২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

প্রকৃতির বিস্ময় আলীকদমের দামতুয়া ঝরনা

প্রকৃতির বিস্ময় আলীকদমের দামতুয়া ঝরনা -


পার্বত্যাঞ্চলের প্রাচীন জনপদ আলীকদমের সবুজাভ অরণ্যের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে অসংখ্য গিরিনির্ঝর ও ঝরনা-জলপ্রপাত। এর মধ্যে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি দেশের পর্যটকদের নজর কেড়েছে ‘দামতুয়া ঝরনা ও ব্যাঙজিরি জলপ্রপাত’। প্রকৃতির অপরূপ নিদর্শন এ ঝরনা ও জলপ্রপাতের উপচেপড়া ভরা যৌবন দেখার মোক্ষম সময় আষাঢ়-শ্রাবণ। তবে শরৎকাল ডিঙ্গিয়ে এই নান্দনিক ঝরনার প্রবাহ থাকে অটুট শরৎ, হেমন্ত, শীতেও।
সবুজ পাহাড়ের মৌন নিস্তব্ধতায় দামতুয়া ঝরনা যেন আচল বিছিয়ে দেয় পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানাতে! তাই সবুজের টানে প্রাণের উচ্ছ্বাসে দেশের নানাপ্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত দামতুয়া দেখতে ছুটে আসেন পর্যটকরা।
নামকরণ : মুরং ভাষায় দামতুয়া ঝরনার পুরো নাম ‘তুক-অ-দামতুয়া’। ‘তুক’ অর্থ ব্যাঙ এবং ‘অ’ অর্থ ঝিরি। ‘দাম’ অর্থ মাছ আর ‘তুয়া’ অর্থ খাঁড়া আকৃতির দেয়াল। এ ঝিরিতে একসময় প্রচুর ব্যাঙ পাওয়া যেত। তাই ঝিরির নাম-‘তুক-অ’ বা ব্যাঙ ঝিরি। অপর দিকে, দামতুয়া ঝরনার পানি একটি খাড়া দেওয়াল বেয়ে নিচে নেমে পড়েছে। খাঁড়া দেওয়ালের কারণে ‘দাম’ বা মাছ তুয়া অর্থাৎ খাঁড়া দেয়ালের কারণে ওপরে উঠতে পারে না। তাই এ ঝরনার নাম মুরং ভাষায় ‘তুক-অ-দামতুয়া’। সংক্ষেপে ‘দামতুয়া’।

অবস্থান : ঝরনাটি আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের গহিন অরণ্যের মধ্যে অবস্থিত। আলীকদম-থানচি সড়কের ১৭ কিলোমিটার পয়েন্টের আদু মুরংপাড়া থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে দামতুয়া ঝরনা ও ব্যাঙঝিরি জলপ্রপাতের অবস্থান।
প্রকৃতির বিস্ময় : সুবিশাল পাহাড়ি প্রকৃতির মাঝে থাকা এ ঝরনা ও জলপ্রপাতটি পর্যটকদের নজরে আসে ২০১৭ সালের শেষের দিকে। পাহাড়-নদী ও ঝরনায় ট্র্যাকিং করা অনেক পর্যটক জানিয়েছেন দামতুয়া ঝরনাটি প্রকৃতির বিস্ময়। এ ঝরনার আকার আকৃতি ও গঠনশৈলী মনোমুগ্ধকর। পার্বত্যাঞ্চলের অন্যান্য নান্দনিক ঝরনার দিক দিয়ে নিঃসন্দেহে ঝরনাটি অন্যতম। দামতুয়া ঝরনার কয়েক শ’ গজ ওপরে ব্যাঙঝিরি জলপ্রপাতটিও খুবই মনোহর। এ জলপ্রপাতের পাথুরে মাটির ধাপগুলো বিস্ময়কর। যেন সুদক্ষ রাজমিস্ত্রির নিপুণ হাতে সৃষ্ট কোনো আল্পনা! এ জলপ্রপাতের অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ধাপ প্রমাণ করে এটি প্রকৃতির খেয়ালে গড়া অসাধারণ একটি স্থাপত্যশৈলী!

দামতুয়া ঝরনায় দুই দিকের খাঁড়া পাহাড়ি দেয়াল বেয়ে কলকল, ঝমঝম রবে সুরের অনুরণন তুলে উন্মাতাল স্র্রোত গড়িয়ে পড়ছে নিচের গভীর জলাশয়ে। পাহাড়ের নিস্তব্ধতা যেন সেখানে ম্লান। উঁচু থেকে পড়া পানির কিছু অংশ আবার জলীয় বাষ্প হয়ে বাতাসে মিশে সেখানে এক ধোঁয়াশাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এ যেন পাহাড়ের গভীরে মেঘমালা!
দামতুয়া ঝরনা ও জলপ্রপাতে পৌঁছার আগে দেখা মিলবে ওয়াংপা ঝরনা। মূল ওয়াংপা ঝরনা দেখতে হলে খাঁড়া পাহাড় বেয়ে নিচে নামতে হয়। চলাচল পথের মাঝে অসংখ্য ছোট বড় পাথরের ভাঁজে শীতল জল যেন জানান দেয় ওয়াংপা ঝরনা জলস্রোত কেমন হবে। ওপর থেকে ওয়াংপা ঝরনার পানি গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য আরো মনোহর লাগে।

