পোশাকশিল্পে কমে আসছে নারীশ্রমিক
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪২
দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে নারীশ্রমিকদের সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। বিজিএমইএর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, এই শিল্পে ১৯৮০ সালে নারীশ্রমিকদের হার ছিল ৮০ শতাংশ, যা ২০২১ সালে ৫৩.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, মূলত ১৮ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত তারা এই শিল্পে নিয়োজিত থাকেন। বয়স ৩৫ হওয়ার পর তারা এই কাজ ছেড়ে বিকল্প পেশার দিকে ঝুঁকতে থাকেন। বিকল্প হিসেবে তারা যেসব কাজকে বেছে নিচ্ছেন সেগুলো হচ্ছে : কৃষিভিত্তিক ও গৃহস্থালি এবং নিজের মালিকানাধীন দর্জির দোকানে কাজ করা। মূলত বেশি টাকা উপার্জনের আশা ও তুলনামূলক স্বাধীন পেশার কারণে তারা এসব পেশায় আগ্রহী। এভাবে নারী শ্রমিক কমতে থাকলে দক্ষ শ্রমিক স্বল্পতায় দেশের রফতানি আয়ের শীর্ষে থাকা তৈরী পোশাক খাতে স্থবিরতা নেমে আসতে পারে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আলোচনা অনুষ্ঠানে ‘বুনন ২০৩০ : বাংলাদেশের পোশাক খাতে মূল কার্যক্রম : গভীর পর্যবেক্ষণ ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় এই তথ্য তুলে ধরা হয়। এটি উপস্থাপন করেন লাইটক্যাসল পাটনার্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক জাহেদুল আমিন।
বলা হয়, এ অবস্থায় নারীদের পোশাক খাতে আগ্রহী করে তুলতে ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে নিরাপদ ও নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ তৈরি, শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা বাড়ানো ও সঠিক সময়ে ন্যায্য মজুরি প্রদান জরুরি। এর পাশাপাশি এই খাতের টেকসই উন্নয়ন ও বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে ডিকার্বোনাইজেশন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পরবর্তী পরিস্থিতি ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বা উৎপাদন পদ্ধতিতে প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয়করণের প্রভাবকে মোকাবেলা করা জরুরি।
ঢাকাভিত্তিক আন্তর্জাতিক বিজনেস কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ যৌথভাবে এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উল্লিখিত শিরোনামে প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। লাইটক্যাসল পার্টনার্স, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রতিবেদনটি সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন বিজিএমইএ) ও বাংলাদেশ নীটওয়্যার অ্যান্ড ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নেতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গত এক বছরে অনুষ্ঠিত চারটি সংলাপে উপস্থিত সরকারের ৫০ জন নীতিনির্ধারক, ৫০ জন শিল্প নেতাসহ মোট ১০০ জনের অধিক মতামত ও সুপারিশের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। চারটি সংলাপের মধ্যে প্রথমটিতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সার্কুলারিটি ও ডিকার্বোনাইজেশনের প্রভাব, দ্বিতীয়টিতে শ্রমিকদের সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, তৃতীয়টিতে নীতিগত অপরিহার্যতা, চতুর্থটিতে অটোমেশন ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব- এই চারটি বিষয় গুরুত্ব পায়। সেগুলোর ধারাবাহিকতায় গতকাল ছিল ‘বুনন : ২০৩০’ সংক্রান্ত এ বছরের সমাপনী অনুষ্ঠান।
বিজিএমইএ’র প্রশাসক ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বক্তব্য রাখেন। আরো বক্তব্য রাখেন বিকেএমইএর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম, ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার, প্রাইড গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মোহাম্মদ এ মোমেন, বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম ও পোশাক কারখানার সাথে সংশ্লিষ্ট নেতারা।
আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। অপরাজিতা ও বুনন প্রকল্প নিয়ে সূচনা বক্তব্য রাখেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের পরিচালক আইনি ইসলাম।
অনুষ্ঠানে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর টেকসই জিএসপি প্লাস লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কৌশল গ্রহণ সংক্রান্ত আর একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন মোহাম্মদ হাতেম। এতে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি সঙ্কট আসবে ২০২৬ সালে। বিশেষত এ সময়ে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর। এলডিসির কারণে জেনারেলাইজড স্কিম অব প্রিফারেন্সেস (জিএসপি) সহ অন্যান্য বাণিজ্য সুবিধা কমে যাওয়া, শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও আমদানিকারকরা বাংলাদেশের চেয়ে তুলনামূলক কম খরচে পোশাক উৎপাদন করা দেশগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ার আশঙ্কা এবং পোশাকশিল্পের কিছুসংখ্যক মালিকরা কমপ্লায়েন্সগুলো পুরোপুরি না মানার ফলে এই সঙ্কট আরো বাড়বে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ২০২৩-২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, তৈরী পোশাকের রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানে আছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক রফতানি করেছে, যা জাতীয় জিডিপিতে ১০.৩৫ শতাংশ অবদান রেখেছে। এই শিল্পের সাথে বর্তমানে ৪ মিলিয়নেরও বেশি শ্রমিক প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত। তাই এসব সমস্যার সমাধান না করা হয়, তাহলে পোশাক খাত এবং দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা