১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

রাজউক কর্মচারী সমিতির ১০৯ কোটি টাকা লোপাট

টাকা - সংগৃহীত

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির ১০৯ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। সমবায় অধিদফতরের নিবন্ধিত সংস্থাটির অডিট রিপোর্টে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাটের এই ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সদস্যরা। রাজউক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সমিতির সর্বশেষ অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, উত্তরায় রাজউক থেকে প্লট বরাদ্দ পায় কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি। এটি ২০১৮ সালে একটি ডেভেলপার কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করা হয়। চুক্তিপত্র অনুযায়ী এই প্লটের চুক্তিমূল্য ছিল এক শ’ ৯৭ কোটি পাঁচ লাখ ১৮ হাজার ৩৭০ টাকা। কিন্তু কমিটির হিসাব অনুযায়ী দেখানো হয়েছে এক শ’ ৩০ কোটি ৯১ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮০ টাকা। যার ফলে ৬৬ কোটি ১৩ লাখ ৪২ হাজার ৩৯০ টাকার পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। যার কোনো সঠিক ব্যাখ্যা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অডিট কর্মকর্তাদের প্রদান করতে পারেনি।
কমিটির হিসাব অনুযায়ী ডেভেলপার কোম্পানির কাছ থেকে ১১ নম্বর সেক্টরের প্লট বিক্রয় বাবদ মোট প্রাপ্ত টাকার পরিমাণ এক শ’ ৩০ কোটি ৯১ লাখ ৭৬ হাজার ৭০০ টাকা। কিন্তু আর্থিক বিবরণীতে প্রাপ্ত আয় দেখানো হয়েছে, ৮৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং প্রাপ্ত অবশিষ্ট ৪২ কোটি ৪১ লাখ ৭৬ হাজার ৭০০ টাকা দেনাদার হিসেবে কম দেখানো হয়েছে।

অডিট রিপোর্টে বলা হয়, ইটিএল ক্রয় বাবদ পাওনা ৫০ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। ওই টাকার পরিমাণ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ হতে সঠিক কোনো ব্যাখ্যা ও দলিল প্রমাণদি অডিটি কর্মকর্তাদের প্রদর্শন করতে পারেনি। যার ফলশ্রুতিতে উদ্বৃত্তপত্রে দায় বেশি দেখানো হয়েছে।
রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স নির্মাণ বাবদ ৩৩ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু এই টাকার ব্যাপারে সমিতি কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্টমূলক ব্যাখ্যা ও দলিলপত্র উপস্থাপন করতে পারেনি। যার ফলশ্রুতিতে সম্পদ বেশি দেখানো হয়েছে। মার্কেটের দোকানের জামানত হিসেবে এক লাখ টাকা কম দেখিয়ে এবং সংরক্ষিত তহবিলে তিন হাজার ৭৫০ টাকা বেশি ও সমবায় উন্নয়ন তহবিলে ৭৫০ টাকা বেশি দেখিয়ে গড়পড়তা বা মনগড়া হিসাব করে উদ্বৃত্তপত্র মিলানো হয়েছে। তাছাড়া সমবায় সমিতি কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যাখ্যা বা দলিলপত্র উপস্থাপন করতে পারেনি। যার ফলশ্রুতিতে সম্পত্তি ও দায় অমিল পরিলক্ষিত হয়েছে।
অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ নামে ২৭ কোটি ৭০ লাখ ১১ হাজার ৬৯৯ টাকা সম্পদ হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা হিসাববিজ্ঞানের নীতি অনুযায়ী সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয় না। যার ফলে ওই টাকার সমপরিমাণ সম্পদ বেশি দেখানো হয়েছে।

নিরীক্ষা পরিচালনার সময় কর্মকর্তারা দেখতে পান, যে প্রাপ্তি পরিশোধ হিসাবে এক লাখ টাকার কোনো খরচ না দেখিয়ে মনগড়া হিসেবে করে প্রাপ্তি ও পরিশোধ হিসাব মিলানো হয়েছে। যার ফলে উদ্বৃত্তপত্রে ওই টাকার প্রভাব না পড়ার কারণে হিসাবে অস্বচ্ছতা প্রকাশ পেয়েছে।
মেরামত ও সার্ভিসিং ব্যয়, বিবিধ ব্যয়, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ক্রয় এবং অফিস সরঞ্জাম ক্রয়ের ভাউচার নমুনা ভিত্তিতে পরীক্ষা করা হয়েছে যার পরিমাণ দুই কোটি ২০ লাখ সাত হাজার ৩৩০ টাকা উপযুক্ত প্রামাণিক এর অনুপস্থিতিতে সেগুলো ভুয়া হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে।
রিপোর্টে ছয় দফা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে অডিট সংস্থা। তাদের দৃষ্টি আকর্ষণগুলো হলো, কর্তৃপক্ষ দ্বারা পেটি ক্যাশ আলাদাভাবে এবং যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। প্রযোজ্য সময়ের জন্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ব্যাংক রিকনসিলিয়েশন স্টেটমেন্ট তৈরি করা হয়নি এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষাব্যবস্থা চালু করা হয়নি। মাসিক আয়-ব্যয় বিবরণী তৈরি করা হয়নি। দৈনিক জমা-খরচ তৈরি করা হয়নি। স্থায়ী সম্পদের রেজিস্টার তৈরি করা হয়নি। বিদ্যুৎ বিলের জরিমানা হওয়ার পূর্বেই বিল প্রদান করা উচিত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের একাধিক কর্মচারী জানান, আমরা সংগঠনের সদস্য হয়ে শেয়ার নিয়েছি কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে কোনো লভ্যাংশ পাচ্ছি না। সংগঠনের কয়েকজন নেতা হাজার কোটি টাকার এই সম্পদ লুটেপুটে খাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী এই প্রশাসনের প্রতি এই লোপাটের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।
জানতে চাইলে রাজউক কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির সম্পাদক মো: শফিউল্লাহ বাবু বলেন, আগের কমিটি এই লোপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে। এর প্রতিবাদ করায় আমাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। আমার সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। সেটা আদালতের মাধ্যমে ফেরত পেয়েছি। আমি আশা করছি বর্তমান রাজউক প্রশাসন এই অনিয়মের তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবে।
জানতে চাইলে রাজউকের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) ড. মো: আলম মোস্তফা নয়া দিগন্তকে বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির অর্থ লোপাটের তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। এটি আমরা যাচাই-বাছাই করছি। কোনো অনিয়ম বা লোপাটের সুযোগ রাজউকে আর থাকবে না। আমরা শিগগিরই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবো।


আরো সংবাদ



premium cement
ডেঙ্গুতে আরো ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১০৭ একই দিনে দুই দিপুর স্বর্ণ জয় গাজীপুরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের তোপের মুখে পিপি-এপিপিদের পদত্যাগ বিনামূল্যে আজীবন চিকিৎসা পাবেন গণঅভ্যুত্থানে আহতরা সাফজয়ী সাবিনাদের পুরস্কার দিলো সাউথইস্ট ব্যাংক সন্ত্রাস ও দুর্নীতি বন্ধে দেশে কোরআনের আইন চালুর বিকল্প নেই : মুজিবুর সিংগাইরে চাঁদাবাজির মামলায় ২ সংবাদকর্মী জেলহাজতে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ‘জুটমিল বন্ধ করে শেখ হাসিনা শিল্পাঞ্চলকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছেন’ দেশে বিনিয়োগ করলে আমরা পাশে থাকব : ডা. শফিকুর রহমান পলকের গামছা বাঁধা মুখের ছবি তুলতে বাধা পুলিশের

সকল