মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে
৫ বছর পার হলেও কাজের অগ্রগতি শূন্য শতাংশ- মনির হোসেন
- ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৩
কক্সবাজারের মহেশখালী-চকোরিয়া এলাকার ২৭.২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের (সওজ অংশ) কার্যক্রম অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০২০ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের অগ্রগতি চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত শূন্য শতাংশ বলে প্রকল্প পরিচালকের দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৮২১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৮৭ কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে সওজ ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়।
প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আকবর হোসেন পাটোয়ারী তার সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনে প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন, চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে নতুন গভীর বন্দর নির্মাণ এবং মাতারবাড়ি মহেশখালী ও চকোরিয়া এলাকাাকে নিয়ে ন্যাশনাল হাইওয়ের (এন-১) সাথে বন্দর সংযোগ সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশের কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বাড়িয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর থেকে চাপ কমানো, ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চাহিদা মেটানো এবং প্রতিবেশী দেশগুলোকে ত্বরিত বন্দর সেবা দেয়ার সক্ষমতা বাড়াতে অবদান রাখবে।
অগ্রগতি প্রতিবেদনে (সেপ্টেম্বর-২০২৪) আরো উল্লেখ করেছেন, এটি এশিয়ান হাইওয়ে (এএইচফোরওয়ান) রুটের সাহায্যে আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়তা করবে। ফলে দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি জিওবি এবং জাইকার অর্থায়নে নির্মিতব্য এমআইডিআই এবং ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত একটি প্রকল্প। মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পটি (সওজ অংশ) ব্লু ইকোনমি সম্পর্কিত কাজের পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত বলে অগ্রগতি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে ও সওজের সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এর বাস্তবায়ন কাল ধরা হয়েছে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে প্রকল্পটি শেষ করার সম্ভাব্য সময় দেয়া হয়নি। এই সময়ের মধ্যে অনুমোদিত সময়ে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে বলা হয়েছে, ১৪৪.২৫৪১ হেক্টর (৩৫৬.৪৫১৮ একর) ভূমি স্থায়ীভাবে দখলের দুটি এল.এ প্রস্তাব করা হয়েছে। চকোরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার অংশে ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক অফিস থেকে ৭ ধারা নোটিশ জারি করা হয়েছিল। এরপর থেকে এ পর্যন্ত ৩০৮ দিন পার হওয়ার পরও প্রাক্কলন পাওয়া যায়নি। মহেশখালী অংশে উক্ত এল.এ. মামলার প্রস্তাব চলতি বছরের ৪ জুন ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদন করা হয় এবং গত ৪ জুলাই জেলা প্রশাসক অফিস থেকে ৭ ধারা নোটিশ জারি করা হয়েছে প্রতিবেদনে বলা হয়।
২৭.২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই সড়কে সেতু রয়েছে ১৩টি, তবে ফ্লাইওভার নেই। রেলওয়ে ওভারপাস ১টি, স্টিল ফুটওভার ব্রিজ নেই, তবে বক্স কালভার্ট রয়েছে ৩০টি। মূল প্রকল্পের কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৮২১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় ২ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা এবং পিএ থেকে ব্যয় হবে ৬ হাজার ৬ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রথম সংশোধনীতে মোট ব্যয় ৮ হাজার ৮৩২ কোটি ৩২ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। ৩টি নির্মাণ প্যাকেজের মধ্যে প্যাকেজ ৩-এ ১০.৫ কিলোমিটার ২ লেন এক্সেস কন্ট্রোল সড়ক এবং ১.২ কি.মি. ৪ লেন পোর্ট সংযোগ সড়ক এবং ৪টি সেতু, প্যাকেজ ৩বিতে ৬.৪ কি. মি. ২ লেন এক্সেস কন্ট্রোল সড়ক ও ৪টি সেতু এবং প্যাকেজ ৩ সিতে ৯.১ কি.মি. ২ লেন এক্সেস কন্ট্রোল সড়ক এবং ৪টি সেতুর প্রকল্পের বর্তমান নির্মাণ কাজের অগ্রগতি শূন্যভাগ রয়েছে। এর মধ্যে ২৮৭ কোটি ৪ লাখ ২১ হাজার টাকা (৩.২৫%) ব্যয় হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক তার বর্তমান আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে গতকাল সোমবার সকাল থেকে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আকবর হোসেন পাটোয়ারীর সাথে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। দুপুরের পর থেকে সওজের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসানের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগ করা হয়। তিনিও কল রিসিভ করেননি। পরে তাকে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। গত রাত ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি সাড়া দেননি।
জানা গেছে, প্রধান প্রকৌশলী সওজের আওতায় বিভিন্ন সময়ে বাস্তবায়িত প্রকল্পের মধ্যে যমুনা ব্রিজ এক্সেস রোডের অতিরিক্ত প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্পের পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।