পদক্ষেপে সূচক কিঞ্চিৎ বাড়লেও সার্বিকভাবে মন্দা
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
- বেচাকেনার চাপে ছিল ব্যাংকিং খাত
- কেনার চাপ ৬০ শতাংশ বিক্রির চাপ ৪০ শতাংশ
- মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৮শ কোটি টাকা
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অংশীজনদের সাথে বৈঠক এবং সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন বা আইসিবিকে তিন হাজার কোটি টাকা তারল্য দেয়ার পরও পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব নেই বললেই চলে। উল্টো বিদায়ী সপ্তাহে দুই বাজারেই বেশির ভাগ কোম্পানি দর পতনের শিকার। পদক্ষেপে উত্থান ও পতনে সূচকে কিঞ্চিৎ পয়েন্ট ফিরলেও সার্বিকভাবে পুঁজিবাজার মন্দাতেই আছে। শেয়ার কেনার চাপ গড়ে ৬০ শতাংশ থাকলেও বিক্রির চাপও ৪০ শতাংশে ছিল। তবে পুরো সপ্তাহজুড়ে ব্যাংকিং খাতের শেয়ারগুলো বেচাকেনার চাপে ছিল বেশি। শতভাগ কেনার চাপে ছিল এন শ্রেণীর কোম্পানির শেয়ারগুলোয়। লেনদেনে নেতিবাচক অবস্থা দেখালেও ঢাকা স্টকে সার্বিকভাবে বাজারমূলধন ০.৪৩ শতাংশ বা ২ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা বেড়েছে বলে ডিএসইর সাপ্তাহিক পর্যালোচনার তথ্য থেকে জানা গেছে।
ডিএসই ও সিএসইর তথ্য থেকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সপ্তাহে শেয়ার বাজারে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। বাজারের মূল সূচক গত সপ্তাহের তুলনায় ০.৭৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সদ্য বিদায়ী সপ্তাহে গড়ে দুই স্টকেই ৫৫ শতাংশ কোম্পানি দর পতনের শিকার হয়েছে। ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৪১৩টি কোম্পানি। এর মধ্যে ১৪৮টির বা ৩৮.৫১ শতাংশের দর বেড়েছে, ২০৫টির বা ৫৩.৩৮ শতাংশের দর কমেছে, ৩১টির দর অপরিবর্তিত ছিল এবং ২৯টির লেনদেন হয়নি। ডিএসইর প্রধান সূচক সপ্তাহ শেষে ৩৯ পয়েন্ট বেড়েছে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ২০.৮৭ পয়েন্ট, শরিয়াহ ১.৬১ পয়েন্ট বেড়েছে। ডিএসএমই সূচক থেকে ১৫.৩৮ পয়েন্ট ঝরে গেছে। প্রধান সূচক এখন পাঁচ হাজার ৩৫৫.৩৩ পযেন্টে অবস্থান করছে।
লেনদেনে তথ্য থেকে দেখা যায়, গড় লেনদেন টাকায় কমেছে ৮.৫৫ শতাংশ। মোট লেনদেন টাকায় কমেছে ১৪১ কোটি ৭৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। আগের সপ্তাহের ৬০৫ কোটি ৮১ লাখ ৪০ হাজার টাকা লেনদেনের জায়গায় গেলো সপ্তাহে হয়েছে ৫৫৪ কোটি ২ লাখ ২০ হাজার টাকার। গড় শেয়ার বেচাকেনা কমেছে ২১.০৬ শতাংশ। ২২ কোটি ৯৪ লাখ ৪০ হাজারটি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনার জায়গায় গেলো সপ্তাহে হয়েছে ১১ কোটি ১১ লাখ ২০ হাজারটি। ফলে কমেছে চার কোটি ৮৩ লাখ ২০ হাজার। মোট লেনদেন কমেছে ২৫৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহের তিন হাজার ২৯ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকার লেনদেনের বিপরীতে গেলো সপ্তাহে হয়েছে ২ হাজার ৭৭০ কোটি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার। আর মোট শেয়ার বেচাকেনা কমেছে ২৪ কোটি ১৬ লাখ। গেলো সপ্তাহে যেখানে ৯০ কোটি ৫৬ লাভ ২০ হাজার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয়েছে, সেখানে আগের সপ্তাহে হয়েছিল ১১৪ কোটি ৭২ লাখ ২০ হাজারটি।
ডিএসইতে বাজারমূলধনের অংশীদারিত্বে এ শ্রেণীর কোম্পানির শেয়ার প্রাধান্য বিস্তার করেছে ৮৭.২০ শতাংশ। এ ছাড়া বি শ্রেণীর কোম্পানি ৮.৪ শতাংশ, এন শ্রেণীর ১ শতাংশ এবং জেড শ্রেণীর ৩.২ শতাংশ। গত সপ্তাহে ডিএসইতে একশত ভাগ কেনার চাপে ছিল এন শ্রেণীর শেয়ার। বাকি শ্রেণীর কোম্পানির শেয়ার গড়ে ৭৫ শতাংশ কেনার চাপে ছিল।
সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০
ডিএসইর দেয়া তথ্য বলছে, বিদায়ী সপ্তাহটিতে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে শামপুর সুগার মিলস লিমিটেডের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২৬.৯৪ শতাংশ। আর দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের ২৪.৫৪ শতাংশ, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের ২২.১০ শতাংশ, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ২১.১৩ শতাংশ, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের ২১.১২ শতাংশ, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ১৯.১৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের ১৮.৯৮ শতাংশ, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ১৮.৪৬ শতাংশ, প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের ১৮.১৫ শতাংশ এবং জিল বাংলা সুগার মিলস লিমিটেডের ১৭.৫৮ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।
সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষ ১০ : আর ডিএসইর লেনদেনের নেতৃত্বে গত সপ্তাহে উঠে এসেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ২৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৪.৩৯ শতাংশ। লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা সিউটিক্যালস লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ২১ কোটি ২ লাখ ৩০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৩.৭৯ শতাংশ। এ ছাড়া ইউনাইটেড ফাইন্যান্স লিমিটেড প্রতিদিন গড়ে ১৯ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৩.৫২ শতাংশ। প্রতিদিন গড় লেনদেনে সাপ্তাহিক শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের ১৭ কোটি ৭৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ইসলামী ব্যাংকের ১৪ কোটি ৪৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা, এমজেএল বিডির ১৪ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা, স্কয়ার ফার্মার ১২ কোটি ১৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ফারইস্ট নিটিংয়ের ১২ কোটি ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা, ওরিয়ন ফার্মার ১০ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং বিচ হ্যাচারি লিমিটেডের ১০ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ ১০ : বিদায়ী সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে সোনালি আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৮.৬৮ শতাংশ কমেছে। সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান পাওয়া অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলসের ১৬.৪৮ শতাংশ, আরামিট সিমেন্টের ১৪.২৯ শতাংশ, আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের ১৩.৯৬ শতাংশ, এমবি ফার্মার ১৩.২৩ শতাংশ, মনোস্পুল পেপারের ১২.০৫ শতাংশ, নিউলাইন ক্লোথিংসের ১১.৮৪ শতাংশ, ফু-ওয়াং ফুডের ১১.৩৩ শতাংশ, নাহি অ্যালুমিনিয়ামের ১০.৯১ শতাংশ এবং বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেডের ১০.৪৮ শতাংশ শেয়ারদর কমেছে।
সিএসইতে দর পতনে ৫৭.৯৬ শতাংশ কোম্পানি : চট্টগ্রাম স্টক মার্কেটে গেলো সপ্তাহে বেশির ভাগ কোম্পানি দর পতনের শিকার হয়েছে। শেয়ার বেচকেনাও কম। এক কোটি ৯৩ লাখ ৯ হাজার ২৬৯টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৬৯ কোটি ৮৬ লাখ ৫১ হাজার ৩১৪ টাকা বাজারমূল্যে। মূল্যসূচকের ক্ষেত্রে সিএএসপিআই ০.১৯ শতাংশ, সিএসই-৩০ সূচক ১.৩৫ শতাংশ এবং সিএসসিএক্স ০.৩২ শতাংশ বেড়েছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ৩১৪টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৩৫.৯৮ শতাংশের বা ১১৩টির, দর পতনের শিকার ১৮২টিপ বা ৫৭.৯৬ শতাংশের এবং দর অপরিবর্তিত ১৯টির। বাজারমূলধনে অংশীদারিত্ব এ শ্রেণীর কোম্পানির ৭৯.৯৪ শতাংশ, বি শ্রেণীর ২২.৩১ শতাংশ, এন শ্রেণীর ১.৬৮ শতাংশ ও জেড শ্রেণীর ১.০৬ শতাংশ।
পর্যালোচনায় রয়্যাল ক্যাপিটার বলছে, সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজার এবং আর্থিক খাতকে স্থিতিশীল করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বাজারের আশাবাদ বেড়েছে। সম্প্রতি, সরকার তারল্যটা বাড়ানো এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে তিন হাজার কোটি টাকার একটি সার্বভৌম গ্যারান্টি দিয়েছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ কোম্পানির পজিটিভ আর্নিং প্রকাশিত হওয়ায় বাজার কিছুটা সক্রিয় হয়েছে। যদিও অনেক বিনিয়োগকারী তাদের পোর্টফোলিওতে আরো ক্ষতি এড়াতে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। গড় টার্নওভার ৮.৫৫ শতাংশ কমেছে। বাজার মূল্যের ভিত্তিতে সাতটি সেক্টর এই সপ্তাহে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার মধ্যে টপ গেইনার ছিল বীমা, সেবা ও বিবিধ খাত। ১১টি সেক্টর এই সপ্তাহে শীর্ষ পতনে। মূল্য ও লেনদেনের দিক থেকে সার্বিকভাবে বিএসসি সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল। সপ্তাহের শেষে মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বাধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। মনোজপুলের দর সর্বাধিক হ্রাস পেয়েছে। সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বলা যায় যে, আগামী সপ্তাহে বাজারের সূচক কিছুটা নিম্নমুখী হওয়ার পাশাপাশি মাঝারি পরিমাণে লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।