডা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, অগ্রহায়ণ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী হচ্ছে চায়ের রাজ্যখ্যাত দেশের অন্যতম শীতলতম স্থান ও পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। সূর্যাস্তের আগ থেকেই শুরু হয়ে সূর্যোদয়ের পরও কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে এখানকার চারপাশ। পাশাপাশি হিমেল বাতাস বইছে সর্বত্র। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্যের তাপ বাড়লেও শীতের তীব্রতা ও কনকনে বাতাসের কাছে হার মানছে সেই তাপ।

গতকাল ভোর ৬টায় শ্রীমঙ্গলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত রোববার ও শনিবারে শ্রীমঙ্গলের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শ্রীমঙ্গলের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র সহকারী মো: আনিসুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে শ্রীমঙ্গলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আকাশের মেঘ কেটে গেলে এখানে শীতের তীব্রতা আরো বাড়বে। তখন জেঁকে বসবে শীত।’
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র আরো জানায়, আগামী তিন দিন অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। শেষরাত থেকে ভোর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। তবে রাত ও দিনে তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
অপর দিকে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেখা যায় সারা দেশের মধ্যে সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রাজশাহী বিভাগের নওগঁাঁর বদলগাছিতে রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া রংপুর বিভাগের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে হঠাৎ ঠাণ্ডা বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষসহ চা বাগান এলাকার বাসিন্দাদের। এ ছাড়া তাপমাত্রা নামার সাথে সাথে বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ। বিশেষ করে সর্দি, কাশি, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। একইসাথে জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে।

ফুলবাড়ীতে শীতের আগমনে কদর বেড়েছে লেপ- তোশকের বেড়েছে কারিগরদের ব্যস্ততা
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় শীতের আগমনীবার্তা আসার সাথে সাথে ধুনানকারীদের তুলা ছাঁটাই ও লেপ তৈরির কাজে বেড়েছে কর্মচাঞ্চল্যতা। দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন লেপ-তোশক কারিগরেরা। শীত যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে লেপ-তোশকের কদর। সেইসাথে বেড়েছে কারিগরদের কদর।
কেউ কেউ পুরনো লেপ ভেঙে নতুন করে বানিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ নতুন তুলা দিয়ে তৈরি করে নিচ্ছে লেপ-তোশক ও বালিশ। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে লেপ-তোশকের দোকানগুলোতে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। তবে বর্তমানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মতোই বেড়েছে লেপ-তোশক তৈরির খরচ। তাই এ বছর আগের চেয়েও বেশি খরচ পড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সরজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, পৌর শহরের দোকানগুলোতে লেপ-তোশক, হরেকরকমের তুলাসহ ব্যবসায়ীরা দোকান সাজিয়ে বিক্রি শুরু করেছেন শীতের গরম কাপড়। গত কয়েক সপ্তাহ থেকেই এ উপজেলায় কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা, এতে শীত অনুভূত হচ্ছে। বিশেষ করে ভোর বেলায় কুয়াশায় ঢেকে যায় সবুজ মাঠ ও গাছপালা। শীত মোকাবেলায় মানুষ আগে ভাগেই লেপ-তোশক তৈরি করা শুরু করেছেন।

লেপ তৈরি করতে আসা সামিউ ইসলাম জানান, প্রতিবছর প্রচণ্ড শীত পড়ে, তাই আগেভাগেই শীতের জন্য লেপ বানিয়ে নিচ্ছি। জোহরা বেগম নামের এক গৃহিণী জানান, কিছুদিন আগে তার মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তাই মেয়ের জন্য লেপ-তোশক বানাতে এসেছেন তিনি।
কারিগর সুজন ও রাজু জানান, আমরা একটি তোশক, লেপ তৈরি করতে ২ শ’ থেকে ৩ শ’ টাকা মজুরি নেই। সময় লাগে প্রায় ২ ঘণ্টা। সবকিছুর দাম বেশি তাই খুব একটা পোষানো যায় না।
পৌর শহরের তুলাপট্টির ব্যবসায়ী মুরাদ হোসেনসহ অন্য ব্যবসায়ীরা জানান, দিন দিন ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে, যত বেশি শীত পড়বে তত ক্রেতাও বাড়বে। পুরো বছরের চেয়ে শীতের এ তিন মাস বেচাকেনা একটু বেশিই হয়। বাকি সময় কাজের চাপ কম থাকে।
বাসস জানায়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রার সামান্য কমতে পারে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শেষরাত থেকে ভোর পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বিষবীয় ভারত সাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বিরাজমান রয়েছে। এটি আরো ঘনীভূত হতে পারে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। গতকাল রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ৩১ দশমিক ১ ডিগ্রি এবং আজ সর্বনি¤œ রাজশাহীর বদলগাছীতে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঢাকায় আজ সকালে বাতাসের গতিবেগ ছিল উত্তর/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬-১২ কিলোমিটার। আজ ভোর ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৬৪ শতাংশ।
ঢাকায় আজ সূর্যাস্ত বিকেল ৫টা ১১ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৬টা ২১ মিনিটে।
কাঁঠালিয়া (ঝালকাঠি) সংবাদদাতা জানান, ধীরে ধীরে জেঁকে বসেছে শীত। আর এ শীতের আগমনের শুরু থেকেই ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলা সদরের বাজারে লেপ-তোশক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। শীত মৌসুমে কারিগররা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন লেপ-তোশক বানানোর কাজে। ক্রেতাদের আনাগোনায় জমজমাট হয়ে উঠেছে, লেপ-তোশকের দোকানগুলো। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। এ দিকে শীত শুরু হতে না হতেই ঠাণ্ডাজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। সর্দি, কাশি, জ্বর ও নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এ বছর তুলার মূল্য বৃদ্ধির কারণে লেপ-তোশকের দাম বৃদ্ধি পেলেও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পায়নি। লেপ-তোশকের দাম বৃদ্ধি পেলেও তাদের মজুরি একই রয়েছে। দিনে ২ থেকে ৩টা লেপ বা তোশক বানিয়ে তারা ৫ শ’ থেকে ৭ শ’ টাকা আয় করেন। এ কাজের জন্য বছরে প্রায় নয় মাস বসে থাকতে হলেও তারা অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকে; অনেকেই আবার ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement