গাজীপুরে থামছেই না শ্রমিক বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ
ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২৩ জন আটক- গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি
- ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪২
গাজীপুরে থামছে না শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ। গতকাল মঙ্গলবারও বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কের চক্রবর্তী এলাকায় সকাল থেকে ফের অবরোধ করে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা। তাদের সাথে যোগ দেয় স্থানীয় ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়া ডরিন কারখানা খুলে দেয়া ও কয়েক কর্মকর্তার অপসারণ দাবিতে ওই কারখানার শ্রমিকরা এ আন্দোলনে অংশ নেয়। সাড়ে ৯ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকেও মহাসড়ক অবরোধ অব্যাহত রাখে শ্রমিকরা। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ দিকে কারখানা ও গাড়ি ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২৩ শ্রমিককে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে যৌথবাহিনী।
শিল্প পুলিশ ও শ্রমিকরা জানান, গাজীপুর মহানগরের চক্রবর্তী এলাকাস্থিত বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর শ্রমিকরা অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতনভাতা পরিশোধের দাবিতে শুক্রবার বাদে গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিদিনই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে আসছে। গতকাল সকাল ৮টার দিকেও তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। খবর পেয়ে শিল্প ও থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়কের ওপর থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও শ্রমিকরা তাদের দাবিতে অনড় থাকে। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত সাড়ে ৯ ঘণ্টা ধরে সড়ক অবরোধ চলছিল।
এ দিকে কাশিমপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, আগের দিন ওই মহাসড়ক অবরোধকালে বেক্সিমকো ও ডরিন কারখানার শ্রমিকদের সাথে অংশ না নেয়ায় তারা ওই এলাকার অ্যামাজন নিটওয়্যার নামের একটি কারখানায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে। এ সময় দু’পক্ষের মাঝে বাগি¦তণ্ডা ও সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষকালে বিক্ষুব্ধরা অ্যামাজন ও বিগবস কারখানার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দু’টি কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও চক্রবর্তী এলাকায় পাঁচটি ট্রাক ভাঙচুর করে। বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ওই ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে ২৩ শ্রমিককে গতকাল ভোরে আটক করেন যৌথবাহিনীর সদস্যরা। আটককৃতরা অধিকাংশই বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিক।
শিল্প পুলিশ জানায়, বেক্সিমকো ইন্ডস্ট্রিয়াল পার্কের পোশাক ও সিরামিক কারখানাগুলোতে প্রায় ৪১ হাজার কর্মী রয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুথানের পর গত কয়েক মাস ধরে শ্রমিকরা নিয়মিত বেতনভাতা পাচ্ছে না। প্রতি মাসেই আন্দোলন করে তাদের বেতন আদায় করতে হচ্ছে। কারখানাগুলোর শ্রমিকদের গত অক্টোবর মাসের বেতনভাতা পরিশোধের একাধিকবার তারিখ নির্ধারণ করেও পরিশোধ করা হয়নি। এতে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
জিএমপি’র কাশিমপুর থানার ওসি জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টা হতে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কে অবরোধ করা হয়। সন্ধ্যার দিকেও অবরোধ অব্যাহত রয়েছে। শ্রমিকরা বলছে, দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস না পেলে তারা মহাসড়ক ছেড়ে যাবে না। তবে শিল্প ও থানা পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। তারা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য চেষ্টা করছেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে মহানগরীর মোগরখাল এলাকার টিএনজেড অ্যাপারেলস গ্রুপের পাঁচটি কারখানার শ্রমিকরা বন্ধ করে দেয়া তাদের কারখানাগুলো খুলে দেয়া এবং বকেয়া বেতনভাতা পরিশোধের দাবিতে ৯ নভেম্বর সকাল থেকে টানা তিন দিন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ অবরোধের কারণে ভয়াবহ যানজটের ফলে স্থবির হয়ে পড়ে গাজীপুরের জনজীবন। এর প্রভাব পড়ে উত্তরাঞ্চলের সব ক’টি সড়ক ও মহাসড়কে এবং ব্যবসাবাণিজ্যে।