রফতানি আয়ে বাড়ছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অবদান
২০৩০ সাল নাগাদ ৫০০ কোটি ডলার আয়ের টার্গেট- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১২
রফতানি খাতে বাড়ছে তথ্যপ্রযুক্তির (আইটি) অবদান। ২০৩০ সালের মধ্যে এ খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার রফতানি আয়ের প্রত্যাশা করছে আইটি উদ্যোক্তারা। এ সময়ে দেশে আইটি ডিভাইস উৎপাদন শিল্পে অন্তত এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের আশা করা হচ্ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ আইটি খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার রফতানি আয়ের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশে তৈরি ডিজিটাল ডিভাইসের রফতানি আয় বর্তমানের প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীতের পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিসিআই) ‘তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংষ্কার’ শীর্ষক সেমিনার বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি পরিসেবা, সফটওয়্যার ও যন্ত্রপাতিসহ তথ্যপ্রযুক্তির বৈশ্বিক বাজার প্রায় তিন ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৃহত্তম জনগোষ্ঠী থাকা সত্বেও আমাদের আয় ২.৫ বিলিয়ন ডলার, যা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়।
তিনি আরো বলেন, এ খাতে আমাদের কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি উচ্চতর মূল্য সংযোজন পরিষেবা দেয়ার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে এবং সেমিকন্ডাক্টর ভ্যালুচেইনে উৎপাদন ক্ষমতা সম্প্রসারণ করতে হবে। এ ছাড়াও পণ্যের ডিজাইন, অ্যাসেম্বলি প্যাকেজিং ও টেস্টিং (এপিটি) প্রভৃতি খাতে আমাদের দক্ষতা বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে উদীয়মান আইটি বাজারের জন্য ইন্টিগ্রেটেড ডিভাইস ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের (আইডিএম) সুযোগগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, একটি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে, যা সবার বিবেচনা করা প্রয়োজন। বিদ্যমান নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন করা গেলে নাগরিক সেবার পাশাপাশি ব্যবসায়িক কার্যক্রম আরো সহজতর হবে। বর্তমান সরকার বিষয়টিকে অধিক প্রাধান্য দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ, রফতানি পরিসংখ্যানসহ অন্যান্য তথ্যে বেশ অসঙ্গতি ছিল, যা নিরসনে বর্তমান সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ সঠিক পরিসংখ্যান ছাড়া কখনই যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, যার কার্যক্রম অব্যাহত আছে; যেখানে দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের পাশাপাশি বিশেষ করে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা তাদের প্রস্তাব পেশ করতে পারে, যার ভিত্তিতে সংস্কার কার্যক্রম আরো জোরালো হবে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, আমাদের তৈরী পোশাক শিল্পের পর তথ্যপ্রযুক্তি খাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়, যেখানে বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশী-বিদেশী বিনিয়াগ সম্প্রসারণ সম্ভব। দেশে কর্মরত বিদেশীদের অনুমতি প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণের লক্ষ্যে বিডার পক্ষ থেকে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ডিজিটাল কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে দুর্নীতি কমানো সম্ভব।
বন্ডস্টেইন টেকনোলোজিসের এমডি মীর শাহরুখ ইসলাম সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুই হাজার ৬০০টিরও বেশি আইটি কোম্পানি কাজ করছে। যেখানে তিন লাখ ৫০ হাজারের বেশি লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। এ খাতের বাজারের আকার ২.৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে ৪৫০টি বাংলাদেশী কোম্পানি তাদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রফতানি করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি) মোহাম্মদ জাকির হাসান বলেন, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনার কোনো বিকল্প নেই। এ খাতের অবকাঠামো উন্নয়ন এখনো আশানুরূপ নয়, যেখানে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে এগিয়ে আসার প্রচুর সুযোগ রয়েছে।
বেসিসের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল খাতের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিতকরণে কর প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে। টেকসই ও সবুজ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার বাড়াতে হবে। দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ট্রান্সমিশন খরচ বাড়ায় এ খাতের সেবা পেতে জনগণকে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে, যা নিরসন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি তিনি টেলিযোগাযোগ নীতিমালা সংস্কারে গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন্সের প্রধান করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে সংশ্লিষ্ট নীতিমালার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।