দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে জাতীয় ঐকমত্যের বিকল্প নেই : গোলাম পরওয়ার
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আগামী নির্বাচনে দেশ থেকে ফ্যাসিবাদকে রাজনৈতিকভাবে কবর দিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। এখন জাতীয় ঐকমত্যের বিকল্প নেই।
বাগেরহাট জেলা জামায়াতে ইসলামীর রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। বাগেরহাট জেলা আমির মাওলানা রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মশিউর রহমান ও মাষ্টার শফিকুল আলম। সম্মেলনে জেলা নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট মাওলানা শেখ আব্দুল ওয়াদূদ, সেক্রেটারি শেখ মোহাম্মদ ইউনুস, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন, মো: মিজানুর রহমান মল্লিক, অ্যাডভোকেট মুস্তাইন বিল্লাহ, মঞ্জুরুল হক রাহাত, অধ্যক্ষ আব্দুল আলিম, ছাত্র শিবিরের বাগেরহাট জেলা সভাপতি নাজমুল হাসান সাইফ প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি সেক্রেটারি জেনারেল বাগেরহাট জেলার ২০২৫-২৬ সেশনের নবনির্বাচিত জেলা আমির মাওলানা রেজাউল করিমকে শপথবাক্য পাঠ করান।
গোলাম পরওয়ার বলেন, সমাজ পরিবর্তনের মহান দায়িত্ব নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের কাজ করতে হবে। আগামী নির্বাচন হবে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের ছাত্র-জনতার যে আত্মত্যাগের বিনিময়ে দেশ ফ্যাসিবাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে, সে ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশের বিনির্মাণ দৃঢ় রাখার জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। বর্তমানে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
উপদেষ্টা পরিষদের নিয়োগের ব্যাপারে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গণ-আকাক্সক্ষার চাহিদা অনুযায়ী আপনাদের সরকারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাই গণ-আকাক্সক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করতে হবে। আলেম-ওলামাদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া ফ্যাসিবাদের সহযোগীদের উপদেষ্টা পরিষদে স্থান না দেয়ার জন্য তিনি সরকার প্রধানের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের সহযোগী দেশের অধিকাংশ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের রেখে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। বিচার, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনের ও সংবিধানের সংস্কারসহ ছয়টি স্তরে সংস্কারের যৌক্তিক সময়ের পর একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব।
সেক্রেটারি জেনারেল আরো বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছরের ভোটবিহীন ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে দেশ আজ মুক্ত। দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হলেও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতিটি স্তরে ফ্যাসিবাদের দোসররা বহালতবিয়তে আসীন রয়েছে। বর্তমান সরকারকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে হলে রাষ্ট্র সংস্কার করার জন্য যৌক্তিক সময় দেয়া প্রয়োজন। জামায়াত বর্তমান সরকারকে এ কাজে যৌক্তিক সময় দিতে চায়। যৌক্তিক সময় বলে জামায়াত সরকারকে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ বেঁধে দিতে চায় না।
সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, একটি জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে সবাই মিলে একসাথে পথ চলতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন মত থাকবেই, ভিন্ন মত ও আদর্শ আছে বলেই দেশে বহু দলীয় গণতন্ত্র চালু আছে। সব রাজনৈতিক দলই যখন ফ্যাসিবাদ বিরোধী এক দফা আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছে তখন আগামী নির্বাচনে ফ্যাসিবাদকে রাজনৈতিকভাবে কবর দিয়ে একটি জাতীয় ঐক্য, নির্বাচনী সমঝোতা গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
দিনাজপুর : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, যারা তিনটি জাতীয় নির্বাচনে মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি, সেই পরাজিত শক্তি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার হারিয়েছে। কর্তৃত্ববাদী দল আওয়ামী লীগ সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতা দখলে রেখে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় ১১ জন নেতাকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় ফাঁসিতে ও কারাগারে বন্দি রেখে বিচারের নামে প্রহসন করে হত্যা করেছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার বিরোধী দল ও মতের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে নির্যাতন-নিপীড়নে জর্জরিত করেছে।
গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঢাকায় শহীদ ও দিনাজপুরের বিরলের বাসিন্দা আসাদুল হক বাবুর পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করে তার সদ্যপ্রসূত কন্যা সন্তানের জন্য দোয়া এবং দিনাজপুর জেলা জামায়াত অফিসে জেলা মজলিসে শূরার পৃথক দুটি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জেলা জামায়াতের নবনির্বাচিত আমির প্রিন্সিপাল আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে মুহাদ্দিস এনামুল হককে সেক্রেটারি এবং রাজিবুর রহমান পলাশ ও সাইদুল ইসলাম সৈকতকে সহকারী সেক্রেটারি করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কর্মপরিষদ গঠন করা হয়। অধিবেশনে জেলা মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি ও ৩ জন সহকারী সেক্রেটারিসহ ১৫ সদস্যের মহিলা বিভাগীয় কর্মপরিষদও গঠন করা হয়। সভায় আরো বক্তৃতা করেন, সাবেক আমির ও চিরিরবন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দীন মোল্লা এবং সাবেক জেলা আমির আনোয়ারুল ইসলাম।
ঢাকা মহানগরী উত্তর : আবু সাঈদ ও মুগ্ধের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি; বরং আওয়ামী-বাকশালীদের রাজনীতি থেকে চিরতরে বিদায় ও মাফিয়াতান্ত্রিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় এই আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
গতকাল রাজধানীর ভাটারার নতুন বাজার মাদানী এভিনিউয়ে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভাটারা থানা আয়োজিত এক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। থানা আমির অ্যাডভোকেট রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি আহমেদ সালমানের পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিমুদ্দিন মোল্লা। বক্তৃতা করেন, জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য হেদায়েত উল্লাহ, মজলিসে শূরা সদস্য কুতুবউদ্দিন, ফজলে আহমেদ, আ. সবুর ফরহাদ, ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশার, সিরাজুল ইসলাম, আহমেদ ওজায়ের প্রমুখ।
রূপনগরে জামায়াতের মিছিল : ১৫ নভেম্বর ফ্যাসিবাদ পতনের ১০০ দিন উপলক্ষে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দখলবাজদের বিরুদ্ধে ঢাকার রূপনগরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর রূপনগর থানা। ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য ও রূপনগর থানার আমির মো: আবু হানিফের নেতৃত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন পল্লবী দক্ষিণ থানা আমির মো: আশরাফুল আলম, পল্লবী মধ্য থানা আমির আবুল কালাম পাঠান, থানা সেক্রেটারি মোশাররফ হোসেন ভুইয়া, থানা কর্মপরিষদ সদস্য মো: হাসানুল বান্না চপল, মো: নুরুল ইসলাম, হাসান মো: ইউসুফ, ইঞ্জি: মো: মিজানুর রহমান, দেওয়ান মো: শাহজাহান, সাইফুল ইসলাম, নুরুন্নবী মানিক, লতিফুল খাবিরসহ থানার সর্বস্তরের জনগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। মিছিলটি ইষ্টার্ন হাউজিং থেকে শুরু হয়ে রুপনগর এলাকার বিভিন্ন রোড প্রদক্ষিণ করে চলন্তিকা মোড়ে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
ফেনীতে জামায়াতের কর্মী সম্মেলন
ফেনী অফিস জানায়, জামায়াতে ইসলামীর ফেনী জেলা আমির মুফতি আবদুল হান্নান বলেছেন, শুধু বাংলাদেশের আদালতে নয়, আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিচার হবে। আওয়ামী লীগ দেশে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাস্তান তৈরি করেছিল। পড়ার টেবিল, মসজিদ থেকে বের করে কিশোর গ্যাং তৈরি করেছে। তিনি বলেন, যারা দেশে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল এখন তারা বিশে^ নিষিদ্ধ হয়েছে।
শুক্রবার ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। করিম উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর সহকারী সেক্রেটারি ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা: ফখরুদ্দিন মানিক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শূরা সদস্য মেজবাহ উদ্দিন সাঈদ ও দাগনভূঞা উপজেলা আমির মাওলানা গাজী ছালেহ উদ্দিন।
মাতুভূঞা ইউনিয়ন আমির মাওলানা নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা আবদুল হালিমের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন মাতুভূঞা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মাহফুজুল হক, ফেনী পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ড জামায়াতের সেক্রেটারি সুলতান মাহমুদ ফারুকী, ছাত্রশিবিরের সিলোনীয়া সাথী শাখার সভাপতি জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।