শেখদের ছবি সরানোয় আক্ষেপ মানে গণ-অভ্যুত্থানের নিন্দা জানানো : উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১১
কেউ যদি সরকারি অফিস থেকে শেখদের ছবি সরানোর কারণে আক্ষেপ প্রকাশ করেন, তবে তিনি এ গণ-অভ্যুত্থান ও গণমানুষের চেতনারই নিন্দা জানালেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
গতকাল ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে মাহফুজ আলম এ মন্তব্য করেন। তার পোস্টটি (ইংরেজি থেকে অনূদিত) তুলে ধরা হলো: ‘পতিত শেখরা!
শেখ মুজিব ও তার কন্যা (আরেক শেখ) তাদের ফ্যাসিবাদী শাসনের জন্য জনগণের তীব্র রাগ-ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। তাদের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য, শেখ মুজিব একসময় পূর্ববাংলার গণমানুষের জনপ্রিয় নেতা ছিলেন, যে জনপ্রিয়তা হাসিনার ছিল না। জনগণ পাকিস্তানি নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তার (শেখ মুজিব) নেতৃত্ব অনুসরণ করেছিলেন, কিন্তু একাত্তরের পর তিনি নিজেই একজন জালিম হয়ে ওঠেন। মুজিববাদের প্রতি তার সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতায় একাত্তরের পর পঙ্গু ও বিভক্ত হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। নিজের ফ্যাসিবাদী ভূমিকার কারণে ১৯৭৫-এ তার মৃত্যুতে মানুষ শোক-অনুতাপ প্রকাশ করেনি।
তবে, শেখ তার একাত্তর-পূর্ব ভূমিকার জন্য সম্মান পাবেন, যদি শেখের একাত্তর-পরবর্তী গণহত্যা, জোরপূর্বক গুম, দুর্নীতি, দুর্ভিক্ষ ও নিশ্চিতভাবেই বাহাত্তরের সংবিধান, যা বাকশাল প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করেছিল-এসবের জন্য তার দল ও পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চান। শেখ-কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কথাও তাদের স্বীকার করা, ক্ষমা চাওয়া এবং এজন্য বিচারের মুখোমুখি হওয়া উচিত (শেখ মুজিবকে একজন ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও উপহাসের পাত্র বানিয়েছিলেন তিনি)। তাদের আরো উচিত, মুজিববাদী রাজনীতি ও শেখ পরিবারের বন্দনা পরিহার করা।
কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে শেখের ছবি সরানো হয়েছে (কর্মকর্তারা সরিয়েছেন, যদিও তা হয়েছে); যে শাসন মেয়ে করেছেন ফ্যাসিবাদী বাবার নামে ও তার একাত্তর-পরবর্তী চেতনার কথা বলে। তার বাবাকে দেবতুল্য করা হয়েছিল, কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের মানুষ একসাথে তাদের দু’জনের ছবি, ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নামিয়ে ফেলেছেন।
কেউ যদি সরকারি অফিস থেকে শেখদের ছবি সরানোর কারণে আক্ষেপ প্রকাশ করেন, তবে তিনি এ গণ-অভ্যুত্থান ও গণমানুষের চেতনারই নিন্দা জানালেন।
আমাদের মনে রাখতে হবে, ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না। আমরা এখানে এসেছি, ঐতিহাসিক অসংগতি ও অপব্যাখ্যাগুলো দূর করতে। মনে রাখতে হবে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলাদেশের গণমানুষের। আবার, কোনো মুক্তিযোদ্ধাও যদি একাত্তরের পর কোনো অন্যায় করে থাকেন, তার বিচার ও সাজা হওয়া উচিত।
স্বাধীনতাযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন বলেই তাদের (একাত্তরের পর কোনো অন্যায় করা মুক্তিযোদ্ধাদের) এ ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া উচিত নয়।
বাংলাদেশের উচিত, ‘শাসক পরিবারগুলোকে দেবতুল্য করা ও সেই ক্ষমতাসীন পরিবারগুলোর সবকিছু নিজেদের বলে মনে করা’ -এ থেকে বেরিয়ে আসা। ’৪৭ ও ’৭১-এর পাশাপাশি জুলাইয়ের চেতনা আমাদের সবার স্মৃতিতে থাকুক অম্লান!'
উপদেষ্টারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছি
জনগণের পক্ষের এবং দীর্ঘ লড়াইয়ের সপক্ষে অবস্থান গ্রহণকারীদের নিয়ে সরকার গঠনের পরিকল্পনা এবং সেইভাবেই সরকার পরিচালিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। গতকাল বিকেলে টাঙ্গাইলের সন্তোষে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীন নিয়োগপ্রাপ্তদের বিষয়ে জনগণের যদি কোনো অনাগ্রহ থাকে, আমরা সেটি খতিয়ে দেখব। তবে আমরা মনে করি, যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তারা জনগণের আকাক্সক্ষার পক্ষেই থাকবেন। তারপরও যদি জনগণের কোনো অসন্তোষ বা অসংকোচ থাকে, তাহলে তাদের কাজের মাধ্যমেই প্রমাণ হবে যে তারা জনগণের পক্ষেই আছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে আমরা মনোনীত সরকার। আমরা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছি। জনগণের পক্ষে এবং দীর্ঘ লড়াইয়ের সপক্ষে যারা আছেন, তাদের নিয়েই আমাদের সরকার গঠনের পরিকল্পনা এবং সেইভাবেই সরকার পরিচালিত হচ্ছে।
এ সময় মাহফুজ দাবি করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। আমরা চেষ্টা করেছি এবং বেশির ভাগই আমরা পূরণ করতে পেরেছি। আর জনগণই বিচার করবে আমাদের কার্যক্রম দেখে।