প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে ভ্রমণপিয়াসী মানুষ। রাতে যদিও সেখানে অবস্থান করা নিরাপদ নয়। তবে ভরা পূর্ণিমায় তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান করলে বুঝা যাবে রবীন্দ্রনাথের ভাষায়- ‘কৃষ্ণপক্ষের কৃশ চাঁদ যেন রোগশয্যা ছেড়ে ক্লান্ত হাসি নিয়ে অঙ্গনে বাহির হয়ে এলো’। রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য ও কলতানে মুগ্ধ হন যে কেউ! সেখানে প্রকৃতি খেলা করে আপন মনে। রুমুঝুম ঝুম ঝুম শব্দে বয়ে চলা ঝরনাধারায় গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে সজীব করে তুলে এ ঝরনার হিমশীতল পানি।
অনাদিকাল থেকেই প্রবাহিত হচ্ছে এসব ঝরনা ও জলপ্রপাত। এতদিন সড়ক যোগাযোগ না থাকা, বিচ্ছিন্ন পাহাড়ি জনপদ হওয়ায় তা ছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে। উদ্যমী তরুণ-যুবকরা পাহাড়ের কন্দরে লুকিয়ে থাকা এসব ঝরনা রাণী ও জলপ্রপাতকে খুঁজে খুঁজে বের করে আনছে। ফলে পাল্টে যাচ্ছে আলীকদম উপজেলার পর্যটন পরিবেশ। নতুনত্বের ছোঁয়া লাগছে পর্যটন খাতে। সরকারি আনুকূল্য পেলে এসব পর্যটন স্পট হয়ে উঠবে পর্যটকবান্ধব।

কিভাবে যাবেন : ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি বাসে সহজেই এখন আলীকদম আসা যায়। আলীকদম-থানচি সড়কের ১৭ কিলোমিটারের আদু মুরংপাড়ায় নেমে ২-৩ ঘণ্টা পাহাড়ি পথ হাঁটতে হয়। এরপর দামতুয়া ঝরনার দেখা মেলে। দামতুয়া ঝরনায় নামতে হলে খাঁড়া পাহাড়ের কিছুটা পথ ডিঙ্গিয়ে নিচে নামতে হয়। পাশের জলপ্রপাতের মাটি পাথুরে। সেখানে নামতে তেমন সমস্যা হয় না। ঝরনা ও জলপ্রাপাতের নিচে মাঝারি ধরনের জলাশয় আছে।
থাকার জায়গা : আলীকদম উপজেলায় থাকার জন্য দামতুয়া, অর্কিড, মারাইংতং রিসোর্ট, রূপমুহুরী রিসোর্টসহ সরকারি রেস্ট হাউজ রয়েছে।
বিশেষ পরামর্শ : ঝরনা পর্যন্ত যেতে গাইড নিলে সুবিধা হয়। প্লাস্টিক বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হয়। শিশু, বয়স্ক বা অপ্রাপ্ত বয়স্কদের সেখানে না নেয়া সঙ্গত। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে সারিবদ্ধভাবে চলাচল করতে হয়। পাহাড়ের পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষতিসাধন করা যায় না। উচ্চস্বরে আওয়াজ দিতে নেই, এতে পাহাড়ের প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতি হয়। যেকোনো অভিযোগ ও পরামর্শ স্থানীয় প্রশাসনকে অবিহিত করতে হয়। বর্ষায় পাহাড়ি পথে জোঁক থাকতে পারে, তাই সতর্ক থাকতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে বাংলাদেশ বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের দাবি বাংলাদেশ অরবিসের সাথে কাজ করতে আগ্রহী : অধ্যাপক ইউনূস ঢাবি সিন্ডিকেটে এখনো বহাল আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা হাসিনা বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করতে দিগন্ত টেলিভিশনসহ অসংখ্য গণমাধ্যম বন্ধ করেছে : ফখরুল শীত শুরু হচ্ছে তবু কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যয়বহুল তদন্তেও শনাক্ত হয়নি লাশটি কার ‘রহস্যজনক’ কারণে নেয়া হয়নি ডিএনএ নমুনা নবনির্মিত ওয়ামি কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন যুদ্ধবিরতির মার্কিন চেষ্টার মধ্যে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় চিকিৎসাকর্মী নিহত অস্বস্তিতে ক্রেতারা : কমিয়ে দিতে হচ্ছে কেনাকাটা গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪৪ হাজার ছাড়াল

সকল