জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলার দুই কারিগর গ্রেফতার
- আশুলিয়া (ঢাকা) সংবাদদাতা
- ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫২
স্বামী আল-আমীন ও চার বছরের একমাত্র সন্তানকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি সিলেটে থাকতেন কুলসুম বেগম। গত ২৮ আগস্ট দাম্পত্য কলহের জেরে সিলেট থেকে আশুলিয়ায় বোনের কাছে চলে আসেন কুলসুম। পথে গাড়িতে পরিচয় হয় শফিকুর রহমানের সাথে। কথাবার্তার একপর্যায়ে কুলসুমকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যায় রুহুল আমীনের কাছে। রুহুল আমীন ও শফিকুর কৌশলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জীবিত স্বামী আল-আমীনকে মৃত দেখিয়ে ১৩০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। বাদি হিসেবে উপস্থাপন করা হয় কুলসুমকে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। অবশেষে কক্সবাজার থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজারের আলেকজাহান এসএম পাড়ার মোস্তাক আহমেদের বাড়ি থেকে মিথ্যা মামলার কারিগর রুহুল আমীন ও শফিকুর রহমানকে আটক করে পুলিশ। এ সময় বাদি কুলসুমকেও উদ্ধার করা হয়। স্বামী আল-আমীনকে মৃত দেখিয়ে মিথ্যা মামলার কথা স্বীকার করেছেন কুলসুম।
আটক শফিকুর রহমান মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার টেপড়া গ্রামের মেছের আলীর ছেলে এবং রুহুল আমিন একই জেলার ঘিওর থানার ফুলহারা গ্রামের মৃত মাসুম আলীর ছেলে। এ ছাড়া ভুয়া মামলার বাদি ঘিওর থানার স্বল্পসিংজুরি বাঙলা এলাকার আব্দুল খালেকের মেয়ে কুলসুম।
আল-আমীনের স্ত্রী কুলসুম বেগম বলেন, আমি পারিবারিক কলহের জেরে শ্বশুর বাড়ি সিলেট থেকে আশুলিয়ায় আসি গত ২৮ আগস্ট। আমার স্বামী আমার ভরনপোষণ না দেয়ায় এখানে এসে চাকরির খোঁজ শুরু করি। এ সময় গাড়িতে পরিচয় হয় শফিকুর রহমান নামে এক ব্যক্তির সাথে। তিনি চাকরি দেয়ার কথা বলে আমার কাছে জন্মনিবন্ধন চেয়ে নেয়। পরে একদিন নবীনগরে সেনা শপিং কমপ্লেক্সে শফিকুর রহমান ও রুহুল আমীন আমাকে ডেকে নেয়। পরে তারা জন্মনিবন্ধন দিয়ে মামলা প্রস্তুত করেছে বলে আমাকে জানায়। আমি রাজি না হলে নানা রকম ভয়ভীতি দেখায় তারা। পরে তারা আমাকে আদালতে নিয়ে উকিলের সামনে কাগজে স্বাক্ষর নেয়। রুহুল আমীন ও শফিকুর রহমান আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে যা বলেছে তাই করতে বাধ্য হয়েছি। সর্বশেষ তারা আমাকে কক্সবাজারের একটি গ্রামে বাসা ভাড়া করে দিয়ে থাকতে বলে। আমি সেখানেই থাকি, গত ১৯ নভেম্বর কক্সবাজারে আসে শফিক। ২১ নভেম্বর পুলিশ রুহুল আমীনসহ কক্সবাজার এসে শফিককে আটক করে। তিনি আরো বলেন, স্বামী দাবি করা জীবিত আল-আমীনই আমার স্বামী। তিনি বেঁচে আছেন। আমাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে জন্মনিবন্ধন নিয়ে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করে মিথ্যা মামলার বাদি বানিয়েছে। রুহুল ও শফিক আমাকে যা করতে বলেছে আমি বাধ্য হয়ে তাই করেছি।
টাকার বিনিময়ে কতজন আসামির নাম বাদ দেয়ার জন্য অ্যাফিডেভিট করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে রুহুল আমিন বলেন, মনোয়ার মাস্টার, বাশার, ইলিয়াস শাহী ও সারোয়ার তালুকদারের নাম মামলা থেকে বাতিলের জন্য অ্যাফিডেভিড করা হয়েছে। তবে তাদের কাছে কোনো টাকা নেয়া হয়নি।
আশুলিয়া থানার এসআই রকিবুল ইসলাম বলেন, তদন্ত করে বাদিকে উদ্ধার করে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তারা জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। যে মামলায় আসামি করা হয়েছিল ১৩০ জনকে। অথচ বাদির স্বামী এখনো বেঁচে আছেন এবং আদালতে উপস্থিত হয়ে আল-আমীন সব স্বীকার করেছে। আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলা দায়েরের পেছনের কারিগর হলো- শফিক ও রুহুল আমীন। তাদের আটক করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা