গত তিন নির্বাচনে অনিয়মে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০৫
- নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সাথে মতবিনিময়ে সাংবাদিকদের সুপারিশ
- আমার মনে হয়, আমরা সঠিক পথেই আছি -বদিউল আলম মজুমদার
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের উচিত গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে অনিয়মের জন্য দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদকরা গতকাল এ সুপারিশ করেছেন। এ ছাড়া তারা চাইছেন, জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন বাড়িয়ে সেগুলোতে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন হোক। তবে সবার আগে তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহাল করতে পারলে দলীয় সরকারের অধীনে যে সমস্যা হয়, তার ৮০ শতাংশ থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব বলে মনে করেন তারা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গতকাল নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সাথে মতবিনিময় সভায় পত্রিকার সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা এমন সুপারিশ করেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন, আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. মো: গোলাম রহমান, দ্য ডেইলি স্টার বাংলার সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন, প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক মোস্তাফিজ শফি, সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল। মতবিনিময় সভা শেষে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা যে বিষয়গুলোর কথা ভাবছিলাম, ওনারা সেগুলোর ওপর জোর দিয়েছেন। আমার মনে হয়, আমরা সঠিক পথেই আছি।
গোলাম মোর্তোজা বলেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের উচিত গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে অনিয়মে জড়িতদের ‘নির্বাচনী অপরাধী’ আখ্যা দিয়ে তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা। এ ছাড়া, সংসদের নারী সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন করার ও আসনসংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে এক শ’ করার আহ্বান জানান গোলাম মোর্তোজা। সাবেক তিন নির্বাচন কমিশনারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ‘ভোটারবিহীন’ ও ‘রাতের ভোটের’ নির্বাচনের পেছনের কারণ বের করা এবং সে অনুযায়ী সামনের নির্বাচনের বিধিমালা সাজানোর সুপারিশ করেন ডেইলি স্টার বাংলার সম্পাদক। সোহরাব হোসেন বলেন, আমার প্রস্তাব হচ্ছে অনাবাসী প্রতিনিধিত্ব হবে না। ঢাকায় থেকে খাগড়াছড়ি বা দিনাজপুরের প্রতিনিধিত্ব করবে না। এটা ওই এলাকার জনগণকে বঞ্চিত করা। নির্বাচনে টাকার খেলা বন্ধ করতে রাষ্ট্রীয় খরচে নির্বাচনী প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। নারী আসনে সরাসরি ভোট হতে পারে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে। অথবা তিনটি আসন মিলে একটি নারী আসন হবে, যেখানে সরাসরি নির্বাচন হবে। সব নাগরিক যাতে তার পছন্দের প্রার্থী বাছাই করতে পারে সেটা আমাদের চাওয়া।
ড. মো: গোলাম রহমান বলেন, গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। প্রবাসীদের ভোট দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে অনেক আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য আইনের পরিমার্জন, পরিবর্ধন করতে হবে। তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে অতীতে দেখেছি যেভাবে প্রভাবিত করা হয়, সেই সুযোগ যেন না থাকে। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন এই সময়ে তো সম্ভব না। এটা সংসদ থেকে করতে হবে। কেননা, সেখান থেকে করতে না পারলে কার্যকর হবে না।
মাসুদ কামাল বলেন, নির্বাচন কমিশন যতই শক্তিশালী হোক না কেন, নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলে তাদের প্রভাবিত করা হয়ে থাকে। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দলীয় সরকারের অধীনে না হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে। এমন সিস্টেম যদি করতে পারি যে, এনআইডি পাঞ্চ করে জানতে পারি সে ভোটার কি না এবং ভোট দিতে পারবে কি না। কেননা, ভোটার লিস্ট হওয়ার ছয় মাস পর কিন্তু অনেকের ১৮ বছর হয়ে যায়। এতে তিনি কিন্তু ভোট দেয়া থেকে বঞ্চিত হন। এ ক্ষেত্রে এনআইডি কার্ডই ভোটার কার্ড হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ভোটার লিস্ট তৈরিতে সময় ও অর্থের অপচয় হয়।
মোস্তাফিজ শফি বলেন, সবার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে পারলে দলীয় সরকারের অধীনে যে সমস্যা হয়, তার ৮০ শতাংশ থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব। এটা সবার আগে ভাবতে হবে। এর সাথে সংবিধান সংস্কার কমিশনকেও ভাবতে হবে। তাদের প্রস্তাব সরকারকে দেয়ার পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও দেয়ার জন্য। এতে দলগুলো বা সরকার কতটুকু মানল তা আমরা জানতে পারব। তিনি বলেন, আরেকটা বিষয় হলো নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন দিতে হবে। ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে ১০০ আসনে নির্বাচন হবে। প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া গণমাধ্যমকর্মী ছাড়াও যারা ভোটের দায়িত্ব পালন করেন, তাদের আগাম ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তাদের পরামর্শে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি, কেননা, আমরা যা ভাবছি সেসব বিষয়ই তারা বলেছেন। স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য যেমন বলেছেন, তেমনি গণমাধ্যম সঠিক দায়িত্ব পালন না করলে যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সেই সুপারিশও করেছেন তারা। এনআইডির-ভিত্তিতে যাতে ভোটার তালিকা করা যায়, আমরা সেটাও বিবেচনা করছি। কেননা, এতে ভোটের আগের দিনও কেউ ভোটার হতে পারবে। অনেক সুপারিশ আসছে ব্যতিক্রমধর্মী এবং সাংঘর্ষিকও। আমরা সবগুলো পর্যালোচনা করে প্রস্তাব করব।
ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নারী আসনে নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, ১০০ আসনে নারীরা সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেবেন। এতে সংসদে ৪শ’ আসন করতে হবে। লটারির মাধ্যমে প্রথমবার ১০০ আসনে, পরেরবার অন্য ১০০ আসনে এভাবে চারবারে ৪০০ আসনে নারীরা সরাসরি অংশগ্রহণ করবে। আর অন্য আসনগুলোতে নারী ও পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এই পদ্ধতি আছে। তবে বাস্তবে সেখানে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল অনেক বেশি। নারীরা যাতে সবার মতো, প্রথম শ্রেণীর নাগরিকের মতো হয় দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মতো নয়, এমন প্রস্তাব তারা করেছেন। এ ছাড়া সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নীতিমালা সুপারিশ করব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা