২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পরীক্ষিত চোরের কাছ থেকে সুশাসন আশা করা বোকামি : ফয়জুল করিম

ভোলায় ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশ মঞ্চে অতিথিরা : নয়া দিগন্ত -


আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে নিজেদেরকে প্রমাণ করেছে। সুতরাং ফ্যাসিস্ট ও সন্ত্রাসী দলের পুনর্বাসন দেশের জনগণ মেনে নেবে না। প্রধান উপদেষ্টা দ্য হিন্দুকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তার কোনো আপত্তি নেই, বিএনপি চায় নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ করতে হবে। বিএনপি বড় দল হিসেবে তাদের মতামত উপেক্ষা করতে পারি না। গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত শেখ হাসিনা ও তার দল বিচারের আগে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। প্রধান উপদেষ্টাকে কোনো নির্দিষ্ট দলের ইচ্ছাপূরণের জন্য ক্ষমতায় বসানো হয়নি। গণহত্যাকারী হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগকে বিচারের আগে কোনোভাবেই পুনর্বাসন করার ক্ষেত্র তৈরি করা মানে দেড় হাজার শহীদ ও ২০ হাজার আহতের রক্ত ও ত্যাগের সাথে গাদ্দারি করা।
গতকাল বিকেলে ভোলা সরকারি স্কুল মাঠে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা জেলা উত্তর শাখা সভাপতি মাওলানা আতাউর রহমান মোমতাজির সভাপতিত্বে ভোলার আবাসনে গ্যাসসংযোগ ও ইন্ট্রাকোর সাথে অবৈধ চুক্তি বাতিল, ভোলা-বরিশাল সেতু বাস্তবায়ন এবং ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবে সংঘটিত গণহত্যার বিচার, দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার, অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও তাদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ইহকাকালীন শান্তি ও পারকালে মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামী সমাজভিত্তিক কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই উপরিউক্ত কথা বলেন।

তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে আরো বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩ বছরে জনতার প্রত্যাশা পূরণ হয়নি আপনাদের ওপর জনতার অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। কোনে বিশেষ মহল কিংবা কোনো বিশেষ দলকে সুবিধা জাতির সাথে প্রতারণা করবেন না। দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের মতামতের মর্যাদা দিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি চালু করুন। সময়কে ধারণ করে পিআর পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি বন্ধ, নমিনেশন বাণিজ্য বন্ধসহ রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় রোধে এগিয়ে আসুন। আপনারা রাষ্ট্রে একটি আমূল পরিবর্তন আনুন। প্রয়োজনীয় সংস্কার করুন বিনা ভয়ে। কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠী যেন আপনাদের দ্বারা বিশেষ কোনো সুবিধা না পায় সেদিকে সতর্ক ও সজাগ থাকুন। ফ্যাসিবাদের ও মাফিয়াদের বিরুদ্ধে আমাদের শহীদের রক্ত যেন বৃথা না যায়, শহীদের রক্তের সাথে যেন গাদ্দারি না করা হয় সেদিকে নজর রাখুন। আমরা বিশ্বাস করি জনগণ কোনো পরীক্ষিত চোরকে ক্ষমতায় বসিয়ে সুশাসন আশা করবে না; যদি করে তা হবে বোকামি।
তিনি নির্বাচন কমিশনকে (সিইসি) উদ্দেশ্য করে বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনাই হবে নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রধান চ্যালেঞ্জ। নতুন নির্বাচন কমিশন সততা, নিষ্ঠা ও দৃঢ়তার সাথে কাজ করবে বলে আমরা আশাবাদী। বিগত ১৬ বছর নির্বাচন কমিশন দলীয় অনুগত কমিশনে পরিণত হয়েছিল। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষার পরিবর্তে নির্বাচন নিয়ে তামাশা করেছিল। অতিতের অবস্থা ফিরে আসুক জনগণ তা চায় না। নতুন নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ, সাহসিকতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা করবে।

গণসমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময় আমরা ভেবেছিলাম আর বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু আমরা কি দেখলাম? এখনো বৈষম্য দূর হয়নি, চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। সন্ত্রাস দূর হয়নি। সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। অন্যায় অত্যাচার বন্ধ হয়নি। খুন রাহাজানি বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নিরাপদে আছেন এবং নিরাপত্তার সাথে আছেন। আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘু ইস্যুকে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। এ দেশের জনগণ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা রুখে দিয়েছে। তিনি বিশ্ববাসীকে অপপ্রচারে কান না দেয়ার আহ্বান জানান। দ্রব্যমূল্য নিয়ে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলেন, অবিলম্বে সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় নাগালে রাখুন। সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। গরিব দুঃখী মানুষের নাভিশ্বাস কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের দোসররা আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ফ্যাসিবাদ ও তাদের মদদপুষ্টরা এখনো দেশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। মাফিয়াগোষ্ঠী দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও তাদের সর্মথনকারীরা দেশ ও দেশের বাইরে থেকে নতুন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানে জীবনের মায়া ত্যাগ করে রাস্তায় নেমে আসছিলাম বুকভরা আশা নিয়ে। কিন্তু এখনো রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসরদের দেখে আমরা বিস্মিত ও হতবাক।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, ভোলা জেলা উত্তর শাখার সহসভাপতি ও ভোলা-১ আসনের সম্ভাব্য এমপি পদপ্রার্থী মাওলানা ওবায়েদ বিন মোস্তফা, সেক্রেটারি মাওলানা তরিকুল ইসলাম তারেক, জয়েন্ট সেক্রেটারি মুফতি আব্দুল মোমিন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ আনোয়ার, জাতীয় শিক্ষক ফোরাম ভোলা জেলা উত্তর শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরী, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা জেলা উত্তর শাখার আলহাজ নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী, ইসলামী যুব আন্দোলনের জেলা সভাপতি মাওলানা শোয়াইব আহমেদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ভোলা জেলা সমন্বয়ক মো: রাহিম ইসলাম, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা জেলা উত্তর শাখা সভাপতি মাওলানা আবু জাফর প্রমুখ।

 


আরো সংবাদ



premium cement