জুলাই বিপ্লবের বীর বাবুকে নেয়া হলো থাইল্যান্ড
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৩
বাঁচারই কথা ছিল না মোহাম্মদ বাবুর (৩৬)। গণ-অভ্যত্থানে সাহসিকতার সাথে প্রতিবাদ করেছিলেন। সশস্ত্র নয়, এটা ছিল নিরস্ত্র প্রতিবাদ। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ওই প্রতিবাদ ছিল গুম, অপশাসন, নির্বিচারে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে। প্রতিবাদের ধরন ছিল নানাভাবে হাত নেড়ে নানা ধরনের সেøাগান উচ্চারণ করা। তখন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি নির্বিচারে রাস্তায় গুলি করে মানুষ মারছিল। তাতেও দমে যাননি মোহাম্মদ বাবু। কিন্তু হঠাৎ একটি গুলি বাবুর পেট চিড়ে খাদ্যনালী, মুত্রথলি, কোমরের হাড় ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়ে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় এত দিন চিকিৎসা নিচ্ছিলেন বিএসএমএমইউ হাসপাতালে; কিন্তু উন্নতি হয়নি। উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল শনিবার তাকে থাইল্যান্ডের বেজথানি হাসপাতালে।
বাবু কাজ করতেন নয়াপল্টনের একটি ছাপাখানায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বন্ধ হয়ে যায় ছাপাখানা। কিন্তু বাসায় বসে থাকেননি তিনি। নেমে পড়েন স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে। শনিরআখড়ায় বাসা হওয়ায় এ এলাকায় প্রতিদিন আন্দোলন করতেন। ২০ জুলাই সকালের দিকে গলি থেকে মিছিল নিয়ে মেইন রাস্তায় চলে যান। এ সময় হেলিকপ্টার দিয়ে টহল দিচ্ছিল বিজিবি। হঠাৎ করে হেলিকপ্টার থেকে গুলি শুরু হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবু পাঁচ-ছয় হাত দূরে ছিটকে পড়েন। বাবুর রক্তে ভিজে যায় রাস্তা, পুলিশ তাকে ঘিরে ফেলে। পরিচিত একজন তার বোনকে ফোন দিয়ে আসতে বলে। বোন বাবুর চার বন্ধুসহ ভাইকে উদ্ধার করতে আসেন। কিন্তু পুলিশ তাদের সবাইকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রাস্তায় পড়ে থাকেন রক্তাক্ত বাবু। পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পর বোনের জামাই এসে তাকে মুগদা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যায়। এখানেও সময়মতো চিকিৎসা দেয়নি স্বৈরাচারের সমর্থক চিকিৎসকরা। বাবুর অপরাধ কেন হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে? এ অভিযোগে চিকিৎসা শুরু করতেও দেরি করে। চিকিৎসা দেরি হওয়ায় রক্তশূন্য হয়ে যায় বাবু।
বাবুর মুক্তিযোদ্ধা বাবা পরিচয় দিয়ে চিকিৎসকদের পায়ে পড়ে মাফ চান এবং চিকিৎসা করতে অনুরোধ করেন। তাতে চিকিৎসকদের মন নরম হয়। রাজি হন চিকিৎসা দিতে। কিন্তু তখনো মেয়ে যাত্রাবাড়ী থানা হাজতে। তাকে মুক্ত করতে থানায় ছুটে যান মুজিবুর রহমান কিন্তু পুলিশ তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। পরে রাতে পুলিশ ফোন করে স্বামীকে চার হাজার টাকা নিয়ে যেতে বলে। ধারদেনা করে চার হাজার টাকা দিয়ে থানা থেকে মুক্ত হন বাবুর বোন। কিন্তু মুক্তি মেলে না বন্ধুদের। তাদের পাঠানো হয় কারাগারে।
বাবুর চিকিৎসায় মুগদা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা তার পেটে দু’বার অস্ত্রোপচার করেন। তার খাদ্যনালীর অনেকাংশ কেটে ফেলতে হয়। পেটে ফুটো করে বাকি অংশের মধ্যে থেকে মলত্যাগের রাস্তা বানানো হয়। কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। পরে সেপ্টেম্বর মাসে তাকে বিএনএমএমইউয়ে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসায় কিছু উন্নতি হলেও এক দিন খাদ্যনালী নতুন করে বানানো মলত্যাগের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে আসে। এতে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। মেডিক্যাল বোর্ড সিদ্ধান্ত দেয় দেশের বাইরে পাঠানোর। ১৫ দিন আগে থাইল্যান্ডের চিকিৎসক এসে বাবুর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। পরে তারা তাকে থাইল্যান্ডে নেয়ার সিদ্ধান্ত দেন।
মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমকে জানানো হলে তিনি দ্রুত বাবুকে থাইল্যান্ডে নেয়ার ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন বাবুর চিকিৎসায় এক কোটি টাকার বেশি খরচ হতে পারে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ডা: মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নির্দেশে আমরা বাবুকে দ্রুত বিদেশে নেয়ার ব্যবস্থা করি। গত শুক্রবার থাইল্যান্ড যাওয়ার টিকিট পাওয়া যায়। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে থাইল্যান্ডের বেজথানি হাসপাতালে নেয়া হয়। এরইমধ্যে গণবিপ্লবে আহত আরো চারজন এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাবুর সাথে থাইল্যান্ড যাচ্ছে তার বোন সুবর্ণা। তিনি জানান, আমার ভাইয়ের চিকিৎসায় সরকার খুব আন্তরিক। আমরা চিন্তাও করতে পারিনি বাবুকে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড নেয়া হবে। তিনি স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা