২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সংসদ-স্থানীয় নির্বাচনে ‘একবার’ ভোট গ্রহণের নতুন থিওরি

-

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য একবার ভোট গ্রহণের নতুন থিওরি দিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ।
গতকাল বুধবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সাথে বৈঠকে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এমন থিওরি উপস্থাপন করেন।
সাবেক ওই সিইসি বলেন, সংসদীয় পদ্ধতি থাকবে। আমেরিকান দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পদ্ধতি আনার দরকার নেই। নির্বাচনকে সরলীকরণ করতে হবে। মনোনয়নবাণিজ্য যদি বন্ধ করা না যায় সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। কেননা, মনোনয়নপত্র বাণিজ্য নির্বাচনটাকে ট্রেডিংয়ে এনেছে। ২০ কোটি টাকা দিয়ে কিনব, ১০ কোটি টাকা ছড়াব। পাঁচ বছর থাকলে দুই-আড়াই শ’ কোটি টাকা লাভ করব, সোজা হিসাব। এমপি চরিত্র নষ্ট হচ্ছে এ জন্য। কাজেই আনুপাতিক হারে নির্বাচন করেন। নতুন থিওরি দিয়ে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ, তাদের দিয়ে তৃণমূলপর্যায়ে ভোট চালান। কোনো ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ নেবেন না। তাদের মনকে দৃঢ় করেন। তারা দেশের মালিক। তাদের ওপর দায়িত্ব দেন। এখানে ভোটকেন্দ্রগুলো স্থায়ী করেন। আড়াই লাখ ভোটকেন্দ্র করেন। প্রতিকেন্দ্রে ৫০০-এর বেশি ভোটার থাকবে না। ভোটার ক্লাব করেন। ১১ জনের নির্বাহী কমিটি থাকবে। পাঁচজন নারী, ছয়জন পুরুষ, তারা ভোটটা চালাবে। ছাত্র-জনতা যারা শিক্ষিত আছেন, তারা স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা দেখবে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট হবে। এক ঘণ্টা লাগবে গুনতে। ভোট গণনার পরে সেটি মোবাইল ফোনে ইলেকশন অফিসে চলে যাবে। উপজেলা, জেলা সবপর্যায়ে রেজাল্ট থাকবে। সেখানে ফল পাল্টানোর সুযোগ থাকবে না।
তিনি বলেন, ভোট দেবে মানুষ দলকে। যখন দলকে দেবে, তখন পয়সা খরচের বিষয় থাকবে না। (মনে করি) ১২ কোটি ভোটার, ৯ কোটি লোক ভোট দিলো। ১৫টা দল আছে। ভোট যদি ৯ কোটি হয়ে থাকে, ৩০০ আসন থাকলে তিন লাখ ভোট হলে হয়। কাজেই কোনো দল তিন লাখ পেলে সংসদে একজন, ছয় লাখ হলে দুইজন এভাবে আসন পাবে।

ভোটের আগে তৃণমূলে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন করে দলগুলো ইসিকে তালিকা দেবে। ইসি লোকটা ভালো কি মন্দ, পাবলিক মতামত নেবে। অবজেকশন এলে তাকে বাদ দেয়া হবে। ফুটবলের প্লেয়ার বদলের যেমন সুযোগ থাকে, তেমন করে বছরে পাঁচ শতাংশ বদলের সুযোগ থাকবে। তাহলে ভালো লোক আসবে কি না। সাবেক ওই সিইসি বলেন, ৩০০ সংসদীয় আসন থাকবে না। সারা দেশ হবে একটা আসন।
তিনি আরো বলেন, আমি ছয়টা নির্বাচন করি। সংসদ নির্বাচনে যে সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে, তার প্রতিনিধি ইউপিতে হবে। কাজেই এক নির্বাচনেই সব শেষ করা যায়। এতে কাগজ নষ্ট, এতে ব্যয় কমে আসবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব দল চায় না, কয়টা দল আছে যে আইন অনুসরণ করে দল হয়েছে। যেই দেশের দলের মধ্যে গণতন্ত্র নেই, তারা কী করে গণতন্ত্র কায়েম করতে পারে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তার (আবদুর রউফ) অনেক অভিজ্ঞতা, অনেক প্রজ্ঞা, তিনি অনেক এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। তিনি আমাদের উৎসাহিত করেছেন। আমরা সবার মতামত নিচ্ছি। আমরা আরেকজন সিইসির মতামত নিয়েছি। তিনি আবার বলেছেন, আনুপাতিক নির্বাচনের দরকার নেই।
সরকারের কাছে সুপারিশ কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এখনো বলতে পারছি না। এখনো আমরা শুনছি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ, অভিনব, সৃজনশীল প্রস্তাব রয়েছে। সব পর্যালোচনা করে আমরা সুপারিশ করব। আমরা আমাদের সুপারিশ দেবো। কিছু সুপারিশ নতুন কমিশন বাস্তবায়ন করবে। আর কিছু সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলো বাস্তবায়ন করবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement