১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বৈশ্বিক উত্তরের কাছে দক্ষিণের জলবায়ু ঋণ পাওনা ৫ ট্রিলিয়ন ডলার

-


ধনী দেশগুলোর কাছে গরিব দেশগুলোর বছরে জলবায়ু ঋণ পাওনা দাঁড়াচ্ছে ৫ ট্রিলিয়ন বা ৫ লাখ কোটি ডলার। আজারবাইজানে কপ২৯ সম্মেলনকে লক্ষ্য রেখে পরিবেশবাদীরা এমন দাবি তুলেছেন। তারা বলছেন, ধনী দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো এড়াতে এবং বৈশ্বিক উত্তাপের কারণে তীব্র আবহাওয়ার ঘটনাগুলো মোকাবেলা করার জন্য দরিদ্র দেশগুলোকে অর্থায়ন করতে হবে। কারণ বছরে তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলো ‘সুপার প্রফিট’ হিসেবে মোট অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলার মুনাফা করে। দি গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে গবেষকরা বলছেন, তাই এ ধরনের অতি মুনাফা থেকে জলবায়ু সঙ্কট তৈরিতে সহায়তাকারী জীবাশ্ম জ্বালানি সংস্থাগুলোর হাতে ‘প্রচুর সম্ভাব্য অর্থায়ন’ রয়েছে। তারা এ ধরনের অর্থায়নের মাধ্যমে গরিব দেশগুলোকে বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে কৃষিতে লোকসান ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে।
১৩০ টিরও বেশি দেশে ১৯০০ এরও বেশি নাগরিক সমাজ সংস্থার বৈশ্বিক জোট ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক তাসনিম এসপ বলেছেন, আমরা একটি খুব বড় ঋণের ডাউন পেমেন্টের জন্য দাবি তুলছি এবং এর পরিমাণ হচ্ছে বছরে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার।
যুক্তিটি সহজ এ কারণে যে ধনী দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি জ্বালিয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে এবং এখন একই পথ এড়াতে দরিদ্র দেশগুলোকে অর্থায়ন করতে হবে এবং বিশ্বব্যাপী উত্তাপের কারণে প্রবল তাপপ্রবাহ, বন্যা এবং ঝড়ের মোকাবিলায় অর্থায়ন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
এনজিওগুলো জলবায়ু সম্মেলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, জলবায়ু সঙ্কটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের কণ্ঠস্বর শোনার বিষয়টি নিশ্চিত করে এবং তাদের অংশগ্রহণ জাতিসঙ্ঘ কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হয়। গোষ্ঠীগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ অনেক উন্নয়নশীল দেশে তাদের ছোট অথচ কার্যকর প্রতিনিধি রয়েছে।

তাসনিম এসপ বলেন, ধনী দেশগুলো এত বিপুল পরিমাণ অর্থ জোগানে একেবারেই সক্ষম। তারা সামরিক ব্যয়ের জন্য অর্থ খুঁজে পেয়েছে। তারা গাজায় গণহত্যার অর্থ খুঁজে পেয়েছে। তারা জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পে ভর্তুকি এবং সমর্থন করার জন্য অর্থ খুঁজে পায়। কিন্তু এ কপ সম্মেলনে এসে তাদের টাকা নেই বলা একেবারেই অসত্য এবং অগ্রহণযোগ্য।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি আর্থিক চুক্তির ব্যবস্থা করাই কপ সম্মেলনের প্রধান কাজ। এজন্য ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এমন বিস্তৃত চুক্তিতে কে কী এবং কীভাবে অর্থ প্রদান করতে পারে তা নিয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। এসপ সতর্ক করে বলেন, একটি ভালো আর্থিক চুক্তি প্রদানে ব্যর্থ হওয়া আলোচনাকারী দেশগুলোর মধ্যে আস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কপ সম্মেলনের এবারের চ্যালেঞ্জ হল উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বছরে কমপক্ষে এক ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদানের বিষয়ে একমত হওয়া যাতে তারা কার্বন নির্গমন কমাতে পারে, তাদের নাগরিকদের জন্য চরম আবহাওয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা তৈরি করতে পারে এবং দুর্যোগ থেকে পুনরুদ্ধার করতে পারে।
গবেষকরা ২০২২ সালে ৯৩টি বড় জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানির আয় পরীক্ষা করে দেখেছেন যে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের পর তেলের দাম বেড়ে যাওয়া তাদের প্রত্যাশিত লাভের সাথে প্রকৃত লাভের তুলনা করা হয়েছে। তারা স্বাভাবিক উচ্চ মুনাফার উপরে এবং তার বাইরে ৪৯০ বিলিয়ন অনার্জিত সুপার প্রফিট খুঁজে পেয়েছে। মুনাফার এ হিসাব খুব কম করেই ধরা হয়েছে কারণ রাশিয়া, ইরান এবং ভেনিজুয়েলার বড় তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারীরা তাদের আয় গোপন রাখে।
এদিকে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উইন্ডফল ট্যাক্সের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমরা বিশ্বজুড়ে সরকারগুলোকে তাদের শক্তি ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করছি। বাকুতে কপ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের সুবিধার জন্য এ ধরনের সুপারপ্রফিট ব্যবহার করতে বলেছেন জার্মানির মিউনিখের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফ্লোরিয়ান এগলি।

এক্সনমোবিলের মতো মার্কিন কোম্পানিগুলো ১৪৩ বিলিয়ন ডলার লাভ করেছে, যেখানে ১০৩ বিলিয়ন লাভ করেছে ইউকে, ফ্রান্স এবং কানাডার প্রধান তেল কোম্পানি যেমন বিপি এবং টোটালএনার্জিস। তেল ও গ্যাস শিল্পে প্রচুর মুনাফা নতুন কিছু নয়। এটি গত ৫০ বছর ধরে প্রতি বছর বিশুদ্ধ মুনাফায় বছরে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক জ্বালানি মূল্য সঙ্কটের কারণে শুধু মুনাফা আরো বেশি হয়েছে। একই সাথে তেল কোম্পানিগুলো তাদের সরকারগুলোর কাছ থেকে বিশাল ভর্র্তুকি আদায় করে থাকে।
জাস্টিস ক্যাম্পেইন গ্রুপ ওয়ানের আরেকটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে ধনী দেশগুলো ২০১০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে অভ্যন্তরীণ জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকিতে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, যা তাদের আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার চেয়ে ছয় গুণ বেশি। তার মানে ধনী দেশগুলো ট্রিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দিয়ে ট্রিলিয়ন-ডলারের শিল্পকে প্রসারিত করছে। বিশ্বের বৃহত্তম তেল ও গ্যাস উৎপাদক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সময়ের মধ্যে জলবায়ু অর্থায়নের তুলনায় জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকিতে পাঁচ গুণ বেশি ব্যয় করেছে, যেখানে যুক্তরাজ্য উভয়ই ক্ষেত্রে ৯ গুণ বেশি ব্যয় করেছে। এমনকি কপ সম্মেলনের আয়োজক আজারবাইজান ১৮০০ গুণ বেশি খরচ করেছে, যেখানে গত বছরের কপ সম্মেলনের আয়োজক সংযুক্ত আরব আমিরাত ১৫০ গুণ বেশি খরচ করেছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী সৌদি আরব ১২০০ গুণ বেশি ব্যয় করেছে। ২০০৯ সালে কপ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে সম্মত হয়েছিলেন, যা মূলত সচ্ছল ব্যক্তিদের উপকার করে। তারপর থেকে সামান্য অগ্রগতি হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
এলএনজি টার্মিনালের দরপত্র প্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পেট্রোবাংলা! জোড়া শতকে কিউইদের বিপক্ষে বড় জয় শ্রীলঙ্কার গাজার যুদ্ধে ‘প্রকৃত বিরতির’ আহ্বান ব্লিংকেনের পার্লমেন্টে আস্থা ভোট দেবেন জার্মান চ্যান্সেলর বাতাসে কদবেলের ঘ্রাণ! জাতিসঙ্ঘের জলবায়ু সম্মেলনে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ইউক্রেনকে আরো সহায়তা দিতে ব্লিংকেনের প্রতিশ্রুতি ইমরানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান হলের সিট বণ্টন নিয়ে উত্তপ্ত কুবি, প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করাচি থেকে প্রথম সরাসরি কার্গো পৌঁছেছে চট্টগ্রামে মুখরোচক খাবারে সরগরম লক্ষ্মীবাজারের স্ট্রিট ফুড

সকল