তিতুমীর শিক্ষার্থীদের অবরোধে রক্তাক্ত শিশুসহ ট্রেন যাত্রীরা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫
- ট্রেন দেখেই ইট ছুড়ে শিক্ষার্থীরা
- তীব্র যানজট, যাত্রীদের ভোগান্তি
- ৫ ঘণ্টা সারা দেশের সাথে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে সড়ক, ফ্লাইওভার ও রেলপথ অবরোধের পর আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তারা মহাখালী রেলওয়ে সিগনাল অবরোধ করলে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা দুটি আন্তঃনগর ট্রেন থামিয়ে দেয় এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইটে দুই ট্রেনে থাকা শিশুসহ বেশ কয়েকজন যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার বেলা ১১ টার পর থেকে এ আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৪টায় তারা অবরোধ তুলে নেন।
শিক্ষার্থীদের এমন বিশৃঙ্খল আন্দোলনের কারণে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সারা দেশে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া মহাখালী রেল ক্রসিংয়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে মহাখালী, বনানী ও জাহাঙ্গীর গেট এলাকার সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মহাখালী থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকের সড়কে উভয় পাশেই সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ট্রেনযাত্রী থেকে শুরু করে সড়কের হাজার হাজার যাত্রী ও সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, অবরোধ চলাকালে নোয়াখালী থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর ট্রেন উপকূল এক্সপ্রেস মহাখালী রেলওয়ে ক্রসিং অতিক্রম করছিল। এ সময় ট্রেনটি থামানোর চেষ্টা করে তিতুমীর শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ট্রেনটি না থেমে গতি কমিয়ে চলতে থাকলে সেটি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে ট্রেনের কয়েকটি জানালার কাচ ভেঙে যায়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকজন ট্রেনের ছাদে উঠে পড়ে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে মহাখালী এলাকায় লাইনে ২টি আন্তঃনগর ট্রেন আটকে দেয় শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া জামালপুরের তারাকান্দিগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকামুখী বনলতা এক্সপ্রেস।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের এমন বিশৃঙ্খল আন্দোলনের কারণে মহাখালী রেলওয়ে ক্রসিং এলাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। এতে শত শত শিক্ষার্থীসহ অনেক সাধারণ মানুষের নিহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের বিধিনিষেধ না মেনে রেলওয়ে লাইনের ওপর হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে যায় এবং আন্দোলন করতে থাকে। এই সময় রেলওয়ে লাইন দিয়ে আসা দুটি আন্তঃনগর ট্রেন তড়িঘড়ি করে থামাতে বাধ্য হন ট্রেনের চালকরা। চালকরা যদি সতর্কতার সঙ্গে তড়িঘড়ি করে ট্রেন না থামাতেন তাহলে মহাখালীতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: রাসেল বলেন, ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম। শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহাখালী সড়ক ও রেলপথ অববোধ করে আন্দোলন শুরু করে। এর কারণে মহাখালী বনানী ও জাহাঙ্গীর গেট এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ওসি মো: রাসেল বলেন, অবরোধ তুলে নেয়ার পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টা আলোচনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার বিষয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হামলায় আহতের সংখ্যা কত- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম। আহতের কোনো খবর আমরা পাইনি। কারণ ট্রেনটি সেখানে থামেনি, ধীরগতিতে চলে পার হয়ে গেছে। রেলযাত্রী আহতের বিষয়টি রেলওয়ে পুলিশ বলতে পারবে।
অন্য দিকে এ বিষয়ে ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদিন বলেন, আসলে কেউ আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। তাই আহতের সংখ্যা বা বিষয়টি আমরা জানি না। তবে শিক্ষার্থীরা ট্রেনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে এটা সত্য। এতে কতজন আহত হয়েছেন সেটি জানা যায়নি।
এর আগে, গতকাল বেলা সোয়া ১১টার দিকে দেড় থেকে দুই হাজার শিক্ষার্থী তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে বের হন। মিছিলটি আমতলী মোড় হয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহাখালী রেলওয়ে ক্রসিং এলাকায় অবস্থান নেয়।
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে সড়ক, ফ্লাইওভার ও রেলপথ অবরোধ করে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। অবরোধের এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা দুটি আন্তঃনগর ট্রেন থামিয়ে দেয় এবং ট্রেনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইটে দুই ট্রেনে থাকা শিশুসহ বেশ কয়েকজন যাত্রী গুরুতর আহত হন।
এ বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন জানান, প্রায় ৪ ঘণ্টা অবরোধের পর শিক্ষার্থীরা মহাখালী এলাকায় রেললাইন অবরোধ তুলে নিলে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে দুটি লাইনেই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা