মুক্তিপণের জন্যই শিশু জাইয়াকে অপহরণ
নজরদারিতে শিশুটির বাবা- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৩
পুরাণ ঢাকার আজিমপুরের একটি ভাড়া বাসা থেকে মালামাল লুটের সাথে নিয়ে যাওয়া আট মাস বয়সী শিশু কন্যা আরিসা জান্নাত জাইফাকে উদ্ধার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব।
গত শুক্রবার সকালে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার ১৬ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার এবং একদিন আগে ওই বাসার ‘পেয়িং গেস্ট’ হিসেবে উঠা ফাতেমা আক্তার শাপলাকে (২৭) গ্রেফতার করেছে র্যাব। শিশুটিকে উদ্ধারের পর র্যাব জানায়, ডাকাতির পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় মুক্তিপণ আদায় করতেই শিশুটিকে অপহরণ করা হয়। ঘটনায় পরিবারের কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি র্যাব শিশুটির বাবাকেও নজরদারিতে রাখার কথা জানিয়েছে।
গত শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে র্যাব-১০ এর একটি দল মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি বাসা থেকে শাপলাকে গ্রেফতার করে। ওই বাসা থেকে তখনই জাইফাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শুক্রবার সকালে দোতলা বাড়ির নিচতলায় আবু জাফর ও ফারজানা আক্তার দম্পতির ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে মালামাল ও তাদের আটমাস বয়সী দুধের শিশুটিকে নিয়ে যায় শাপলাসহ আরো তিন যুবক। বাকিদের গ্রেফতারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, শিশু জাইফার মায়ের সাথে সম্প্রতি সম্পর্ক গড়ে তোলে অপহরণ চক্রটির প্রধান ফাতেমা আক্তার। শিশুটির মা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কর্মরত। তিনি মন্ত্রণালয়ের বাসে যাতায়াতের সময় কৌশলে ওই বাসে ওঠেন অপহরণকারী ফাতেমা। নানানভাবে অপহৃতের মায়ের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে শিশুর মায়ের সাথে সাবলেটে একই বাড়ি থাকার পরিকল্পনাও করেন তারা। তিনি আরো বলেন, ঘটনার দিন আজিমপুরে ভুক্তভোগী শিশুটির বাড়িতে প্রবেশ করেন অপহরণকারী ফাতেমা। এ সময় কৌশলে ভুক্তভোগীকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। এরপর ফাতেমার তিনজন সহযোগী ওই বাড়িতে প্রবেশ করেন। বাড়িতে থাকা ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, প্রায় সাত ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করা হয়। এরপর শিশু মেয়ে আরিশাকে অপহরণ করে আনা হয়। রাখা হয় অপহৃতের আদাবর নবীনগর হাউজিংয়ের বাসায়। সেখান থেকে শুক্রবার দিবাগত রাতে র্যাব শিশুটিকে উদ্ধার করে।
গ্রেফতার আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, অপহরণের দুই সপ্তাহ আগে ভিকটিমের মায়ের সাথে পরিচয়ের সময় গ্রেফতার ফাতেমা ভিকটিমের মায়ের কাছে তার নাম রাইসা এবং তার বাড়ি নওগাঁ জেলা বলে মিথ্যা পরিচয় দেয়।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় গ্রেফতার ফাতেমা তার চাচাতো ভাই পরিচয়ে ৩ ব্যক্তিকে বাসায় নিয়ে আসেন। বাসায় আসার পর আলাপচারিতার একপর্যায়ে ফাতেমা ও তার কথিত চাচাতো ভাইয়েরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ভিকটিমের মাকে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে। এ সময় ফাতেমা ও তার সহযোগীরা বাসার স্বর্ণালঙ্কার ও অর্থসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে ভিকটিম জাইফাকে নিয়ে বাসায় চলে আসে এবং তার সহযোগীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে গোয়েন্দা নজরদারী ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ভিকটিম জাইফাকে উদ্ধারসহ অপহরণের পরিকল্পনাকারী ফাতেমা আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, গ্রেফতার ফাতেমা আক্তার ও তার সহযোগীরা ডাকাতির উদ্দেশ্যে কয়েকদিন ধরে বাড়িটি রেকি করে আসছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বড় ডাকাতি। পরে সময় ক্ষেপন হওয়ায় তারা শিশুকে এক দিনের মাথায় অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ঘটনাটি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে তারা ভিকটিমের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করতে পারেনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা