নির্ধারিত সময়ে জামানতের টাকা জমা না দিলে ২৮ রিক্রুটিং এজেন্সির অনুমোদন বাতিল হবে
- মনির হোসেন
- ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
- বিদেশে নারীকর্মী প্রেরণে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন
- অফিসে একজন নারীকর্মী নিয়োগ বাধ্যতামূলক
২৮ রিক্রুটিং এজেন্সিকে বিদেশে নারীকর্মী পাঠাতে জামানতের টাকা জমা দেয়ার জন্য ৩০ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এই সময়ের মধ্যে জামানত দিতে ব্যর্থ হলে কোনরূপ নোটিশ ছাড়াই অনুমোদন বাতিল হয়ে যাবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় (মনিটরিং শাখা) থেকে সম্প্রতি নারী গৃহকর্মী পাঠানোর অনুমোদন দেয়া সংক্রান্ত চিঠিতে এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়।
কাকরাইলের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে ২৮টি রিক্রুটিং এজেন্সির নাম ও একাধিক শর্ত উল্লেখ করে বলা হয়, বিদেশে বাংলাদেশী নারী গৃহকর্মী পাঠানোর লক্ষ্য লাইসেন্সধারী রিক্রুটিং এজেন্সির আবেদন শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দেয়া হলো।
অনুমোদন পাওয়া রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো হচ্ছে, মের্সাস মোস্তাফিজ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, নাঙ্গলকোর্ট ওভারসিস লি:, বিটিএস ওভারসিস লিমিটেড, মেসার্স সাঙ্গু ওভারসিস, মেসার্স মাদার লাভ এয়ার ট্রাভেলস, মেসার্স অ্যাকচুয়াল ট্রেড লিমিটেড, মেসার্স আফনান এয়ার সার্ভিস লিমিটেড, মেসার্স আল ওয়াদিয়া ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স শিমুল এয়ার ওভারসিস লিমিটেড, মেসার্স এফ এন এম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল লি:, মেসার্স অর্পি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, আইজা ওভারসিস লিমিটেড, মেসার্স এ আর কে ট্রাভেলস, এনি লাইন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, অনন্য অপূর্ব রিক্রুটিং এজেন্সি, মেসার্স এবিডি এয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, মেসার্স এম এস পি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, লিংকিং ওভারসীস লিমিটেড, মেসার্স এস-৩ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স শাহীর ওভারসিস বিডি দি নুরতাজ ওভারসিস, মেসার্স জম্মাদার অ্যান্ড সৈয়দ ওভারসিজ, মেসার্স লিজেন্ড ওভারসিস লি:, মেসার্স এস জিশান ওভারসিজ, মেসার্স আজ জাহারা ইন্টারন্যাশনাল, আল ফাইহান ওভারসিস সার্ভিসেস, মেসার্স দি জান্নাত ইন্টারন্যাশনাল প্রা: লি: এবং মেসার্স ওপেন স্কাই ইন্টারন্যাশনাল।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব রাশিদা আক্তার স্বাক্ষরিত শর্তাবলিতে বলা হয়েছে, অনুমতি পাওয়া প্রত্যেক রিক্রুটিং এজেন্সিকে নিরাপত্তা জামানত হিসেবে ১৫ লাখ টাকা এফডিআর আকারে মহাপরিচালক বিএমইটির অনুকূলে লিয়েনমার্ক করে জমা দিতে হবে, টাকা জমা দেয়ার পরই সংশ্লিষ্ট এজেন্সি নারীশ্রমিক পাঠানোর কার্যক্রম শুরু করতে পারবে, রিক্রুটিং এজেন্সি কর্তৃক কোনো নারী কর্মীর কাছ থেকে অভিবাসন ব্যয় বাবদ কোনো টাকা নেবে না উল্লেখ করে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা দেয়া ছাড়াও অনুমোদিত এজেন্সিকে অবশ্যই নিজ কার্যালয়ে কমপক্ষে একজন নারী কর্মী নিয়োগ দিতে হবে বলে শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিঠিটি ইতোমধ্যে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর উপপরিচালক জোহরা মনসুর স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে প্রত্যেক রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা অংশীদারদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিদেশে নারীকর্মী প্রেরণে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র নিতে ভাষা শিক্ষা ও সঠিক ট্রেনিং নেয়ার সার্টিফিকেটসহ যেসব ডকুমেন্ট জমা দেয়ার নিয়ম রয়েছে তা অনেক সময় মানা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে বিএমইটির মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে মনিটরিং করার কথা থাকলেও সেটি করা হচ্ছে না। যার কারণে নানাভাবে ট্রেনিং ছাড়াই নারী কর্মীরা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। এরপর তারা বিদেশে গিয়ে গৃহকর্তার হাতে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোতে প্রতিদিন বিদেশগামী শ্রমিকদের বহির্গমন ছাড়পত্র নেয়াসহ প্রসেসিং করাচ্ছেন এমন একজন ব্যবসায়ী গত সপ্তাহে নয়া দিগন্তকে বলেন, টুকটাক অনিয়ম এখানে হচ্ছে। তবে জনশক্তি ব্যুরোর ডিজির সেদিকে তাকানোর সময় নেই। তার তো অনেক কাজ। আমরা যতটুকু দেখছি তিনি বহির্গমন শাখা নিয়ে তেমন মাথা ঘামান না। আমরা এমনটাই দেখছি অনেক দিন থেকে। বর্তমান ডিজি আওয়ামী লীগ আমলের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদের কাছের লোক, এটা এখানকার সবাই জানেন। তবে আগের ডিজি শহীদুল হকের চেয়ে তিনি অনেক ভালো। এখন ভেতরে আর কি কি হচ্ছে সে ব্যাপারে আমি বলতে পারব না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ব্যুরোর বহির্গমন শাখায় টুকটাক ছাড়পত্রের নামে অনিয়ম হচ্ছে। এর মধ্যে আমি প্রবাসী অ্যাপসের অফিসে ওয়ান স্টপ সার্ভিসে বিদেশ যাওয়া কর্মীদের ইন্টারভিউ করানোর নামে কিছু কর্মীর ছাড়পত্র দেয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম হয় প্রতিদিন। আর আলবেনিয়াগামী কর্মীর বইয়ে কিছু কাজ হচ্ছে। তবে রেট বেশি।
এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফরের বক্তব্য নিতে তার দফতরে গেলে তার পিএস সহকারী পরিচালক ফখরুল আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, স্যার কিছুক্ষণ আগে মিনিস্ট্রিতে একটা মিটিং করতে চলে গেছেন। এরপর জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক (বহির্গমন) মামুন সরদারের মোবাইলে সৌদি আরব গিয়ে অনেক নারী পুরুষ কর্মী আকামাসহ নানা ধরনের সমস্যার কথা উল্লেখ করে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
অভিবাসন বিশ্লেষকদের অভিমত, বিদেশগামী নারী এবং পুরুষ কর্মীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই ভাষা প্রশিক্ষণ এবং উপস্থিত থেকে সার্টিফিকেট নেয়া বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি মনিটরিং করার বিকল্প নেই। একই সাথে অনিয়মের মাধ্যমে যাতে অতীতের ন্যায় কোনোভাবে বহির্গমন ছাড়পত্র নিতে না পারে সে ব্যাপারে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি করতে হবে। এটি না করতে পারলে এর ফল বিদেশে গিয়ে ভোগ করতে হবে শ্রমিকদের। উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে মোট সাত লাখের মতো কর্মী বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা