গাজীপুরে ৩৫ ঘণ্টায়ও অবরোধ তুলেননি শ্রমিকরা
৩০ কারখানা ছুটি ঘোষণা- গাজীপুর প্রতিনিধি
- ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩১
গাজীপুরে বকেয়া বেতন পরিশোধ ও বন্ধ কারখানা চালুর দাবিতে গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ ঘণ্টা ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন টিএনজেড গ্রুপের ৫টি কারখানার পোশাক শ্রমিকরা। অবরোধের কারণে ওই মহাসড়কে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা বাইপাস মহাসড়কসহ আঞ্চলিক সড়কগুলোতে হাজার হাজার যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দুই দিন ধরে লাগাতার মহাসড়ক অবরোধের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে গাজীপুরের জনজীবন। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাচ্ছেন গাজীপুরসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার নারী-পুরুষ ও শিশু যাত্রীরা। এ দিকে শ্রমিক অন্দোলনের কারণে ভাঙচুর এড়াতে গতকাল রোববার বিকেল পর্যন্ত আশপাশের অন্তত ৩০টি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যা ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ তুলে নেয়নি।
পুলিশ ও আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানায়, মহানগরীর মোগরখাল এলাকার টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেডের ৫টি কারখানার শ্রমিকদের গত দুই মাসের (সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর) বকেয়া বেতন বাবদ প্রায় ১৪-১৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ একাধিকবার আশ্বাস দিয়েও তা পরিশোধ করেনি। সর্বশেষ গত ৩ নভেম্বর নির্ধারিত তারিখে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের কথা থাকলেও ওই দিন তা পরিশোধ না করে কর্মকর্তারা কারখানা তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়। এর পর থেকে মালিক পক্ষের লোকজন কারখানায় আসেনি, এমনকি কারখানাটির উৎপাদন কাজ বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিনই শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে কারখানায় এসে ফিরে যায়। এতে শ্রমিকদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর জেরে শনিবার সকালে শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে সকাল ৯টার দিকে তারা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কলম্বিয়া কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে ওই মহাসড়কের উভয় পাশে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পুলিশ, যাত্রী ও স্থানীয়রা জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়কের ওপর থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও শ্রমিকরা তাদের দাবিতে অনঢ় থেকে রাতভর সড়কের ওপর অবস্থান করতে থাকে। পরদিন গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত টানা প্রায় ৩৫ ঘণ্টা ধরে মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে আন্দোলনরত শ্রমিকরা। লাগাতার অবরোধের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে গাজীপুরের জনজীবন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় দিকে প্রায় ২০ কিলোমিটারব্যাপী যানজট বিস্তৃত হয়েছে। এ ছাড়াও বিকল্প পথে চলাচল করতে গিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-বাইপাস মহাসড়কসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কগুলোতেও হাজার হাজার যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্মরণকালের ভয়াবহ যানজটের কারণে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়েন রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা। এ ছাড়া তরিতরকারি ও কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়ায় মালামালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এমনকি বিদেশগামী যাত্রীরা নির্ধারিত সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে যান। গন্তব্যে পৌঁছতে না পেরে অনেককে কান্নাকাটি করতেও দেখা গেছে।
এ দিকে গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) সারোয়ার আলম জানান, শ্রমিক অন্দোলনের কারণে গাজীপুরের কোনাবাড়ি-জিরানী এলাকার রেজাউল অ্যাপারেলস লিমিটেড, কেএম নোবলী গার্মেন্ট, বানিকা ফ্যাশন লিমিটেড, ডরিন গার্মেন্ট, ডরিন অ্যাপারেলস, লাইফ টেক্সটাইল, এবিএম ফ্যাশন, পিএন কম্পোজিট নিট লিমিটেড, ভোগড়া বাইপাস এলাকার টিএনজেড অ্যাপারেলস, বেসিক ক্লথ লিমিটেড, অ্যাপারেল পালাস ইকো লিমিটেড, বেসিক নিটওয়্যার লিমিটেডসহ অন্তত ৩০টি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে।
কিশোরগঞ্জের অনন্যা ক্লাসিক পরিহনের বাসচালক রিপন জানান, তার গাড়িতে কয়েকজন বিদেশগামী যাত্রী ছিলেন। তারা শনিবার সকাল ৯টার দিকে অবরোধে পড়েন। বাসটি পরিদিন রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানেই আটকা পড়ে আছে। বাসের বিদেশগামী যাত্রীরা নির্ধারিত সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছতে না পেরে তারা হতাশ হয়ে কান্নাকাটি করে বাস থেকে নেমে বাড়ি ফিরে যান।
এ বিষয়ে জানতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, গত শনিবার আন্দোলনের শুরু থেকেই গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ক্রাইম ডিভিশন, ট্রাফিক ডিভিশন, শিল্প ও থানা পুলিশসহ যৌথবাহিনীর সবাই মিলে কলম্বিয়া গার্মেন্টের সামনে টিএনজেডের শ্রমিকরা যে অবরোধ করে রেখেছে। আমরা তাদের বারবার বলেছি রাস্তাটা ছেড়ে দিয়ে সরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা জানায় বেতনভাতা পরিশোধ না করা পর্যন্ত সড়ক থেকে সরে যাবে না। তিনি জানান, আমরা মালিকপক্ষের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি। মালিকপক্ষ বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের বেতনভাতা পরিশোধের আশ্বাস দিলেও তারা পরিশোধ করেনি।
তিনি আরো জানান, এ ব্যাপারে ওই গ্রুপের চেয়ারম্যান হেদায়েতুল হকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের মালিক শামীম সাহেব বিদেশে অবস্থান করায় তার সাথেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে সন্ধ্যা ৭টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে।