২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ে বন্দর চেয়ারম্যান

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে, কমেছে জাহাজের অবস্থানকাল

-


গত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.২২ শতাংশ কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান। এই সময়ে বন্দরে জাহাজের অপেক্ষমাণ সময় কমেছে এবং ইয়ার্ডের ব্শিাল স্পেস ফ্রি করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। বন্দর চেয়ারম্যান জানান, বৈশ্বিক বাণিজ্যের নতুন রুট করাচি-চট্টগ্রাম রুটে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ায় বাংলাদেশের আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। এতে সাশ্রয়ী ব্যয় ও সময়ে উভয় দেশের আমদানি রফতানি বাণিজ্যে নতুনভাবে গতিশীলতা সৃষ্টি হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শহীদ মোহাম্মদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এই তথ্য জানান। অনুষ্ঠানে বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো: হাবিবুর রহমান, সদস্য (অর্থ) মোহাম্মদ শহীদুল আলম, সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমোডর এম ফজলার রহমান এবং সদস্য (প্রকৌশল) কমোডর কাওছার রশিদ, বন্দর সচিব মো: ওমর ফারুকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, গত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে আট লাখ ৩০ হাজার ৫৮২ টিইইউএস, যা বিগত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৬,৯৮৬ টিইইউএস বা ১০.২২ শতাংশ বেশি। তিনি বলেন, ‘কোভিড অতিমারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কটের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রতিফলিত হচ্ছে। এই প্রতিকূল অবস্থা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।’

জাহাজের অ্যাভারেজ ওয়েটিং টাইম কমিয়ে আনা প্রসঙ্গে রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৫ দশমিক পাঁচ হাজার কনটেইনারের স্থিতি ছিল। অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মোট ধারণক্ষমতার প্রায় ৮৫ শতাংশ অকুপাইড ছিল। বিগত তিন মাসে পদ্ধতিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে তা ৩৪ হাজারে নামিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে জাহাজের অ্যাভারেজ ওয়েটিং টাইম ছয় থেকে আট দিন হতে এক/দুই দিনে নেমে এসেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আগমনের পর জাহাজগুলো অন অ্যারাইভাল বার্থিং পাচ্ছে। চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি পণ্যের কনটেইনার পর্যাপ্ত হলে করাচি-চট্টগ্রাম রুটে ভবিষ্যতে নিয়মিত জাহাজ পরিচালনা করতে মালিকরা আগ্রহী। ইতঃপূর্বে পাকিস্তানের সাথে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রফতানি হতো। নতুন রুট চালু হওয়ায় বাংলাদেশের আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। এতে সাশ্রয়ী ব্যয় ও সময়ে উভয় দেশের আমদানি রফতানি বাণিজ্যে নতুনভাবে গতিশীলতা সৃষ্টি হবে।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, করাচি বন্দর থেকে লাইনার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রথমবার গত ১১ নভেম্বর এইচআর শিপিং লাইনের অধীনে এমভি ইয়াং জিয়াং ফা যান জাহাজে ৩২৮ কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম আসে। ১২ নভেম্বর কনটেইনার খালাস করে জাহাজটি চট্টগ্রাম ত্যাগ করে। জাহাজটি মূলত দুবাইয়ের জেবল আলি বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে করাচি বন্দর হয়ে চট্টগ্রাম আসে। জাহাজটির সাধারণ রাউন্টিং হচ্ছে দুবাই জেবল আলি- করাচি-চট্টগ্রাম-ইন্দোনেশিয়ার বেলা ওয়ান-মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং-মুন্দা (ভারত) এবং আবার জেবল আলি দুবাই।
এ ছাড়া ইয়ার্ডে বছরের পর বছর পড়ে থাকা অতি বিপজ্জনক দাহ্য সোডিয়াম নাইট্রোক্লোরাইডবাহী চারটি ট্যাংক কনটেইনার নিলামের মাধ্যমে ডেলিভারি দিয়ে বন্দরকে ঝুঁকিমুক্ত করা হয়েছে। ইয়ার্ডে থাকা আরো ৯টি বিপজ্জনক পণ্যবাহী কনটেইনার শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে ধ্বংস করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং এ ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ছাড়পত্র মিলেছে বলেও বন্দর চেয়ারম্যান জানান।
বন্দর চেয়ারম্যান জানান, তিন মাসে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষ্যে ব্যাপক কার্যধারা হাতে নেয়া হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরে খুলে পণ্য খালাসের পরিবর্তে অফডকে বা আমদানিকারকের নিজস্ব ইয়ার্ডে নিয়ে খালাসের অনুমতি প্রদানের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে বিদ্যমান জাহাজ ভাড়া কমিয়ে এই রুটকে জনপ্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কেনাকাটায় পূর্ণ স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।


আরো সংবাদ



premium cement