১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কাজলের থাইল্যান্ড যাত্রা

বিদায় জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
-


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র কাজল মিয়াকে থাইল্যান্ডে যাওয়ার প্রাক্কালে গতকাল রাতে বিদায় জানিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। জুলাই আন্দোলনের শুরু থেকেই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন কাজল মিয়া। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। কাজলের বড় ভাই রুবেলের বাসা যাত্রাবাড়ীতে। ৪ আগস্ট ভাইয়ের বাসায় এসেছিলেন তিনি। পরের দিন ডাক আসে ‘লংমার্চ ফর ঢাকা’র। ৫ আগস্ট ভোরেই আন্দোলনে যোগদানের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে যান তিনি। সেখানে পুলিশ আন্দোলনকারীদের নির্বিচারে গুলি করছিলে। পুলিশের গুলির মুখে সবাই রাস্তা ছেড়ে দিলেও সাহসিকতার সাথে দাঁড়িয়ে থাকেন কাজল। রংপুরের আবু সাঈদের মতো দু’হাত ছড়িয়ে দেন পুলিশকে। কিন্তু টার্গেট করে পুলিশ তার মাথায় গুলি করলে সাথে সাথে লুটিয়ে পড়েন রাস্তায়। পরে লোকজন উদ্ধার করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (নিনস) হাসপাতালে ভর্তি করেন মেধাবী এই তরুণকে। নিনসে তার মাথায় বেশ কয়েকবার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে, কিন্তু ইনফেকশনের কারণে খুব বেশি উন্নতি হয়নি তার শারীরিক অবস্থার। গত প্রায় তিন মাস ধরে এইচডিইউতে কাটাতে হয়েছে কাজলকে। তবে সামান্য কিছু উন্নতি হয়। কিন্তু বাম হাত-পা পুরোপুরি অচল হয়ে যায়। অচল হাত ও পা সচল করতে প্রয়োজন রোবটিক ফিজিওথেরাপি, দেশে সে ব্যবস্থা নেই। সেজন্য মেডিক্যাল বোর্ড তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পরামর্শ দেয়।

এ সিদ্ধান্তে কাজলকে বিদেশে নেয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু গত দু’দিন আগে হঠাৎ ইনফেকশন শুরু হয়ে যায়। বেশ কয়েকবার ডায়রিয়ায় ভোগেন কাজল। এতে রক্তচাপ কমে গিয়ে শকে চলে যায়। পরে আবারো নিনসে বোর্ড করে চিকিৎসা দেয়া হতে থাকে। গত শনিবার সকাল থেকে অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তার অবস্থা স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমকে জানানো হলে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেন। তাকে দ্রুত থাইল্যান্ডের বেজথানি হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করেন। গত শনিবার ছুটির দিন হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে কাজলকে বিদেশে নেয়ার সব ব্যবস্থা করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে থাই দূতাবাসে যোগাযোগ করা হয়। গতকাল রোববার দুপুরের মধ্যে ভিসার ব্যবস্থা হয়ে যায়।

এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ৩১ হাজার ডলারের প্রয়োজন ছিল, সেটাও ব্যবস্থা করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। গতকাল রোববার দুপুরের মধ্যে ৩১ হাজার ডলার সিঙ্গাপুরে পাঠিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নিশ্চিত করেন। গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের রওনা করার সময় নির্ধারিত ছিল। পরে কাজলকে নিয়ে রাত ১২টার দিকে থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার কথা। কাজলের সাথে যাবে তার স্ত্রী সিনথিয়া।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, আমি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে যোগদানের পর আমার প্রধান কাজ হলো আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এজন্য আহতদের সুচিকিৎসার জন্য বিদেশী চিকিৎসক দল আনার ব্যবস্থা করেছি। আহতদের চিকিৎসার জন্য চীন, নেপাল, ফ্রান্স থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এসেছেন। থাইল্যান্ড থেকেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এসেছেন। ৫০ জনের চোখের কর্নিয়া নেপাল রেডি করে রেখেছে, যাদের কর্নিয়া স্থাপন প্রয়োজন হবে তাদের জন্য। ইতোমধ্যে দুইজনের চোখে সফলভাবে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় যুক্তরাজ্য থেকে চিকিৎসকদের একটি টিম বাংলাদেশে এসেছে। গত ৫ নভেম্বর থেকে দুইজনের একটা মেডিক্যাল টিম ঢাকায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) আন্দোলনে আহত ভর্তি রোগীদের পর্যবেক্ষণ করেন। তারা এ পর্যন্ত ২৫টির বেশি অস্ত্রোপচার করেন।
উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, আমরা চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠিয়েছি। আজ কাজলকে পাঠানো হচ্ছে। আরো ১০ থেকে ১২ জনকে দেশের বাইরে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, জাতীয় নাগরিক কমিটির ডা: আহাদসহ আরো অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কাজলকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement