মানুষের শ্রদ্ধায় পালিত হলো হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন
- সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক
- ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১২
এক হাজার ৭৬টি মোমবাতি, কেক কাটা আর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধায় পালিত হলো কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। এর বাইরে গতকাল দিনভর নানান অনুষ্ঠান আর মানুষের আনাগোনায় সরব ছিল নূহাশপল্লী।
এছাড়া জন্মদিন উপলক্ষে হলুদ পাঞ্জাবি ও শাড়ি পরে একদল হিমু নূহাশপল্লীতে এসে হুমায়ূন আহমেদের কবরে শ্রদ্ধা জানান। বাদ যাননি ভক্তরা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নূহাশপল্লীতে আসেন।
এর আগে তার ৭৬তম জন্মদিনে গত মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে হুমায়ূন আহমেদেরই হাতে গড়া পুরো নূহাশপল্লী মোমবাতির আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে। পরে সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জন্মদিনের কেক কেটে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনের কর্মসূচি শুরু করেন। সকালে নূহাশপল্লীতে আসেন হুমায়ূন আহমেদের ছেলে নিশাত। পরে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, তার ছেলে নিনিত ও শাওনের বাবা মোহাম্মদ আলী নূহাশপল্লীতে আসেন। শাওন তার দুই ছেলে বাবা ও নূহাশপল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। নূহাশপল্লীর লিচুতলায় চিরনিদ্রায় শায়িত হুমায়ূন আহমেদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া ও মুনাজাতে শরিক হন তার পরিবারের সদস্য এবং বিপুলসংখ্যক ভক্ত। বেলা ১১টার দিকে নূহাশপল্লীর হোয়াইট হাউজের সামনে দুই ছেলেকে নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনের কেক কাটেন শাওন।
কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ একাধারে ছিলেন শিক্ষক, সমাজসেবী, গল্পকার, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, চিত্রকর, চিত্রনাট্য লেখক, নাট্যনির্দেশক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রবন্ধকার। সাহিত্যের সব জায়গায় ছিল তার সরব উপস্থিতি। কখনো আবার রঙতুলির ছোঁয়ায় রাঙিয়েছেন ক্যানভাসের রঙহীন সাদা স্থান। পিছিয়ে ছিলেন না নির্মাণেও। ছোটপর্দা, বড়পর্দায় তার নানান সৃষ্টি বাঙালির মনে দাগ কেটে থাকবে হাজার বছর।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণে করেন। পরে ২৪ জুলাই তাকে নূহাশপল্লীর লিচুতলায় সমাহিত করা হয়।
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার ছায়া সুনিবিড় প্রত্যন্ত কুতুবপুর গ্রামে বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের কোলে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মস্থানের বিভিন্ন এলাকার নাম বারবার তার লেখার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। ছেলেবেলায় তার ডাক নাম ছিল কাজল। তার পুলিশ কর্মকর্তা বাবাও একজন লেখক ছিলেন। জনপ্রিয় দুই লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবীব তার ছোট দুই ভাই।
বাবা পুলিশ অফিসার হওয়ায় বদলিজনিত কারণে বিভিন্ন জেলায় পড়াশোনা করতে হয়েছে তাকে। সেজন্য তিনি সর্বশেষ বগুড়া জিলা স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাস করেন। ১৯৬৭ সালে এইচএসসি পাস করেন ঢাকা কলেজ থেকে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে ডিস্টিংশন নিয়ে অনার্সসহ এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। সেখানে মাত্র ছয় মাস থাকার পরই তিনি চলে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেহের আফরোজ শাওন বলেন, নূহাশপল্লীটা হুমায়ূন আহমেদ করেছিলেন গাছ লাগানোর জন্য। হুমায়ূন আহমেদ বলতেন বাংলাদেশের মাটিতে হয় এমন সব গাছ এখানে থাকবে। গাছের প্রতি প্রেম ও ভালোবাসার কারণে নূহাশপল্লীটা তৈরি হয়েছে। যখন যেখানেই দুর্লভ কোনো গাছ পাওয়া যায় তা আমরা সংগ্রহ করে নূহাশপল্লীতে রোপণ করি। গাছ দিয়েই নূহাশপল্লীর পরিচয় হচ্ছে গাছের মাধ্যমে। তাই নূহাশপল্লীকে নিয়ে নতুন করে কোন পরিকল্পনা আপাতত নেই।
তিনি জানান, নূহাশপল্লীতে একটি শুটিং ফ্লোর ছিল সেটি এখন অচল হয়ে আছে। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর কিছু কাজ ওই ফ্লোরে করা হয়েছিল। এখন সেটিতে কোনো কাজ করা হয় না তাই এটি এখন অচল হয়ে পড়ে আছে।
নূহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল আরো বলেন, হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নূহাশপল্লীতে প্রতিবারের মতোই আয়োজন রয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ জীবিত থাকার সময় যেভাবে জন্মদিন পালন করতেন তার মৃত্যুর পর ঠিক একই ভাবে প্রতি বছর প্রিয় লেখকের জন্মদিন পালন করা হয়। রাতে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের নানা বয়সী ভক্তরা। কবরে ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। তারা হুমায়ূন আহমেদের নিজ হাতে সাজানো গোছানো নূহাশপল্লীর বিভিন্ন স্থাপনা এবং নান্দনিক শিল্পকর্ম ঘুরে দেখেন।