আমার ছেলেকে কেন পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হলো?
- বাসস
- ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৪
বাবা-মায়ের সাথে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ভাড়া বাড়িতে থাকতেন হাফেজ দ্বীন ইসলাম। বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার তেপুর পূর্ব ইউনিয়নের মধ্য ঠেটালিয়া গ্রামে। বাবার নাম শাহ আলম বেপারী। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিকেলে বিজয় মিছিলের সাথে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে গেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
পুলিশ প্রথমে তাকে গুলি করলে দুই হাতের তালুতে লাগে। তখন পালানোর চেষ্টা করলে শরীরের নিচের অংশে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও বাধা দেয় পুলিশ। এতে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন হাফেজ দ্বীন ইসলাম (২২)। বাবা শাহ আলম (৪৫) এ তথ্য জানিয়েছেন। সম্প্রতি শহীদ দ্বীন ইসলামের গ্রামের বাড়ি ঠেটালিয়ায় গিয়ে দাদী লতিফা বেগমকে (৭০) পাওয়া যায়। তিনি বলেন, আমি একাই বাড়িতে থাকি। গত কোরবানির ঈদে আমার ছেলে ও বউসহ দ্বীন ইসলাম বাড়িতে এসেছিল। ঈদের পর আবার ঢাকায় চলে যায়। দ্বীন ইসলাম সব সময় আমার খোঁজ নিত। তার বাবা কাজে ব্যস্ত থাকত। সে জন্য আমার সাথে যেকোনো বিষয়ে নাতি কথা বলত। এখনো শুধু আমার চোখের সামনে নাতির চেহারা ভাসে। কান্না জড়িত কণ্ঠে এর বেশি আর কিছু বলতে পারেননি এ বৃদ্ধা।
শাহ আলম দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে যাত্রাবাড়ী শহীদ জিয়া কলেজ সড়কের মুন্সীর বাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকেন। বড় ছেলে শহীদ হাফেজ দ্বীন ইসলাম। ছোট ছেলে সামিউল বেপারী (১৭) শনিরআখড়া কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়ে। স্ত্রী শিল্পী বেগম (৪০) গৃহিণী। শাহ আলম বর্তমানে যাত্রাবাড়ীর থানা মসজিদের পাশে ফুটপাথে চা বিক্রি করেন।
মোবাইল ফোনে ছেলের মৃত্যুর বর্ণনায় শাহ আলম বলেন, ৫ আগস্ট দুপুর আড়াইটার দিকে দুই ছেলেসহ দোকানের সামনের রাস্তায় এক লোকের সাথে কথা বলছিলাম। ওই সময় চারদিকে সংঘর্ষ আর গোলাগুলি শুরু হয়। কথার মধ্যেই দুই ছেলে আমার সামনে থেকে চলে যায়। বড় ছেলে থানার সামনে গেলে পুলিশ গুলি করে। প্রথমে তার দুই হাতে গুলি লাগে। এতে বাম হাতের অংশ উড়ে যায়। এরপর সেখান থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ তার শরীরের নিচের অংশে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। বিকেল ৩টার দিকে আমি এ ঘটনা জানতে পেরে সেখান থেকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু পুলিশের বাধায় তাকে আর চিকিৎসার জন্য নিতে পারিনি। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ীতে তার প্রথম নামাজে জানাজা হয়। এরপর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে রাত ১২টায় দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করি।
তিনি বলেন, দ্বীন ইসলামকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। গ্রামের মাদরাসায় এক বছর পড়ার পর এখানে নিয়ে আসি। যাত্রাবাড়ী কুতুবখালী বড় মাদরাসায় দিলে সেখান থেকে হিফজ শেষ করে। এরপর গত দুই বছরে অন্য কোনো মাদরাসায় ভর্তি করাইনি। আমি বেশির ভাগ সময়ই অসুস্থ থাকায় দ্বীন আমার কাজে সহযোগিতা করত। ভেবেছিলাম খুব তাড়াতাড়ি তাকে কিতাব পড়ার জন্য মাদরাসায় ভর্তি করাব। সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।
ছোট ভাই সামিউল জানান, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আমাদের দোকান বন্ধ ছিল। বাবার সাথেই ছিলাম আমরা দুই ভাই। পরে লোকজন আনন্দ মিছিল শুরু করলে সেখানে যাই। থানার সামনে গেলে বড় ভাই গুলি খায়। আমি সেখান থেকে দৌড়ে মাছ বাজারে চলে যাই, ভাই আর পালাতে পারেনি। পুলিশ গুলি করলে মাটিতে পড়ে যায়।
মা শিল্পী বেগম বলেন, আমার ছেলে কি অন্যায় করেছে? তাকে কেন পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হলো? আমি বেঁচে থাকতে ওই পুলিশের বিচার দেখে যেতে চাই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা