১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বৈষম্যবিরোধী-বীরত্বগাথা

স্বাভাবিক জীবনে কি আর ফেরা হবে ইসমে আজমের?

-


বাম চোখে ঝাপসা দেখেন ইসমে আজম। ডান চোখে একেবারেই দেখতে পান না। নার্ভ, কর্নিয়া, রেটিনাও ছিঁড়ে গেছে। গুলিতে ফেটে গেছে ডান চোখের মণি। দুই চোখে দৃষ্টির ভারসাম্য না থাকায় হাঁটার সময় হোঁচট খান তিনি। যে কারণে তার স্বাভাবিক চলাফেরা প্রায় বন্ধ। এ ছাড়াও নয়টি রাবার বুলেট এখনো মাথায় রয়েছে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইসমে আজমের। গত ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে মারাত্মক আহত হন তিনি।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডান চোখে আর দেখতে পাবেন না আজম। বাম চোখও পুরোপুরি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বাম চোখে ওই ঝাপসা দেখেই জীবন কাটাতে হবে তাকে। এরই মধ্যে নতুন করে দেখা দিয়েছে কোমরে সমস্যা।
গার্মেন্টকর্মী বাবা-মায়ের খুব আদরের ছেলে ইসমে আজম। ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর জন্ম তার। গাজীপুরের গ্লোরিয়াস মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তিনি। আজমের এক বড় বোন রয়েছে। নাম কানিজ ফাতেমা (২২)। এইচএসসি পরীক্ষার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পিঠে অপারেশন করাতে হয়। এক বছর ধরে তার লেখাপড়া বন্ধ। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলেটি লেখাপড়া শেষে চাকরি করবে। তাহলে শেষ বয়সে হয়তো একটু শান্তি পাবেন তারা। কিন্তু তা আর হলো না। আজমের বাম চোখের মতো পরিবারের সেই স্বপ্নও এখন ঝাপসা হয়ে গেছে। যেখানে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার নিশ্চয়তা নেই, সেখানে আবার লেখাপড়া!
ইসমে আজম দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার দক্ষিণ মরনাই গ্রামের আবুল কালাম (৪৮) এবং মঞ্জিলা খাতুনের (৪২) ছেলে। পরিবারের সবাই ঢাকা গাজীপুরের শ্রীপুরের হাজী মার্কেট এলাকায় বাস করেন। আজমের মা-বাবা দু’জনই গার্মেন্টে চাকরি করেন। আজম আহত হওয়ার পর এর প্রভাব পড়ছে তাদের কর্মক্ষেত্রে। আজমকে নিয়ে বেশিরভাগ সময় দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে ঠিকমতো চাকরি করতে পারছেন না তার মা। বেশিরভাগ সময়ে তাকেই থাকতে হচ্ছে ছেলের কাছে। আবার বাবা যখন পারছেন তখন এসে থাকছেন। মা বাসায় কিংবা কর্মস্থলে যাচ্ছেন। এভাবেই চলছে এখন তাদের সংসার।

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কেবিন ব্লকে গিয়ে দেখা যায়, হুইল চেয়ারে বসে আছেন ইসমে আজম। তার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। দীর্ঘ সময় কথা হয় আন্দোলনে সক্রিয় থাকা এ শিক্ষার্থীর সাথে।
ভয়াবহ সেই ঘটনা এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় আজমকে। তিনি বলেন, গত ১৪ জুলাই কোটাসংস্কার আন্দোলনে যুক্ত হই আমি। গাজীপুরের বাসা থেকে আন্দোলনে অংশ নিতে প্রতিদিন যেতাম জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পূর্ব ঘোষিত নির্ধারিত সময়ের কর্মসূচি পালন করে প্রতিদিন বাসায় ফিরে আসতাম।
ইসমে আজম বলেন, গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান। দুপুরের পর বিজয় মিছিলে অংশ নেই আমি। আশুলিয়া থানার সামনে আসার পর পুলিশ খুব কাছ থেকে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করে। একটি রাবার বুলেট এসে আমার চোখে লাগে। সাথে সাথে রাস্তায় পড়ে যাই। পরে বন্ধুরা চান্দরার কাছে একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে শুধু একটা ইনজেকশন দেয়া হয়। এরই মধ্যে খবর পেয়ে আব্বাও পৌঁছে যান হাসপাতালে।

