২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নেতানিয়াহুর বৈশ্বিক চলাচল সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে

-

- নেতানিয়াহুকে গ্রেফতারে প্রস্তুত ইউরোপের ৭ দেশ
- ব্রিটেনে গেলে গ্রেফতারের ইঙ্গিত ডাউনিং স্ট্রিটের

গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় তাদের বৈশ্বিক চলাচলের সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। ইসরাইল আইসিসির এখতিয়ার স্বীকার না করলেও এবং নেতানিয়াহু ও গ্যালান্ট আত্মসমর্পণ করবেন না বলে জানিয়েছেন। খবর : বিবিসি, আলজাজিরা ও আরটি।
আইসিসির প্রতিষ্ঠাতা চুক্তি রোম সংবিধির আওতায় ১২৪টি দেশ রয়েছে। আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করতে এসব দেশ বাধ্য। ফলে নেতানিয়াহুকে গ্রেফতারের জন্য যে পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) তা আমলে নিয়ে তাকে গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাত সদস্যরাষ্ট্র। এই সদস্যরাষ্ট্রগুলো হলো নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, সুইডেন, বেলজিয়াম ও নরওয়ে।
অন্য দিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেন ভ্রমণে গেলে তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট। ডাউনিং স্ট্রিটের মুখপাত্র এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, সরকার ‘আইনি বাধ্যবাধকতা’ পূরণ করবে। বিবিসি জানায়, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের সদস্যদেশগুলোর মধ্যে আছে ব্রিটেন। চুক্তি অনুযায়ী দেশটির এ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করার আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহু ব্রিটেনে গেলে তিনি আটক হবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মুখপাত্র ‘অনুমানমূলক’ কোনো বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তিনি বলেন, ব্রিটিশ সরকার তাদের আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণ করবে।
গত মে মাসে নেতানিয়াহু, গ্যালান্ত ও গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফ, হামাসের তৎকালীন প্রধান ইসমাইল হানিয়া ও গাজার হামাসপ্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন আইসিসির কৌঁসুলি করিম খান। তার সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার নেতানিয়াহু, গ্যালান্ত ও মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালত। হানিয়া ও সিনওয়ার ইতোমধ্যে নিহত হওয়ায় তাদের এ তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এ দিকে আইসিসির এই পরোয়ানা জারি পশ্চিমা বিশ্বে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। কয়েকটি রাষ্ট্র জানিয়েছে তারা আদালতের পরোয়ানা মেনে নিয়ে নেতানিয়াহুকে গ্রেফতারের জন্য প্রস্তুত। অনেকে আবার নেতানিয়াহুর প্রতি সমর্থনও জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার পরোয়ানা জারির পর ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইদো ক্রসেত্তো এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমি মনে করি, নেতানিয়াহু ও গ্যালান্তের সাথে হামাসের সামরিক শাখার প্রধানকে এক লেভেলে বিচার করা আইসিসির একটি ভুল। তবে এই পরোয়ানা প্রত্যাহার কিংবা অকার্যকর হওয়ার আগে নেতানিয়াহু কিংবা গ্যালান্ত যদি ইতালি সফরে আসেন তাহলে বাধ্য হয়েই তাদের গ্রেফতার করতে হবে আমাদের।’

নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ভেল্ডক্যাম্প শুক্রবার দেশটির পার্লামেন্টে দেয়া এক বক্তব্যে বলেছেন, সরকার আইসিসির নির্দেশ মেনে চলা এবং যাদের ওপর পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ নয়- এমন যাবতীয় যোগাযোগ বন্ধ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিস্তোফি লেমোনি আইসিসির এই গ্রেফতারি পরোয়ানাকে ‘জটিল আইনি ইস্যু’ বলে মন্তব্য করেছেন। তবে নেতানিয়াহু ফ্রান্স সফরে এলে তাকে গ্রেফতার করা হবে কি না সে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
এ দিকে ব্রিটেনের ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট অ্যাক্ট ২০০১ অনুযায়ী, এ আদালত কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে একজন মন্ত্রী অনুরোধটি যথাযথ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে পাঠান। আইসিসির পরোয়ানা জারির বিষয়ে ওই বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা সন্তুষ্ট হলে তিনি তখন ব্রিটেনে আদেশটি কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র নিশ্চিত করে বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক আইনে যেসব বাধ্যবাধকতা রয়েছে সেগুলো সব সময়ই মেনে চলে সরকার।
এ প্রক্রিয়ায় কোনো মন্ত্রীকে নিয়োগ করা হবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি স্টারমারের মুখপাত্র। ব্রিটেনের অ্যাটর্নি জেনারেল লর্ড হারমারের কাছ থেকে কোনো আইনি পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে কিনা, সে প্রশ্নেরও কোনো জবাব দেননি তিনি। সাধারণত, ব্রিটেন গোটা বিশ্ব থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও প্রত্যর্পণের যেসব অনুরোধ আসে, সেগুলো কার্যকরের আগে প্রাথমিকভাবে যাচাইয়ের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ টিমের কাছে তা পাঠাতে হয়।
ব্রিটেনের আইসিসিবিষয়ক আইন অনুযায়ী, সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার কিংবা হস্তান্তর করা উচিত কিনা সে বিষয়ে আদালতই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে। আইসিসি গত বৃহস্পতিবার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ব্রিটিশ সরকার বলেছে, তারা আইসিসির স্বাধীনতায় শ্রদ্ধাশীল এবং গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য তারা তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement