আ’লীগের আমলে ৬১ মামলা এখন তিনি ফ্যাসিবাদী!
- এস এম মিন্টু
- ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৩
পুরান ঢাকার নবাবপুরে জন্ম শেখ মো: জাবেদ উদ্দিনের। ১৯৯৩ সাল থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার হাত ধরে বিএনপির রাজনীতি শুরু। ১৯৯৪ সালে নাসির উদ্দিন পিন্টু ও সাদেক হোসেন খোকার আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে বৃহত্তম কোতয়ালি থানা বিএনপির রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ওপর হামলা, মামলা, জেল-জুলুম শুরু হয়, ঠিক তেমনই শেখ মো: জাবেদও ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকারের ওইসব মামলা থেকে রেহাই পাননি। ৬১ মামলার আসামি হয়ে জেল খাটার পর বছরের পর বছর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে যোগ দিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও পুলিশের গুলি এবং টিয়ার শেল, রাবার বুলেটের আঘাতে এক মাসের বেশি অসুস্থ থাকার পরও উল্টো ওই মামলায় আসামি হন শেখ মো: জাবেদ। গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ছয়বার গ্রেফতার হয়ে মাসের পর মাস জেল-জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়ে বছরের পর বছর পালিয়ে থাকার পর স্বস্তি আসে গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও দেশ থেকে শেখ হাসিনা এবং তার দলীয় মন্ত্রী-এমপিরা পালিয়ে যাওয়ার পর। কিন্তু সেই স্বস্তি আর বেশি দিন ধরে রাখতে পারেননি শেখ মো: জাবেদ উদ্দিন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সাথে যোগ দিয়ে এখন তিনি ফ্যাসিবাদী! দলীয় পদপদবি যেন না পান সে কারণেই সামাজিকভাবে এবং দলীয়ভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য তার প্রতিপক্ষরা এসব মিথ্যা মামলা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন শেখ মো: জাবেদ উদ্দিন।
জানা গেছে, ৫ আগস্টের আন্দোলনে আহত সোয়েব শাহরিয়ার সিজান ও মো: রেফায়েদ হাছান আহত হওয়ার পর গত ২৪ অক্টোবর এবং গত ১৪ নভেম্বর কোতোয়ালি থানায় হত্যাচেষ্টা মামলায় শেখ মো: জাবেদকেও আসামি করা হয়।
মামলা সূত্র থেকে দেখা গেছে, দুইটি মামলার বিবরণ আগাগোরা এক। শুধু আহত ও ঘটনাস্থল পরিবর্তন করে মামলা দু’টির আসামি করা হয়েছে ১২৩ জনের নাম উল্লেখ্য করে একই ধারায়। সোয়েব শাহরিয়ার সিজান আহত হওয়ার মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলও খাটেন শেখ মো: জাবেদ। পরে আদালতে ৬১ মামলার আসামি ও বিএনপির রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ায় আদালত জামিন দেয়ার কয়েক দিনের মাথায় গত ১৪ নভেম্বর আরেকটি মামলা ঠুকে দেয়া হয় তার বিরুদ্ধে।
মামলার আসামি শেখ মো: জাবেদ উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ আমলে আমার বিরুদ্ধে বিস্ফোরকসহ ৬১ মামলা করা হয়। জেল-জুলুম এমনকি ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হন তিনি। ৫ আগস্টের পর ফ্যাসিবাদী সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর এখন তিনি নিজেই ফ্যাসিবাদের তালিকায় পড়েছেন। কারণ তিনি আওয়ামী লীগ আমলে ৬১ মামলায় আসামি হওয়ার পরও এই আমলেও দুই মামলার আসামি। তাকে ফ্যাসিবাদ বানানোর জন্য দুষ্কৃতকারীরা ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
শেখ মো: জাবেদ আরো জানান, ২০১৭ সালে তিনি বাংলাদেশ ইলিকট্রনিক্স ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর পরিচালনা পর্ষদ ওই বছরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেন। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে সেখানে যাওয়ার পর তার ছবি তোলা হয়। ওই ছবিকে পুঁজি করে গত এক মাসে দুই মামলার আসামি করা হয়। তাকে ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বানানোর চেষ্টা করা হয়।
শেখ মো: জাবেদ উদ্দিনের এলাকা পুরান ঢাকার নবাবপুর। সেখানে খোঁজ নিলে কয়েকজন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, জাবেদ ১৯৯৩ সাল থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি বিএনপির রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করেন। বিএনপির সাথে যুক্ত থাকায় তাকে এলাকায় ঢুকতে দেয়নি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এরপর ব্যবসায়িক সূত্রে ধীরে ধীরে এলাকায় আসা শুরু করেন। একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে সবাই চিনেন তাকে। তিনি কখনই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি। গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে গিয়েও তিনি আহত হয়ে এক মাস বাসায় ছিলেন। গত এক মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দুইজন আহত হওয়ার ঘটনায় যে মামলা দিয়েছে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা। হয়রানিসহ শেখ মো: জাবেদ যেন বিএনপির দলীয় পদ-পদবি না পান সে জন্যেই প্রতিপক্ষের মাধ্যমে এমন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় মামলার বাদি মো: নয়ন হোসেনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, তিনি জাবেদকে ভালোভাবেই চিনেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে তার অনেক ছবি রয়েছে। আহত ভিকটিম মো: রেফায়েদ হাসানকে তিনি চিনেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তাকে চিনি। তার সাথে কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে তিনি বলেন, আমি এখন ব্যস্ত আছি। এই বলেই লাইন কেটে দেন।
মামলার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিএমপির লালবাগ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো: জসীম উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, মামলাগুলোর বাদি আসলে পুলিশ না। যিনি মামলা করেছেন তিনি ভালো বলতে পারেন কে এই মামলায় তার নাম দিয়েছে। তিনি বলেন, পরের যে মামলা হয়েছে সে বিষয়ে আমি খোঁজখবর নিয়ে যদি আন্দোলনে তার সম্পৃক্ততা না পাই তাহলে তাকে গ্রেফতার করা হবে না। আমরা এসব মামলায় এখন যাচাই-বাছাই ছাড়া কাউকেই গ্রেফতার করছি না। আন্দোলনের সময় সিসি ক্যামেরা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণায় সম্পৃক্ততা পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।