সেখান থেকে আজমকে চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে রেফার্ড করা হয়। এ রাতেই চক্ষু বিজ্ঞানে তার চোখের সার্জারি হয়। পরের দিন রিলিজ দিয়ে ১৪ দিন পর ফলোআপে যেতে বলে। ১৪ দিন পর আবার আজমকে নিয়ে গেলে ওষুধ দিয়ে সাতদিন পর আসতে বলে। তখন যাওয়ার পর তাকে ভর্তি করিয়ে নেয়। তখনও চোখ ফোলা আর রক্ত জমাট বাঁধা ছিল। আজম বলেন, ওখানে চার দিন রাখার পর ৩১ আগস্ট পিজির সুপার স্পেশালাইজডে রেফার্ড করে। ৪ সেপ্টেম্বর আবার আমার চোখের অপারেশন হয়। ৭ সেপ্টেম্বর রিলিজ নিয়ে বাসায় যাওয়ার পর কোমরে ব্যথা শুরু হয়। দিন দিন ব্যথা বাড়তে থাকে। ১০ দিন পর এসে আবার সুপার স্পেশালাইজডে ভর্তি হই। ভর্তির পর কোমর ব্যথা অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে। হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা শুরু হয়। যখন ব্যথা শুরু হয় তখন প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে আমাকে আইসিউতে নেয়া হয়। সেখানে পাঁচ দিন থাকি। অবস্থার একটু উন্নতি হলে কেবিনে দেয়া হয়। ততদিনে আমি হাঁটা-চলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি। সঙ্গী হয়ে যায় হুইল চেয়ার। এর দু’দিন পর সিএমএইচ এ রেফার্ড করা হয়। সেখানে আইসিউইউতে রাখা হয়। সিএমএইচে ছিলাম পাঁচ দিন। সেখান থেকে থেরাপির দেয়ার জন্য সাভারের সিআরপিতে পাঠায়।
সিআরপিতে যাওয়ার পর ওই রাতেই আবার প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয় আজমের। সেখানে আইসিইউ নেই। অক্সিজেন দিয়ে সারা রাত রাখা হয়। নিউরো সার্জারির চিকিৎসক দেখানোর পরামর্শ দিয়ে গত ২৮ অক্টোবর সকালে পিজিতে পাঠিয়ে দেয়া হয় তাকে।
গত ৩১ অক্টোবর থাইল্যান্ডের চিকিৎসক দল এসে আজমকে দেখে কিছু পরীক্ষা দিয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেবেন।

ইসমে আজমে বলেন, রিপোর্ট কিছু রেডি হয়েছে। বাকিগুলো কবে পাওয়া যাবে চিকিৎসক এখনো জানায়নি।
তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসার সব খরচ সরকার বহন করছে। বার বার যে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে যাওয়া-আসা করতে হয়, সেই খরচ নিজেদেরই বহন করতে হচ্ছে। শুধু সিআরপিতে যাওয়া-আসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স পেয়েছিলাম। বাকি সব যাতায়াত খরচ নিজেদের বহন করতে হয়েছে।
দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে বড় বোন কানিজ ফাতেমা বলেন, সবাই আমার ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন। সে যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। দুই চোখের আলো ফিরে পায়। যেন স্বাভাবিকভাবে হাঁটা-চলা করতে পারে। যেন ফিরে পায় আগের মতো স্বাভাবিক জীবন। ওকে যেন পরিবারের বোঝা হয়ে না থাকতে হয়।
কান্না ভেজা কণ্ঠে মা মঞ্জিলা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলেডারে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। সে বড়ো হয়ে আমাদের সকলের আশা পূরণ করবে। ওর বাবা ও আমি গার্মেন্টে চাকরি করি, যা বেতন পাই তা দিয়ে সংসার চলে না। এখন ছেলেডা অসুস্থ। ওর চোখ ঠিক হবে কি না আল্লাহ জানেন। ওর আবার কোমরে ব্যথা। চলাফেরাও করতে পারে না। মেয়েডা বড়ো হয়েছে। বিয়ে দিতে হবে। আমাদের ভবিষ্যতে আল্লাহ কী লিখে রেখেছেন কে জানে। সংসার কিভাবে চলবে আমরা জানি না।’ তিনি তার অসুস্থ ছেলের জন্যে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন ছেলে যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
এক মাসের মধ্যে হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্তকাজ শেষ করার নির্দেশ অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ৪ বছরের কম হওয়া উচিত অস্ট্রিয়ার কোম্পানিগুলো বিনিয়োগে আগ্রহী জলবায়ু ক্ষতিপূরণের অর্থের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি প্লানটেশন সেক্টরে একাধিক শর্তে কর্মী নেবে মালয়েশিয়া প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আশাহত মির্জা ফখরুল ৫ সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ য্ক্তুরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদেও সংখ্যায় সর্বোচ্চ রেকর্ড উচ্চ রাজনৈতিক ঝুঁকি ও নিম্ন প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় ঋণ মান কমিয়েছে মুডিস আ’লীগ আত্মস্বীকৃত ফ্যাসিস্ট এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য : ডা: শফিক বিএনপি ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান শহীদদের নামে হবে : তারেক রহমান

সকল