জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে পারেনি বাংলাদেশ দূতাবাস
সুইজারল্যান্ডে আসিফ নজরুলকে নাজেহাল- মনির হোসেন
- ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৭
সুইজারল্যান্ডের বিমানবন্দরে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে নাজেহালের সাথে জড়িত আওয়ামী সমর্থকদের কাউকে এখনো আইনের আওতায় আনতে পারেনি বাংলাদেশ দূতাবাস। তবে দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের কর্মকর্তারা এ ঘটনার বিষয়ে বলেছেন, যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছেন তাদের সবার নাম-ঠিকানা ইতোমধ্যে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। এর বেশি কিছু বলার সুযোগ নেই।
গত ৭ নভেম্বর সুইজারল্যান্ড থেকে দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দরে সুইজারল্যান্ড শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম জমাদার ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল খানসহ অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতা ও সমর্থকদের হাতে আচমকা নাজেহাল হন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এই ঘটনার এক মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একদল লোক আসিফ নজরুলকে ঘিরে ধরেছেন। এরপর উত্তেজিত কণ্ঠে তারা তর্ক করে বলছেন, ‘আপনি মিথ্যা কথা বলছেন’। এ সময় তাদের কথার উত্তরে আসিফ নজরুল বলছেন, আপনি গায়ে হাত দিচ্ছেন কেন? একপর্যায়ে হেনস্তাকারীরা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, স্লোগান দিতে দিতে বিমানবন্দর এলাকা থেকে চলে যান।
জানা যায়, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডি এবং সংস্থাটির গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক শেষে আসিফ নজরুল দেশে ফেরার উদ্দেশ্যে জেনেভা বিমানবন্দরে পৌঁছান। তিনি দূতাবাসের প্রটোকলে গাড়ি থেকে নেমে অদূরে যাওয়ার পরই একদল লোক তাকে ঘিরে ধরে নাজেহাল করতে শুরু করে। উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ছাড়াও আইএলও’র গভর্নিং বডির ওই বৈঠকে শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত অংশ নিয়েছিলেন। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার পর দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। এই ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পরও উপদেষ্টাকে নাজেহালকারীদের কাউকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে পারেননি সুইজারল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর সুইজারল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তার সাথে শ্রমসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার ফাঁকে উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে নাজেহালকারীদের কাউকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে প্রথমে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে কথা প্রসঙ্গে তিনি নয়া দিগন্তের পরিচয় পেয়ে বলেন, ‘১৯৭৪ সালের পর সুইজারল্যান্ডের ইতিহাসে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা আর ঘটেনি।’ এই দেশটি হচ্ছে সুসভ্যতার একটি নিদর্শন। এমন ঘটনা ঘটবে সেটি কারো চিন্তাভাবনার মধ্যেও নেই। এই দেশটিকে বলা হয় পৃথিবীর স্বর্গ।
এক প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে নাজেহাল করা হবে এ সম্পর্কে আমাদের কারো কোনো ধারণাই ছিল না। যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তাদের সবার নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা চলছে। এইটুকুই। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়ানোর পর ঘটনার সাথে সুইজারল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাসের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে অনেকে অভিযোগ করছেন। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা আমি জানি না। আর ফেসবুকে তো প্রতিদিনই কত কিছু ছড়ায়। সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের টেলিফোন নাম্বার দেয়ার অনুরোধ জানালে তিনি বলেন, দুঃখিত। কোনো কিছু জানতে হলে দূতাবাসের নাম্বারেই ই-মেইল করতে হবে। নতুবা এই দেশের আইনে কারো টেলিফোন নাম্বার দেয়ার সুযোগ নেই। এরপরও যদি কেউ টেলিফোনে কারো কথা বলে রেকর্ড করে অন্য কোথাও দিয়ে থাকে, তাহলে সেটি ‘পারসোনাল ডাটা অ্যাক্টের’ আইনে পড়ে যাবে।
সুইজারল্যান্ডে বর্তমানে কী পরিমাণ বাংলাদেশী বসবাস করছেÑ জানতে চাইলে শ্রম উইং-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমানে দেশটিতে পাঁচ হাজারের মতো বাংলাদেশী বসবাস করছেন। এই দেশে সরাসরি লেবার মার্কেট নেই। সুইজারল্যান্ডে রাষ্ট্রীয় চারটি ভাষা রয়েছে। এর মধ্যে ইংলিশ নেই। চারটির যেকোনো একটি ভাষা জানা ব্যক্তিদের এখানে কাজের অবারিত সুযোগ রয়েছে। দক্ষতা ব্যতীত কেউ সুইজারল্যান্ডে কাজ করতে পারবে না। সুযোগই নেই।